জলবায়ু :
কোনো স্থানের আবহাওয়া (আমাদের চারপাশের তাপ, চাপ, বায়ুপ্রবাহ, আর্দ্রতা ইত্যাদি অবস্থা) পরিবর্তনের নির্দিষ্ট ধারাই জলবায়ু। ছোট্টবন্ধুরা, জলবায়ু হলো কোনো স্থানের বহু বছরের আবহাওয়ার গড় অবস্থা। আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তবে মনে রাখা দরকার, আবহাওয়া ও জলবায়ু এক নয়। কেননা, আবহাওয়া হলো কোনো স্থানের আকাশ ও বায়ুম-লের সাময়িক অবস্থা। আর জলবায়ু হলো কোনো স্থানের বহু বছরের আবহাওয়ার সামগ্রিক অবস্থা। কোনো নির্দিষ্ট স্থানের জলবায়ু ওই স্থানের অক্ষাংশ (নিরক্ষরেখা হতে কোনো স্থানের দূরত্ব), সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে স্থানটির উচ্চতা ও সমুদ্র থেকে স্থানটির দূরত্বের ওপর নির্ভর করে। অক্ষাংশের মান যত বেশি হবে জলবায়ু তত শীতল হবে। বাংলাদেশের জলবায়ু উষ্ণ ও আর্দ্র। বাংলাদেশে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত এই ছয়টি ঋতু রয়েছে। বাংলাদেশের ঋতুগুলো উত্তর গোলার্ধের অন্যান্য দেশ থেকে ভিন্ন। অন্যন্য দেশগুলোতে সাধারণত ৪টি ঋতু দেখা যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ হচ্ছে বায়ুম-লে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের জলবায়ু দেখা যায়।
জলীয়বাষ্প :
পানি বিভিন্ন অবস্থায় থাকতে পারে। উত্তাপ দিয়ে ও ঠান্ডা করে আমরা পানিকে জলীয়বাষ্প, তরল পানি এবং বরফ এই তিন অবস্থায় পরিবর্তন করতে পারি। জলীয় বাষ্প আমরা দেখতে পাই না। বন্ধুরা, তাপে পানি জলীয়বাষ্পে পরিণত হয়। এটা হচ্ছে পানির বায়বীয় অবস্থা। সহজ কথায় জলকণার বায়বীয় অবস্থা হলো জলীয়বাষ্প। নির্দিষ্ট তাপমাত্রার জলকণা বাষ্পে পরিণত হয় এবং অন্যান্য জলকণা গ্যাসের মতো বায়ুতে মিশে থাকে। বায়ুম-লে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ অতিসামান্য হলেও আবহাওয়া ও জলবায়ু নির্ধারণে এর ভূমিকা ব্যাপক।
জীববৈচিত্র্য :
বন্ধুরা, জীববৈচিত্র্য বলতে পৃথিবীর সব গাছপালা ও সকল জীব-উদ্ভিদকূলের সমন্বয়ে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যকে বোঝায়। খাদ্য থেকে শুরু করে মানুষের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ও সেবার উৎস এই জীববৈচিত্র্য। পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের ওপর সবকিছু নির্ভর করে। এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, শিক্ষাগত, সাংস্কৃতিক, সৌন্দর্যগত, জেনেটিক ও বিভিন্ন দিক থেকে অতিমূল্যবান। পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার মহা গুরুত্বপূর্ণ। এ পৃথিবীতে জীববৈচিত্র্যের শেষ নেই! পৃথিবীতে কত রকমের যে প্রজাতি আছে তার সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়! তবে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন পৃথিবীতে এই প্রজাতির সংখ্যা তিন কোটির বেশি। তবে এই জীববৈচিত্র্য নষ্ট হওয়ার পিছনে অনেক কারণ আছে। যেমন; জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ, বনভূমি ধ্বংস, সম্পদের অতিব্যবহার ইত্যাদি।
জলাভূমি :
স্থলভাগে কিংবা উপকূলীয় এলাকায় জলময় এলাকাকে জলাভূমি বলে চিহ্নিত করা যেতে পারে। এটি একটি নি¤œ ও আর্দ্র এলাকা। সাধারণভাবে কোনো হ্রদের অববাহিকা বা তলদেশ ক্রমে ভরাট হয়ে বিল বা জলাময় তথা জলাভূমিতে পরিণত হতে পারে। জলাভূমিতে প্রচুর হিউমাস (মাটিতে বিদ্যমান জৈবপদার্থ) থাকে বলে এটি উর্বরভূমি হিসেবে খ্যাত। ধারণা করা হয়, পৃথিবীর ৬ শতাংশের বেশি এলাকাজুড়ে জলাভূমি রয়েছে।
জলোচ্ছ্বাস :
