সুপ্রভাত রিপোর্ট »
কয়েকদিনের টানা প্রবল বর্ষণে উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। পাহাড় ধসে বিধ্বস্ত হয়েছে বসত বাড়ি। এছাড়া পানিতে ডুবে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে অসংখ্য পরিবার। উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।
লোহাগাড়া
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি পানির ঢলে লোহাগাড়ার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। লোহাগাড়ার উপর দিয়ে প্রবাহিত বিভিন্ন খাল ও ছড়ার পানি দু’কুল উপচে পড়ে পুকুর ও খাল-বিল একাকার হয়ে গেছে। অনেক গৃহস্থের পুকুর ও মৎস্য প্রকল্প ডুবে বের হয়ে গেছে মাছ।
লোহাগাড়া ইউনিয়নের শাহ্পীর রোড ও পোস্ট অফিস সড়ক পানিতে ডুবে লোকজনের চলাচল মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, টংকাবতি নদী ও ডুলু খালের পানিতে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এলাকার রাজঘাটা রোড ও আমির খান চৌধুরী পাড়া-ঘোনাপাড়া রোড ভেঙ্গেছে। অত্র ইউনিয়নের প্রায় ১’শ কাঁচা বসতঘর ভেঙে গেছে। পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, এলাকার বিভিন্ন স্থানে পানিতে তলিয়ে গেছে। পদুয়া নাওঘাটা ধোয়ারটেক এলাকায় হাঙ্গরখালের ভাঙ্গনে প্লাবিত হয়ে এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পুটিবিলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, এলাকার এমচর হাট প্লাবিত হয়েছে নিকটস্থ ডলুখালের পানিতে। দোকানদারদেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দরবেশ ডিসি রোডের পুটিবিলার দু’স্থানে পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশ^স্তসূত্রে জানা যায়, আধুনগর ইউনিয়নের ডলুখালের পানি দু’কুল উপচে পড়ে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। সিপাহী পাড়া ও শাহ্ মজিদিয়া সড়ক ভেঙে এলাকার মানুষের যোগাযোগ অচল হয়ে পড়েছে। চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাবাসীকে। চুনতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, ইউনিয়নের সাতগড় ও ফারেঙ্গা গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সাতগড় এলাকায় হাতিয়ার খালের ভাঙ্গণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
কলাউজান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, টংকাবতি নদীর পানিতে মৌসুমী ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চরম্বা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, এলাকার রাজঘাটা, মাইজবিলা, বাইয়ার পাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক ভেঙ্গে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে জনজীবন হয়ে পড়েছে। টানা বর্ষণের কারণে এলাকার খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগও বেড়েছে।
রাঙ্গুনিয়া
বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে রাঙ্গুনিয়ার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। রোববার দিবাগত রাতে পাহাড় ধসে কমপক্ষে বিশটি বসতবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রোববার দিবাগত রাত ১২টায় কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কের রাঙ্গুনিয়া সেলিমা কাদের কলেজ গেট এলাকায় গাছ পড়ে যান চলাচল আড়াইঘণ্টা বন্ধ থাকে।
চলতি মৌসুমে গুমাইবিল, কোদালা বিল, শিলক তৈলাভাঙ্গা বিল ও বগাবিল সহ প্রায় তিন হাজার ১৩০ হেক্টর জমির রোপা আমন পানিতে ডুবে গেছে। পাঁচ দিন পর্যন্ত আমনের চারা পানিতে ডুবে থাকায় পঁচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। বন্যার পানিতে রোপা আমনের ক্ষতি হওয়ায় হাজার হাজার কৃষকের লক্ষ টাকা লোকসান গুনতে হবে বলে ভুক্তভোগী কৃষকরা জানিয়েছে।
পারুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. একতেহার হোসেন বলেন, ৬ নম্বর ওয়ার্ড জঙ্গল পারুয়া এলাকার সোনাইছড়ি খালের উত্তর পাশে চারটি, দক্ষিণ পাশে ছয়টিসহ দশটি বসতবাড়ি পাহাড় ধসে বিধ্বস্ত হয়েছে।
উপজেলার বিভিন্নস্থানে পাহাড় ধসে আরো দশটি বসতবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিন পরিদর্শন করে জানা যায়, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকাটি মূলত পাহাড়বেষ্টিত। এসব এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। পাহাড়ি অঞ্চলের বসবাসরত প্রায় দশ হাজার বাসিন্দা পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের নিরাপদে সড়ে যাওয়ায় জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হলেও অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাস করে চলেছে। দুর্গত মানুষের জরুরি আশ্রয় নিতে নিকটস্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সাইক্লোন সেন্টার হিসেবে ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
চন্দ্রঘোনা লিচুবাগানের জিলানি স্টোরের পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার বলেন, লিচুবাগান-ফেরিঘাট সড়কের দু’ধারে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিল, এটি ভরাট করে দখলবাজরা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে সাধারণ মানুষ নিদারুন কষ্ট ও চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
কাপ্তাই
টানা বর্ষণে কাপ্তাইয়ে ৪৮টি স্থানে ভাঙন ও পাহাড় ধসে ১৭১টি বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাপ্তাই সড়কে পাহাড় ধস ও গাছ পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পাহাড়ে পাদদেশে বসবাসরত তিনশ ৫৭জনকে সতেরটি আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।
চন্দ্রঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন মিলন বলেন, বড়ইছড়ি ও কলেজ গেট এলাকায় গতকাল পাহাড় ধসে অনিল তনচংগ্যা, রফিকুল ইসলাম সুমনের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গতকাল সকালে কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে কয়েকটি পরিবার এসেছে। ভুক্তভোগীরা জানান, অতি ঝুঁকিতে বসবাস করছে কাপ্তাই ঢাকাইয়া কলোনি, আফসারের টিলা, বাংলা কলোনির শতশত পরিবার।
এসব বাসিন্দারা এখনো ঝুঁকি নিয়ে সেখানে বসবাস করছে। তারা জানান, বৃষ্টি আরো বাড়লে, পরিস্থিতি খারাপ হলে তখনই যাবো।
কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রধান শিক্ষক মাহাবুব হাসান বাবু বলেন, উপজেলা প্রশাসনের প্রচারনায় অনেকেই সচেতন হচ্ছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রে ৮৫টি পরিবারের ৩৪৪ জন আশ্রয় নিয়েছে। তাদের জন্য খাবার ও থাকার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
ওয়াগ্গা ইউপি চেয়ারম্যান চিরনজিত তনচংগ্যা বলেন, টানাবর্ষণে একাধিক পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। ওয়াগ্গা ছড়ায় পাহাড়ি ঢলে আশে পাশের কয়েকটি সড়ক ও এলাকা প্লাবিত হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করায় চন্দ্রঘোনা ফেরি পারাপার বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
চিৎমরমের ইউপি সদস্য ক্যাপ্রু চৌধুরী বলেন, টানাবর্ষণে চিৎমরমে কয়েকটি স্থানে পাহাড় ধসে একাধিক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, টানাবর্ষণে কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু ক্ষতি হয়েছে। টানা বর্ষণে পানির স্রোতে প্লাবিত হয়ে ২৪টি বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলার ২টি ব্রিজ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া উপজেলার বেশকিছু এলাকায় সড়কে পাহাড় ধসে যোগাযোগ বিছিন্ন ছিলো সেখানে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়েছে।
আনোয়ারা
আনোয়ারা উপজেলায় ভারী বর্ষণ ও টানা বৃষ্টিতে গ্রামীণ সড়কগুলোর বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। এরই মাঝে দেবে গেছে কয়েকটি সড়ক। যার মধ্যে উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের রুদুরা বাংলাবাজার গ্রামীণ সড়কটি দেবে গিয়ে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে সড়কটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, বাংলা বাজার যাওয়া পথে সড়কটির প্রায় ৫০ ফুট রাস্তা কয়েক ফুট গভীরে দেবে গেছে। এতে করে বন্ধ রয়েছে এই সড়কের যানচলাচল। যাতে করে দুর্ভোগে পড়েছে এখানকার স্থানীয়রা।
জানা যায়, তিন বছর আগে চাতরী ইউনিয়নের কৈখাইন – ডুমুরিয়া – রুদুরা বাংলাবাজার গ্রামীণ সড়কটি কার্পেটিং করা হয়। গত রবিবার সকালে সড়কটি দেবে যায়।
মোহাম্মদ হাসান নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ডুমুরিয়া – রুদুরা হয়ে বাংলাবাজার যাওয়ার এইটি ছিলো প্রদান সড়ক। ভেঙ্গে ৫ ফুট নিচে রাস্তাটি দেবে গেছে। কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। এখন সেই রাস্তার বেহাল দশা। গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকলে হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে যাওয়া কষ্টকর হয়ে যাবে।
