চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার বলেছেন, পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যেমন তাঁর পুরোটা জীবন ব্যয় করেছেন, তেমনি শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ক্ষুরধার লেখনি বাঙালি জাতিকে পদে পদে শক্তি ও সাহস যুগিয়েছে। দীর্ঘ নয়মাস এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের পথে কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্বদেশপ্রেমের সাড়া জাগানো সংগীত ও কবিতা বাঙালি জাতিকে যুগিয়েছে অদম্য শক্তি, সাহস ও অনুপ্রেরণা। তাই এই দুই দিকপাল বাঙালি জাতির হৃদয়ে চিরভাস্বর হয়ে আছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে গতকাল রোববার চবি উপাচার্য দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে ‘বঙ্গবন্ধু ও নজরুল’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপউপাচার্য প্রফেসর বেনু কুমার দে। চবি কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মহীবুল আজিজ এর সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন চবি নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা তাঁর প্রবন্ধে বলেন, কেবল হাজার বছর নয়, ইতিহাসপূর্ব কাল থেকে ধারাক্রমে বিবর্তিত এক সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্রের নাম বাংলাদেশ। আর সে জাতিরাষ্ট্রের দুই দ্রোহি জাতিভাস্বরের নাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, তাঁদের একজন কবি, সৈনিক, দ্রোহি ও জন্ম-স্বাধীন; অন্যজন রাজনীতিবিদ, যোদ্ধা, দ্রোহি ও জন্ম-স্বাধীন।
তিনি আরও বলেন, যখনি বাঙালি ও বাংলাদেশের কথা আসে তখনি অনিবার্যভাবে মনে পড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা। এ সূত্রে নজরুল ও বঙ্গবন্ধু ভিন্ন সময়বাসী হয়েও একটি সমতলীয় তুলনায় এসে দাঁড়ান। নজরুল, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একটি ত্রয়ীসুত্রে আবদ্ধ। কিছুটা পরোক্ষ হলেও এ দুই শ্রেষ্ঠ বাঙালির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। তিনি তাঁর প্রবন্ধে বঙ্গবন্ধু ও নজরুলের সম্পর্কসূত্র নির্ণয়ের ক্ষেত্র উল্লেখ করে বলেন, নজরুল বাঙালির বিদ্রোহী আত্মার রূপকার। বঙ্গবন্ধু সেই বিদ্রোহীর প্রত্যক্ষ প্রতিকৃতি। উভয়ে জাতীয়তাবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ, মানবতাবাদী, সমাজতন্ত্রী ও গণতন্ত্রী। নজরুল চেয়েছিলেন প্রতিটি বাঙালি সৈনিক হোক আর বঙ্গবন্ধু ভীরু বাঙালিকে পরিণত করেছিলেন মরণজয়ী মুক্তিযোদ্ধায়। দু’জনই কবিÑএকজন কবিতার, অন্যজন রাজনীতির। দু’জনই চেয়েছিলেন বাংলার জয়। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ও নজরুল দু’জনেই দুই বৈশ্বিক উৎস থেকে আসা সর্বমানবের মঙ্গলকামী দুই বিশ্ব পুরুষের উত্তরপ্রজন্ম। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা প্রবন্ধ উপস্থাপনের পূর্বে তাঁর রচিত ১০টি গ্রন্থ চবি গ্রন্থাগারে সংরক্ষণের জন্য চবি মাননীয় উপাচার্যের কাছে হস্তান্তর করেন।
প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন তাঁর বক্তব্যে ‘নজরুল ও বঙ্গবন্ধু: উক্তি ও উপলব্ধির অভিব্যক্তি’ শিরোনামে যে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন তা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক-গবেষক এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি আরও বলেন, এ সেমিনার থেকে তরুণ শিক্ষক-গবেষকবৃন্দ গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্যের দিকনির্দেশনা পাবেন; যা তাঁদেরকে বঙ্গবন্ধু এবং নজরুল সম্পর্কে গবেষণায় উৎসাহিত করবে। এ গবেষণালব্ধ জ্ঞান প্রজন্মের সন্তানদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসানের সঞ্চালনায় চবি সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, ডিনবৃন্দ, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, কলেজ পরিদর্শক, প্রভোস্টগণ, বিভাগীয় সভাপতি, ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকবৃন্দ, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, ছাত্র-ছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক, শিক্ষকবৃন্দ, এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি