নিজস্ব প্রতিবেদক »
গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের বার্ষিক আয়ের পরিমাণ বাড়েনি। বরং ঋণের পরিমাণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণে এসব তথ্য জানা গেছে।
হাছান মাহমুদ চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া-বোয়ালখালী আংশিক) আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী। ২০০৮ সাল থেকে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন। এবার পুনরায় তিনি এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন।
তাঁর হলফনামায় পেশা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে শিক্ষকতা ও ব্যবসা। আর আয়ের উৎস হিসেবে দেখানো হয়েছে পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া কৃষি জমি, বাড়ি ভাড়া, মন্ত্রী হিসেবে প্রাপ্ত বেতানভাতাদি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন-ভিজিটিং শিক্ষক হিসাবে প্রাপ্ত বেতনের খাত উল্লেখ করা হয়।
হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা যায়, এবার তথ্যমন্ত্রীর ঋণের পরিমাণ গতবারের চেয়ে বেড়েছে। গত নির্বাচনের হলফনামায় সর্বমোট ঋণ ছিল ১ কোটি ২১ লাখ টাকা। এবার তাঁর সর্বমোট ঋণ দেখানো হয়েছে ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১ কোটি ৭ লাখ টাকা।
২০১৮ সালে তাঁর মোট ঋণ ছিল ১ কোটি ২১ লাখ ১০ হাজার ৯৪৮ টাকা। এর মধ্যে জিপ গাড়ি বাবদ ঋণ ১৫ লাখ ১০ হাজার ৯৪৮ টাকা, জামানতবিহীন ঋণ ৯৬ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া ভাইদের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ দেখানো হয়েছিল।
এবছর জমা দেওয়া হলফনামায় দেখা যায়, হাছান মাহমুদের ব্যক্তিগত ব্যাংকঋণ রয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক থেকে এই ঋণ নেওয়া হয়। এ ছাড়া অন্যান্য জামানতবিহীন ঋণ রয়েছে ৯১ লাখ টাকা। ভাইদের কাছ থেকে ঋণ রয়েছে ১২ লাখ টাকা।
হলফনামায় বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে ড. হাছান মাহমুদের আয় ও ব্যয় দুটোই উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে। গতবারের হলফনামায় বাৎসরিক আয় ছিল ২৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা। এবার সেখানে আয় দেখানো হয় ১৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের কৃষি খাতে আয় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও দোকান ভাড়া খাতে আয় ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। এ ছাড়া ব্যাংক ও অন্যান্য খাত থেকে সম্মানী বাবদ হাছান মাহমুদের আয় ১ লাখ ২২ হাজার ২৬৩ টাকা।
তথ্যমন্ত্রীর নামে নগদ টাকা রয়েছে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে রয়েছে ৪০ হাজার টাকা। মন্ত্রীর ব্যাংকে জমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমা রয়েছে ৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে হাছান মাহমুদের নামে পাঁচলাইশ থানাধীন খুলশী মৌজায় ছয় কাঠা জমি দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া পূর্বাচলে সাড়ে ৭ কাঠার একটা প্লট দেখানো হয়। পৈতৃক সূত্রে হাছান মাহমুদ বাকলিয়া মৌজায় দুই কাঠা জমির এক-চতুর্থাংশের মালিক দেখানো হয়। দানপত্র সূত্রে সাড়ে পাঁচ কাঠা জমির ওপর দালান রয়েছে। এই দালান এখন ভবন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের (ডেভেলপার) কাছে রয়েছে। একইভাবে ২০০৯ সালে প্রায় ৪৮ লাখ টাকায় পিংক সিটিতে একটি ডুপ্লেক্স ঘর কেনা হয় বলে হলফনামায় বলা হয়েছে।
এ ছাড়া হাছান মাহমুদের স্ত্রীর নামে গাজীপুরে তিন কাঠা জায়গা রয়েছে। চট্টগ্রাম নগরের সিরাজুদৌলা সড়কে এক গন্ডার বেশি জায়গা রয়েছে বলে হলফনামায় দেখানো হয়।
অপরদিকে, তথ্যমন্ত্রীর স্ত্রী নুরান ফাতেমার আয় কমেছে। ২০১৮ সালে মোট আয় ছিল ২৪ লাখ ৭৮ হাজার ২২৫ টাকা। এবার দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৫৭ হাজার ৩৩৩ টাকা। এবার হলফনামায় নুরান ফাতেমার বাড়িভাড়া বাবদ আয় দেখানো হয় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। ব্যবসা খাতে আয় লাখ ৭৪ হাজার টাকা। শেয়ার ও সঞ্চয়পত্র খাতে আয় ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা। এ ছাড়া ব্যাংক ও অন্যান্য খাতে তাঁর আয় ৪ লাখ ২১ হাজার ৩৩৩ টাকা।