ভারতীয় সাংবাদিক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক »
‘বাংলাদেশ ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের দেশ। জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের নিত্যসঙ্গী। এগুলোর সঙ্গে লড়াই করে আমাদের বাঁচতে হয়। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা উন্নয়নের সোপানে এগিয়ে চলেছি। এটি আমাদের দেশের বিরোধীদলের রাজনীতিবিদেরা দেখেও দেখেন না, শুনেও শুনেন না। তারা ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে গিয়ে বলে বেড়ান কোনো উন্নয়ন হয় নাই। পদ্মাসেতু পাড়ি দিয়ে ওপারে গিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বক্তৃতা করেন। বলেন, কিছুই হয় নাই। পদ্মাসেতু পাড়ি দিয়েও তারা উন্নয়ন দেখেন না। আমি ভারত থেকে আগত সাংবাদিকদের বলবো, বদলে যাওয়া বাংলাদেশের গল্পটা আপনারা পৃথিবীকে শোনাবেন।’
রোববার দুপুর ২টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত ভারতীয় সাংবাদিক প্রতিনিধিদলের সাথে মতবিনিময়কালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয়, তখন বাংলাদেশের জিডিপি রেট ছিল ৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ। যে জিডিপি গ্রোথ রেট আমরা এখনো অতিক্রম করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে অবশ্যই এ জিডিপি গ্রোথ রেট অব্যাহত থাকতো। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়ার বদলে যাওয়ার গল্প শোনার বহু আগেই বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার গল্প শুনতো বিশ্ববাসী। এখন আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণে অদম্যগতিতে এগিয়ে চলছি। কোনো দেশের উন্নয়ন যদি সমস্ত অঞ্চলের উন্নয়ন না হয়, তাহলে তা টেকসই উন্নয়ন হয় না।’
ভারতীয় সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা দুই দেশের নাগরিক বটে। কিন্তু আমরা একই পাখির কলতান শুনি। একই নদীর অববাহিকায় আমরা বেড়ে উঠেছি। কাটাতাঁরের বেড়া আমাদের এই বন্ধনকে বিভক্ত করতে পারেনি। কাঁটাতারের বেড়া আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের কৃষ্টি, আমাদের ভাষা, সবশেষে আমাদের ভালোবাসাকে বিভক্ত করতে পারেনি। আজকে যাঁরা বক্তৃতা করলেন, তাঁদের হৃদয়নিংড়ানো বক্তৃতাগুলো আমি শুনছিলাম। আমাদের মধ্যে হাজার হাজার বছরের যে সম্পর্ক তা রক্তের বন্ধনে একত্রিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে। যখন আমাদের মুক্তিবাহিনীর সাথে ভারতের সেনাবাহিনী রক্ত ঝরিয়েছে। তাই আমার ইচ্ছে ছিল, আমি যে শহরে বেড়ে উঠেছি, সে শহরে ভারতের সাংবাদিকদের একদিন ডেকে আনবো। আজ আমার সেই ইচ্ছে সফল হলো।’
বাংলাদেশসহ ভারতের স্বাধীনতায় চট্টগ্রামের মানুষের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভারতের সাংবাদিকদের বাংলাদেশ আগমন, বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ স্বচক্ষে দেখা, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে বদলে গেছে, আজকে যে ছেলেটি ১৪ বছর আগে বিদেশ গিয়েছিল সে এসে এখন নিজের শহর চিনতে পারবে না, নিজের গ্রাম চিনতে পারবে না। কারণ তা ইতিবাচকভাবে বদলে গেছে। ‘পায়ে চলা মেঠোপথ গেছে বহুদূর, রাখালি বাঁশির সুর সরল মধুর’Ñ সেটি এখন শুধু কবিতায় আছে। এখন পায়ে চলা মেঠোপথ গ্রামেও খুঁজে পাওয়া যায় না। এখন আর আকাশ থেকে কুঁড়েঘর দেখা যায় না। কুঁড়েঘর এখন শুধু পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের কবিতাতেই পাওয়া যায়। বাস্তবিক অর্থে কুঁড়েঘর হারিয়ে গেছে। এটিই বদলে যাওয়া বাংলাদেশের সমকালীন চিত্র।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিকেরা সমাজের তৃতীয় নয়ন খুলে দেয়, মানুষের আত্মিক খোরাক জাগায়। অনুম্মোচিত বিষয়কে উম্মোচিত করে। সমাজ এবং রাষ্ট্রকে সঠিক পথে প্রবাহিত করার ক্ষেত্রে সাংবাদিকেরা ভূমিকা রাখেন। এখান থেকে গিয়ে যখন আপনারা কলম ধরবেন কিংবা টেলিভিশনে রিপোর্ট করবেন তখন দুদেশের সম্পর্ক আরো গভীরতর হবে। আমাদের দেশের বদলে যাবার গল্পটা ভারতবাসী জানবে, বিশ্ববাসী জানবে।’
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজার সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক শহীদুল্লাহ শাহরিয়ারের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, কলকাতা প্রেস ক্লাব সভাপতি স্নেহাশীষ সুর, সাধারণ সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিক, আসামের সিনিয়র সাংবাদিক মনোজ কুমার গোস্বামী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদ্যবিদায়ী সভাপতি আলী আব্বাস, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক ম শামসুল ইসলাম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি চৌধুরী ফরিদ।
প্রসঙ্গত, মতবিনিময়ে আসার আগে তথ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসা ভারতের কলকাতা থেকে ২৫ জন এবং আসাম ও গৌহাটি থেকে সফরে আসা ৯ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে নিয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম অগ্নিহোত্রী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মাহুতির স্থান পাহাড়তলীর ইউরোপীয়ান ক্লাব পরিদর্শন করেন।