নিজস্ব প্রতিবেদক »
পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের পথে ঐতিহাসিক পরীর পাহাড়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পাঠানো প্রস্তাবনার পর এবার পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণার জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি শনিবার পরীর পাহাড় এলাকা পরিদর্শন করবেন।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আতাউর রহমান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়, চট্টগ্রাম জেলার পরীর পাহাড় (কোর্ট বিল্ডিং) সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণার নিমিত্তে গেজেটভুক্তকরণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) পরীর পাহাড় সরেজমিন পরিদর্শন করে মতামত প্রদান করবে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তদের উপ-পরিচালক মো. আমিরুজ্জামানকে ও সহকারী স্থাপতি খন্দকার মাহফুজ আলমকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। উক্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পরিচালক এ কে এম সাইফুর রহমানকে।
উল্লেখ্য, আজকে কোর্ট বিল্ডিং তথা পরীর পাহাড় সপ্তদশ শতাব্দীতে আরাকানি শাসনে ‘ফেয়ারি হিল’ হিসেবে পরিচিত ছিল। এটা ছিল পর্তুগিজদের সম্পত্তি। ইংরেজ শাসনামলে হাতবদল হয়ে ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তা বাঙালি জমিদার অখিল চন্দ্র সেনের হাতে আসে। ১৮৮৯ সালে অখিল চন্দ্রের কাছ থেকে ‘পরীর পাহাড়’ হিসেবে পরিচিত এই পাহাড় কিনে নেয় ব্রিটিশ সরকার। ১৮৯৩-৯৪ সালে ছয় লাখ টাকা ব্যয়ে রাইটার্স বিল্ডিং এর আদলে দুই তলা আদালত ভবন নির্মাণ করা হয়। সেই থেকে সোয়া একশ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ভবনে বিচারিক কার্যক্রম চলছে। পরে বিভিন্ন সময় ভবনটি সংস্কার করা হয়। এই ভবনটি ভেঙ্গে নতুন আদালত ভবন নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হয়েছিল ২০০৩ সালের দিকে। তখন চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের আন্দোলনের মুখে শত বছরের পুরনো আদালত ভবনটি রেখে নতুন আরেকটি আদালত ভবন নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হয়। আর এরই অংশ হিসেবে ২০১০ সালে পুরাতন আদালত ভবনের পিছনে চারতলা নতুন আদালত ভবন নির্মাণ করা হয়। শতবর্ষী পুরাতন আদালত ভবনটি সংস্কার করে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এখান থেকে। ঐতিহাসিক এই পরীর পাহাড়কে প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা হিসেবে সংরক্ষণের প্রস্তাব বিবেচনা করছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি পরীর পাহাড়ের ১৩০ বছরের পুরানো দ্বিতল আদালত ভবনটিকে ‘হেরিটেজ’ হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এদিকে পরীর পাহাড়ে ইতিমধ্যে প্রায় সাড়ে তিনশ’ স্থাপনা অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া আইনজীবী সমিতির পাঁচটি ভবনও অবৈধ। আইনজীবী সমিতির ভবন নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে জেলা প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতি।
পুরাকীর্তি ঘোষণায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কমিটি গঠন
পরীর পাহাড়