নুরুল আলম নামে এক সিএনজি অটোরিক্সা চালক জানান, গাড়ি নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতাম। এখন রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় গাড়ি নিয়ে বেকায়দায় পড়েছি।
ডুমুরিয়া ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শামসুল মেম্বার জানান, রাস্তার পাশে পুকুরে দীর্ঘদিন পানি না থাকায় টানা ভারী বর্ষণের ফলে গ্রামীণ সড়কের ৫০ ফুট রাস্তা ভেঙে নিচের দিকে দেবে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েকটি গ্রামের মানুষ।
এ বিষয়ে চাতরী ইউপি চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন চৌধুরী সোহেল বলেন, ভারীবর্ষণ ও প্রবল জোয়ারে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চাতরী-কেঁয়াগড় সংযোগ সড়ক এবং ডুমুরিয়া রূদুরা বাংলাবাজার সড়ক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সাথে সাথে সড়কগুলো দ্রুততার সাথে সংস্কার করার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
দীঘিনালা
দীঘিনালায় প্রবল ভারী বর্ষণে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে ২১টি আশ্রয়কেন্দ্র। এছাড়া দীঘিনালা উপজেলার মেরুং এলাকার বেইলি ব্রিজ এবং দাঙ্গাবাজার এলাকা পানিতে তলিয়ে যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
জানা যায়, কয়েকদিনের টানা প্রবল বর্ষণে দীঘিনালা উপজেলার নি¤œাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। মেরুং বেইলি ব্রিজ এবং দাঙ্গাবাজার মূল সড়ক প্লাবিত হয়ে যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বসবাসরত মেরুং, কবাখালি, বোয়ালখালী, বাবুছড়াসহ চার ইউনিয়নের পরিবারগুলি নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২১টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ জরুরি সেবাকেন্দ্র খোলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলার ১ নম্বর মেরুং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহামুদা বেগম লাকী জানান, বেইলি ব্রিজ তলিয়ে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। নৌকায় করে ঝূকিপূর্ণ প্রত্যেকটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পরামর্শ দিয়েছি। তিনি আরো জানান মেরুং ইউনিয়নের আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরাফাতুল আলম জানান, টানা ভারি বৃষ্টির কারণে উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সর্তকতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে এবং ঝুকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চারটি ইউনিয়নে খোলা হয়েছে ২১ টি আশ্রয়কেন্দ্র।
যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় দীঘিনালা উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
রাউজান
ভারী বর্ষণে উজান থেকে নামছে পাহাড়ি ঢলের পানি। রাউজানের বিস্তিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। টানা কযেকদিনের ভারি বর্ষণে পাহাড়ি ঢলের পানি উজান থেকে নামছে। অপরদিকে হালদা নদীর সাথে সংযুক্ত খাল ও নদীর পাড় বেয়ে জোয়ারের পানি আসছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডাবুয়া খালের বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ঢেউয়া পাড়া এলাকায় কলমপতি খাল ও একই ওয়ার্ডের হাজী পাড়া এলাকায় খাসখালী খালের ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে গেছে হলদিয়া ভিলেজ রোড,শহীদ জাফর সড়ক, এয়াসিন শাহ সড়ক, দোস্ত মোহাম্মদ চৌধুর সড়ক, গনির ঘাট সড়ক, আকবর শাহ সড়ক, চিকদা¦ইর পাঠান পাড়া সড়কসহ শতাধিক সড়ক।
এছাড়া রাউজান ফকির হাট বাজার, কাগতিয়া বাজার, রাউজান জলিল নগর বাস স্টেশন, বেরুলিয়া বাজার, উরকিরচর মদুনাঘাট বাজার, আলামিয়ার হাট, কচুখাইন মিয়া আলীর হাটও ডুবে গেছে। পুকুর জলাশয় ও মৎস হ্যচারি ডুবে পানিতে ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার মাছ। রাউজানে বন্যায় হাজার হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে আমন ধানের রোপণ করা চারা ও বীজতলা।
রাউজান উপজেলা মৎস সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বন্যার পানিতে রাউজানের ৫শতাধিক পুকুর জলাশয় ও হ্য্যচারি ডুবে কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে।
উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম বলেন, বন্যায় পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার মাসুম কবির বলেন, বন্যার পানিতে রোপণ করা আমন ধানের চারা বীজতলা তলিয়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করতে মাঠে কাজ করছে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার নিয়াজ মোরশেদ বলেন, রাউজানে বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় ত্রাণ ও দুর্যোগ বিভাগ ও রাউজান উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুস সামাদ শিকদার বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় আশ্রয়ন কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়ন কেন্দ্রে আসা পরিবারকে খাবার সহ সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করা হবে। রাউজানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে ২০ মেট্রিক টন চাউল, ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
পেকুয়া
টানা বর্ষণ ও বেড়িবাঁধ ভেঙে মাতামুহুরী নদীর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে দুই শতাধিক গ্রাম। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। ফলে চকরিয়া থেকে বাঘগুজারা পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
গতকাল সোমবার ভোর সাড়ে ৫ টা থেকে এ সব গ্রামে পানি ঢুকতে শুরু করে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বীজতলা, চিংড়ি ঘের, সড়ক ও বিভিন্ন ঘর বাড়ি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,পহরচাঁদা-পেকুয়া সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব মেহেরনামার বাঘগুজারা রাবার ড্যাম সংলগ্ন বেড়িবাঁধের দেড় চেইন পর্যন্ত ভেঙে গেছে। এতে করে পেকুয়া সদর ইউনিয়ন, শিলখালী, বারবাকিয়া ও টৈটং ইউনিয়নের দুইশতাধিক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যাকবলিত লোকজন নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে।
শীলখালী ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে আছে লোকজন। টইটং ইউপির চেয়ারম্যান জাহেদ চৌধুরী জানান, টানা বৃষ্টির পানিতে আমার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে অনেক পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে।
এ দিকে পেকুয়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহ জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙা অংশ মেরামত করা না হলে আরো ভয়াবহ হবে।
এ বিষয়ে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা বলেন, পাহাড়ি ঢল ও বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ায় দুশতাধিক গ্রামের অন্তত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি
টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার আগাম রবিশস্য। একই সাথে উপজেলার দৌছড়ি ইউনিয়নে পানির স্রোতে নিখোঁজ রয়েছে মেমপই ম্রো (৩০) নামে ১ জন। নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের ২ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৩টি বসত ঘর ভেঙে গেছে। এছাড়া ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু এলাকায় ৩টি গ্রাম বন্যার পানিতে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। উপজেলার কয়েকটি প্রধান সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন ৪৫টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রেখে পুরো উপজেলায় নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে সতর্ক থাকতে মাইকিং করছেন। উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় এ দুর্যোগে সবাইকে সর্তকতা অবলম্বন ও জনগনের পাশে থাকতে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোমেন শর্মা বলেন,কয়েকদিন ধরেই নাইক্ষ্যংছড়িতে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। প্রাণহানির শঙ্কায় পাহাড়ের ঢালুতে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে আসতে মাইকিং করা হচ্ছে। ৪৫টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ঘুমধুমে ২টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়। আর জরুরি এ অবস্থায় ২টন চাল বরাদ্দ দিয়েছেন জেলা প্রশাসন।