নিজস্ব প্রতিবেদক
চার লাখ কোরবানি পশুর কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সম্পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করলেও এবারও আশাহত হয়েছেন আড়তদাররা। প্রায় ৮০ হাজার পশুর চামড়া কম সংগ্রহ করা ছাড়াও আড়তদারেরা বিপাকে পড়েছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীদের এলোপাতাড়ি চামড়া সংগ্রহের কারণে।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, ‘রোববার পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছি। এরমধ্যে গরু-মহিষের চামড়া ২ লাখ ৫৫ হাজার, বাকিগুলো ছাগল ও ভেড়ার। এবার গরুর দাম বেশি থাকাসহ মানুষের আর্থিক অবস্থা মন্দা থাকায় দুই-তিনজন বা আরও বেশি মিলে একটি গরু কোরবানি দিয়েছেন। এজন্য আমাদের চার লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।’
আতুরার ডিপো এলাকার আড়তদার আবদুল কাদের বলেন, ‘এবার কোরবানি কম হয়েছে। চামড়া সংগ্রহও কম হয়েছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ধরা হলেও সে অনুপাতে চামড়া আসেনি। এছাড়া মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কারণে চামড়া সংগ্রহ করাটা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা চামড়ার মান যাচাই না করে সংগ্রহ করেছে। সংগ্রহ করার পরে লবণ ঠিকভাবে না দেওয়ায় চামড়ার মান নষ্ট হয়েছে। এসবের কারণে আমাদের লস (ক্ষতি) হচ্ছে। প্রফেশনাল কসাই চামড়া কাটলে সেটার মান ভালো হয়।’
ট্যানারির হাতে আড়তদারদের জিম্মি থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আড়তদাররা চামড়া সংগ্রহ করার পর চামড়াগুলো সাফাই করা থেকে শুরু করে পরিমাণ মতো লবণ দিয়ে রাখতে হয়। এসব কাজ দক্ষ শ্রমিক ছাড়া করা যায় না। নয়তো চামড়ার গ্রেড ডাউন হয়ে যায়। তাই এসব কাজে আমাদের প্রচুর খরচ হয়। ব্যাংকও আমাদের এ ব্যবসায়ে ঋণ দেয় না। আগে চট্টগ্রামে আড়তদার যত ছিলো, এখন ততজন নেই। এছাড়া বেশ কিছু ট্যানারি ছিলো। এখন শুধু একটা ট্যানারি আছে। এখন আমাদের ঢাকার ট্যানারিগুলোতেও যোগাযোগ করতে হচ্ছে।’
জানা যায়, বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচাচামড়া আড়তদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য ১১২ জন থাকলেও এবার চামড়া সংগ্রহ করেছেন ৮০ জন। তবে চট্টগ্রামে চামড়া ব্যবসায়ী রয়েছেন ২ শতাধিক। এর বাইরেও মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা অলিগলি ঘুরে ঘুরে চামড়া সংগ্রহ করেন।
মৌসুমি চামড়া সংগ্রহকারীরা জানান, এবারে কোরবানি অনেকটা কম হয়েছে। অধিকাংশ মানুষ কয়েকজন মিলে একটি গরু কোরবানি দিয়েছেন। তারমধ্যে যারা ব্যক্তিগতভাবে কোরবানি দিয়েছেন তাদের অধিকাংশ ছোট গরু বা ছাগল দিয়েছেন। এরপরও মৌসুমী চামড়া সংগ্রহকারীরা বড় গরুর চামড়া ৪৫০-৬০০ টাকা, মাঝারি গরুর চামড়া ৩৫০-৪০০ টাকায় কিনে আড়তে বিক্রি করেছেন।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে এবছর ৮ লাখ ৭৪ হাজার পশু কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়। যার মধ্যে গরু ৫ লাখ ২৬ হাজার ৩২৫টি, মহিষ ৭১ হাজার ৩৩৩টি আর বাকিগুলো ছাগল ও ভেড়া। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১০ শতাংশ কম কোরবানি হওয়ার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।