জলোচ্ছ্বাস হল সমুদ্রের জল ফুলে উঁচু হয়ে উপকূলে আঘাত হানা। এটি এক ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বিভিন্ন কারণে এটা হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়, সুনামির কারণে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। সুনামির ক্ষেত্রে সমুদ্রের জল সর্বোচ্চ প্রায় ৬৫ মিটার উঁচু হয়ে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এ ধরনের জলোচ্ছ্বাসে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। আবার সংকীর্ণ ও অগভীর নদীপথ অথবা মোহনায় প্রবল জোয়ারের কারণে সৃষ্ট তরঙ্গকেও জলোচ্ছ্বাস বলা যেতে পারে। কখনো কখনো ৬ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে ওঠা উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে ছুটে আসা এ জলোচ্ছ্বাসের বিপুল জলরাশিকে প্রতিরোধ করা খুবই দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশে এপ্রিল অথবা মে মাসে এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়।
জলপ্রপাত :
পার্বত্য অঞ্চলে নদীপ্রবাহ কোনো উঁচুভূমি থেকে নিচে পতিত হলে তাকে সাধারণভাবে জলপ্রপাত বলা যেতে পারে। মূলত পার্বত্য অঞ্চলে শিলার বা মাটির এলোমেলো গঠনের কারণে এমনটি হয়ে থাকে। ছোট্টবন্ধুরা, তাহলে বলতে পারো, ঝরনা আর জলপ্রপাত কি একই ? নিশ্চয় না। ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে প্রবাহিত জলধারা যখন কোনো খাড়াপ্রান্তে এসে পতিত হয় তখন তাকে জলপ্রপাত বলে। অন্যদিকে মাটির নিচে জমা হওয়া পানি পাহাড়ের কোনো খাড়া অংশ থেকে বেরিয়ে আসলে তাকে ঝরনা বলে। কানাডার নায়াগ্রা এবং আফ্রিকার ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত পৃথিবীর বিখ্যাত জলপ্রপাতের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের মাধবকু- জলপ্রপাত (মৌলভীবাজার), নাফাখুম জলপ্রপাত (বান্দরবান) অন্যতম।
জোয়ার-ভাটা :
বন্ধুরা, চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণের প্রভাবে প্রতিদিন দু’বার (১২ ঘণ্টাা পরপর) সমুদ্রের পানি প্রাকৃতিক ধারা মেনে ও নিয়মমাফিক ওঠানামা করে। পৃথিবীর ওপর চন্দ্র-সূর্যের আকর্ষণের (মহাকর্ষ বল) তারতম্যের কারণে জোয়ার-ভাটা হয়ে থাকে। জোয়ার-ভাটা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে; যেমন মূখ্য জোয়ার বা ভরাকটাল, গৌণ জোয়ার বা মরাকটাল। সমুদ্রের পানির নিয়মিত ফুলে ওঠাকে জোয়ার আর নেমে যাওয়াকে ভাটা বলে। বাংলাদেশের বুক জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বড় বড় নদ-নদীগুলোতে নিয়মিতভাবে জোয়ার-ভাটা হয়। গভীর সমুদ্রে জোয়ার-ভাটার মধ্যবর্তী উচ্চতার ব্যবধান ৩-৫ ফুটের কাছাকাছি, কিন্তু অগভীর এলাকায় এই উচ্চতা ২৫ ফুটেরও অধিক হতে পারে।
জীবাশ্ম-জ¦ালানি :
পাললিক শিলাস্তরে (পলির স্তর জমে জমে যে শিলাস্তর) বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক যুগের (পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ গঠনের সময় থেকে) প্রাণির ও উদ্ভিদের দেহাবশেষ মাটির অনেক গভীরে স্তরীভূত অবস্থায় দীর্ঘদিন সংরক্ষিত থাকে। এ সব দেহাবশেষকে জীবাশ্ম বলে। আর জীবাশ্ম জ¦ালানি বলতে কয়লা, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসকে বোঝায়। মূলত এগুলোর ভিত্তি হচ্ছে কার্বন। হাজার হাজার বছর ধরে গাছপালা ও অন্যান্য জৈববস্তু মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকার পর বিভিন্ন শক্তিধারণ করে থাকে। এগুলো ভৌত ও রাসায়নিক বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় মাটির নিচে কয়লা, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসরূপে পরিবর্তিত হয়।