নিজস্ব প্রতিবেদক »
কয়েকদিন পর পর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে ধরা পড়ছে দালাল। গত আড়াই মাসে ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। এরমধ্যে সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার মোরশেদ আলম (৪০) নামে এক দালালকে আটক করা হয়েছে। তিনি আয়াদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে রোগীদের তথ্য সংগ্রহ করে রোগী ও স্বজনদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন। গ্রেফতার হওয়া সবাই গাইনি ওয়ার্ডের রোগীদের হয়রানি করছিলো। দুর্বলতার সুযোগ বুঝে দালালদের উৎপাত বাড়া নিয়ে চিন্তিত সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে প্রশাসনের আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
চমেক সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ আটক হওয়া মোরশেদ আলম (৪০) সহ গত আড়াই মাসে ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১ অক্টোবর জুয়েল (৫০), ৪ অক্টোবর সবুজ (২৫), ১৬ অক্টোবর মো. সুমন (২২), ১৭ অক্টোবর মো. মইন উদ্দিন (৩২) রয়েল দে (২৭), ২৫ অক্টোবর আলম বাবু (৪১), মো. জিসান (২৪), মো. ফরহাদ (৩৪), মো. জুয়েল (২৩), ৩১ অক্টোবর আদনান সিকদার (২২), ১৪ ডিসেম্বর মো. সাহাব উদ্দিন (২৮) এবং ২০ ডিসেম্বর সোহেল রানা (২৪), ইমতিয়াজ আহমেদ (২১) ও মো. ইমনকে (২৪) আটক করা হয়। গাইনি ওয়ার্ডে রোগীদের হয়রানিকালে সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে চমেক পুলিশ বক্সের ইনচার্জ নুর উল্লাহ আশেক বলেন, শুক্রবার সকালে হাসপাতালের ৩৩ নম্বর গাইনি ওয়ার্ড থেকে মোরশেদ আলম নামে এক দালালকে আটক করা হয়েছে। তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। এসব দালালরা রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রাইভেট হাসপাতালে নেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের হয়রানি করে থাকে। এরমধ্যে অনেকে তথ্য নিয়ে রোগীদের দুর্বলতার সুযোগ নেয়। এভাবে প্রতিনিয়ত তাদের হাতে জিম্মি হচ্ছে শত শত রোগী। হাসপাতালে দালালের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আটক হওয়া দালালদের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পাঁচ ধরনের দালালচক্র চমেক হাসপাতালে সক্রিয় রয়েছে। এরমধ্যে ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তারা তাদের লোক পাঠিয়ে রোগীদের ওষুধের স্লিপ দেয়। ফলে রোগীরা অপ্রয়োজনীয় ওষুধ কেনে। একইভাবে কাজ করে ডায়গোনেস্টিক সেন্টারে কর্মরত ব্যক্তিরা, যারা রোগীদের অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করায়। অন্য এক শ্রেণির দালাল রয়েছে, যারা রোগীদের তথ্য সংগ্রহ করে পরবর্তীতে রোগীদের কাছ থেকে টাকা দাবিসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। এছাড়া আর দুটি ধরনের মধ্যে রয়েছে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া সংক্রান্ত ও প্রাইভেট হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার কাজ।
এ নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশি অভিযানে নিয়মিত দালাল ধরা পড়লেও তাদের দৌরাত্ম্য কমছে না। শুধুমাত্র অভিযোগ দাখিল করে আদালতে পাঠানো হয় দালালদের। জরিমানা দিয়ে জামিন পাওয়ার পর আবারও হাসপাতালে এসে এ কাজে জড়ায় তারা।
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের দালাল নির্মূলে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর হলে হবে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। যেহেতু হাসপাতাল একটি আলাদা প্রতিষ্ঠান তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাইলেই হাসপাতালের ভিতর অভিযান পরিচালনা করতে পারে না। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা নিয়েই পুলিশি অভিযান চালাতে হয়।’
এ নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান সুপ্রভাতকে বলেন, ‘দালাল ধরার অভিযানে আমিও ছিলাম। এ দালালগুলো মূলত আমরাই ধরে দিই। কিন্তু বিষয়টা হল আইনগত জটিলতা। দালালরা জরিমানা দিয়ে জামিনে বের হয়ে আবার একই কাজ করছে। এ সংকট নিরসনে আমরা যথেষ্ট আন্তরিকভাবে কাজ করছি। আগামীতে ইমার্জেন্সি গেট ছাড়া বাকি গেটগুলো সন্ধ্যা ছয়টার পর বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। এছাড়া আনসারের সংখ্যা বৃদ্ধি ও রোগীদের এটেন্ডেন্ট কমানোর জন্য কাজ করছি।’
আইনগত জটিলতা নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের (বিএইচআরএফ) মহাসচিব অ্যাডভোকেট এ এম জিয়া হাবীব আহসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আইনগত কোনো জটিলতা নাই। তাদের বিরুদ্ধে হাসপাতালের অনুপ্রবেশ, স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাঘাত দেওয়াসহ প্রতারণা মামলা দেওয়া যেতে পারে। তবে বিষয়গুলো নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে শক্ত ও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। অন্যথায় দালাল ছাড়াও বিভিন্ন অপরাধীদের চক্র সেখানে সক্রিয় থেকে রোগীদের হয়রানি করতে পারে। এতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুনাম নষ্ট হবে।’