প্রগতির ধারা বেগবানে সাংস্কৃতিক আন্দোলন জোরদারের আহ্বান

উদীচীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সাংস্কৃতিক সমাবেশ

গণসঙ্গীত, কথামালা, সংহতি ও শুভেচ্ছা বিনিময় আর শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ৫৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক সমাবেশে চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনেরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রগতির ধারাকে বেগবান করার জন্য উদীচী সাংস্কৃতিক আন্দোলন জোরদারের আহ্বান জানান।

শনিবার বিকেলে নগরীর চেরাগি চত্বরে শিল্পীদের গণসঙ্গীত ও সংগঠন সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের আয়োজনে ৫৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও জেলা সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠান শুরু হয়।

উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. চন্দন দাশের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা শীলা দাশগুপ্তার সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবসার, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক অশোক সাহা, বোধন আবৃত্তি পরিষদের সভাপতি আব্দুল হালিম দোভাষ, শিক্ষক নেতা সঞ্জীব বড়ুয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল, চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র কেন্দ্রের পরিচালক শৈবাল চৌধুরী, জেলা সিপিবির সদস্য রেখা চৌধুরী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সিতারা শামীম, শহীদজায়া মুশতারী শফীর সন্তান মেহরাজ তাহসান শফী, আবৃত্তিশিল্পী প্রণব চৌধুরী, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌরচাঁদ ঠাকুর এবং চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাংস্কৃতিক সম্পাদক শুভ দেবনাথ।

চট্টগ্রাম জেলা সিপিবির সভাপতি অশোক সাহা বলেন, ‘উদীচী সারা বাংলাদেশে আছে, সারা পৃথিবীতে আছে। জাতীয় এবং জাতীয় সীমানার চৌহদ্দি অতিক্রম করা এমন প্রগতিবাদী সংগঠন বাংলাদেশে আর দ্বিতীয়টি আছে বলে আমার জানা নেই। উদীচী লড়াই করছে সমাজের অচলায়তন ভাঙার জন্য। তিমির হননের নিরন্তর সংগ্রাম করছে উদীচী। আমাদের সমাজের যে রক্ষণশীলতা, পশ্চাদপদতা, তার বিরুদ্ধে উদীচী নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে যে গণজাগরণ মঞ্চ হয়েছিল ঘাতকদের বিরুদ্ধে, পাকিস্তানের দালালদের বিরুদ্ধে, সেই গণজাগরণ মঞ্চের লড়াই-সংগ্রামকেও গানের মধ্য দিয়ে উদ্দীপ্ত করে রেখেছিল আমাদের উদীচী।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এই বাংলাদেশ নানা সংকটে জর্জরিত। কিছু দুর্বৃত্ত, লুটেরা-হার্মাদ বাংলাদেশটাকে লুটেপুটে খাচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণের জীবনকে তারা নিষ্পেষণ করছে, নির্যাতন করছে। তার সাথে আছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, আছে পাকিস্তানপন্থী শক্তি-এমন বেড়াজালে আজ বাংলাদেশ নিমজ্জিত হয়ে আছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই-সংগ্রাম করতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে প্রগতির ধারা সেই ধারাটাকে আজ শক্তিশালী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবার প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এটা সাংস্কৃতিক আন্দোলনে-লড়াইয়ে যারা আছে তাদের যেমন কর্তব্য, তেমনি রাজনৈতিক শক্তি যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আছে, যারা মুক্তিযুদ্ধকে প্রগতির ধারা মনে করে, তাদের এই কঠিন সংগ্রামকে বিবেচনায় নিতে হবে। বাংলাদেশে সর্বক্ষেত্রে যে অন্ধকার বিরাজ করছে, এর বিরুদ্ধে একটি কঠিন লড়াই করতে হবে। এই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে হবে প্রগতিবাদী সাংস্কৃতিক শক্তিকে।’

গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবসার বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার যে স্বপ্ন ছিল সেটা কতটুকু অর্জিত হয়েছে, সেটা আজ আমাদের ভেবে দেখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ ছিল প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ফসল। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলেও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। রাজনৈতিক আন্দোলনেরও প্রয়োজন আছে, কিন্তু যে আন্দোলনের সঙ্গে সংস্কৃতির যোগ থাকে না, সেটা রাজনৈতিক আন্দোলন হয় না, সেটা লুটপাটের আন্দোলনে পরিণত হয়। উদীচী সারা বাংলাদেশে নেতৃস্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন। উদীচীকে প্রগতির ধারার সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে আরও জোরদার করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে আবার রাজাকার-আলবদর আর তাদের সন্তানদের আস্ফালন দেখতে পাচ্ছি। সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, যদি আপনারা আপনাদের আন্তর্জাতিক মুরব্বিদের চাপে যদি রাজাকার-আলবদরদের রাস্তায় নামার সুযোগ দেন, যদি গিভ এন্ড টেক পলিসিতে থাকেন, তাহলে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা মাঠে নামব। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা মাঠে নামবে। উদীচীকে সামনের দিনগুলোতে এই আন্দোলনে সঙ্গে থাকতে হবে।’

উদীচীর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী কল্পনা লালা অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা বালাগাত উল্লাহ, সিপিবি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া, টিইউসি নেতা ও প্রগতির যাত্রী সম্পাদক ফজলুল কবীর মিন্টু, চসিক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, চারুশিল্পী দেবাশীষ রায় ও বিশ্বজিৎ তলাপাত্র, সাংস্কৃতিক সংগঠক ইমতিয়াজ চৌধুরী সবুজ অনুষ্ঠানে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

আলোচনা পর্ব শেষে নগরীর চেরাগি চত্বর থেকে আন্দরকিল্লা হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শোভাযাত্রা আবারও চেরাগিতে গিয়ে শেষ হয়। বিজ্ঞপ্তি