সুপ্রভাত ডেস্ক »
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় ডেটা সেন্টার তৈরি করেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও টেক জায়ান্ট গুগল। তার সুফল পাচ্ছেন ওই রাজ্যসহ ভারতের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। তুলনামূলক দ্রুতগতিতে ফেসবুক ও গুগলের ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহার করতে পারছেন তারা। ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবলের (আইটিসি) মাধ্যমে সেখান থেকে বাংলাদেশেও ব্যান্ডউইথ আমদানি হয়। এমনকি দেশে এই ব্যান্ডউইথ যারা ব্যবহার করেন, তারাও সেই সুবিধা পেয়ে থাকেন। তাছাড়া বাংলাদেশে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে যে ব্যান্ডউইথ আসছে, তার চেয়েও কম দামে মিলছে এই ব্যান্ডউইথ।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দিন দিন সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইথের ব্যবহার কমে যাওয়ার পেছনে এটা একটা কারণ। সেই কারণ চিহ্নিত করে দেশে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে আসা ব্যান্ডউইথের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। আর এই দেশেই ডেটা সেন্টার তৈরি করতে গুগল ও ফেসবুকের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হবে বলে জানা গেছে। খবর বাংলাট্রিবিউনের।
প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হচ্ছে; যার অর্ধেক সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির মাধ্যমে আসছে। বাকি অর্ধেক আসছে আইটিসি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে। এক বছর আগেও সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে আসা মোট ব্যান্ডউইথের মধ্যে থেকে ৬০ শতাংশ দেশে ব্যবহার হতো।
গুগল ও ফেসবুক কলকাতায় ডাটা সেন্টার তৈরি করায় সেখান থেকে বাংলাদেশে ক্যাশ বা পিএনআই ব্যান্ডউইথ আসছে। এই ব্যান্ডউইথের দামও কম হওয়ায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো (আইআইজি- ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) ওই ব্যান্ডউইথের প্রতি ঝুঁকছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব ও টিকটক যেহেতু এ দেশে অফিস চালু করেনি, ফলে আমরা তাদের জোর করতে পারি না। বড়জোর অনুরোধ করতে পারি। আমরা তাদের বলবো, অনুরোধ করবো আমাদের দেশে ডেটা সেন্টার তৈরি করার জন্য।’
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশে আইটিসির আমদানিনির্ভর ব্যান্ডউইথের ব্যবহার কেন বাড়ছে, তার অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখলাম, ফেসবুক ও গুগল কলকাতায় ডাটা সেন্টার তৈরি করেছে। তারা ক্যাশ সার্ভার দিচ্ছে। দেশের আইটিসিগুলো সেখান থেকে এসব সুবিধাসহ কম দামে ব্যান্ডউইথ কিনে আনছে। তাহলে আমরা কেন তাদের এ দেশে সার্ভার বসাতে বলছি না? এবার সেটাই বলা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফেসবুক ও গুগলের মতো প্রতিষ্ঠান কোথাও ডেটা সেন্টার বসানোর আগে সে দেশে তাদের বিজনেস কেসটা দেখে। আমাদের দেশে হয়তো তারা এখনও নিজেরা আসার মতো বিজনেস কেস খুঁজে পায়নি। এ বিষয়গুলোও আমাদের মাথায় রাখতে হবে।’
মন্ত্রী উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘পেমেন্ট গেটওয়ে পে-পাল এ দেশে আসেনি। কারণ তারা দেখেছে তারা যেমনটা চায় এ দেশে তাদের তেমন বিজনেস নেই। ফলে তারা আসেনি। আমাদের চেষ্টার কিন্তু কোনও কমতি ছিল না। হয়তো এক সময় তারাও আসবে। তেমনি গুগল-ফেসবুক যদি দেখে এ দেশে তাদের বিজনেস কেস আছে, আমরাও যদি তাদের আহ্বান জানাই, যোগাযোগ অব্যাহত রাখি তাহলে হয়তো তারা ডেটা সেন্টার বসাতে তারা উদ্যমী হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবরি সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, ‘দেশে আইটিসির ব্যান্ডউইথের ব্যবহার বাড়ছে কম দামের কারণে। দেশের সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির ব্যান্ডউইথের চেয়ে দাম কম হওয়ায় আইআইজিগুলো আইটিসির ব্যান্ডউইথের দিকে ঝুঁকছে। ক্যাশ বা পিএনআই (প্রাইভেট নেটওয়ার্ক ইন্টারকানেক্ট) ব্যান্ডউইথ কলকাতা থেকেই পাচ্ছে। সিঙ্গাপুরের পরিবর্তে কলকাতা হয়ে যুক্ত হওয়ার ফলে ব্যবহারকারীরা ল্যাটেন্সি কম পাচ্ছে। এটাও একটা কারণ।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ দেশে গুগল ও ফেসবুকের ডেটা সেন্টার হলে আমরা স্বাগত জানাবো। আমাদের দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা তখন কমদামে আরও ভালো সেবা পাবেন।’