সুপ্রভাত ডেস্ক »
রেল গাড়িতে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে জনসভায় নৌকা মার্কায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার বিকেলে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এই আহ্বান জানান। খবর বিডিনিউজের।
বিপুল মানুষের উপস্থিতিতে তিনি বলেন, ‘আমরা সারা দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সে কারণেই আমি আপনাদের এইটুকুই বলব, আজকে পদ্মা সেতুতে রেল আপনাদের উপহার দিয়ে গেলাম। আপনারা ফরিদপুরবাসী নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবার আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন।’
দ্বিতল পদ্মা সেতুতে সড়ক চলাচল উদ্বোধনের সোয়া এক বছর পর মঙ্গলবার মুন্সীগঞ্জের মাওয়া স্টেশন থেকে বহুল প্রতীক্ষিত রেল সংযোগের উদ্বোধন করেন সরকার প্রধান।
সকালে প্রধানমন্ত্রী সড়ক পথে মাওয়া পৌঁছেন গাড়ি বহরে করে। পরে মাওয়া স্টেশনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ট্রেনে চড়েন একটার কিছু সময় আগে।
১২ টা ৫৯ মিনিটে তাকে বহনকারী ১৪ কোচের ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে ফরিদপুরের ভাঙ্গার উদ্দেশে। ৫৪ মিনিটর পর বেলা ১ টা ৫৫ মিনিটে সেটি পৌঁছে গন্তব্যে।
শেখ হাসিনা এই পথে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করলেও ঢাকা থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে আগামী ১ নভেম্বর থেকে। ঢাকা থেকে খুলনা পর্যন্ত চলাচলকারী সুন্দরবন এক্সপ্রেস, ঢাকা থেকে যশোরের বেনাপোল পর্যন্ত চলাচলকারী বেনাপোল এক্সপ্রেসের রুট পাল্টে চলবে পদ্মা সেতু হয়ে।
পাশাপাশি রাজশাহী থেকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পর্যন্ত চলাচলকারী মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটির যাত্রাপথ বাড়বে। সেদিন থেকে এই ট্রেনটি চলবে রাজশাহী থেকে ঢাকা পর্যন্ত।
এই রুট তিনটি চালুর পর মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলা রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে। এছাড়া ভাঙ্গা-পাচুরিয়া- রাজবাড়ী সেকশনও পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হবে।
রেল লাইন উদ্বোধনের এই দিনটিতে প্রধানমন্ত্রী মাওয়া প্রান্তে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছাড়াও ভাঙ্গায় সমাবেশের আয়োজন রাখা হয় আগেই।
সেখানে ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সেই সমাবেশে সকাল ১০টা থেকেই প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ও বাদ্যযন্ত্র নিয়ে দলে দলে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ যোগ দেয়। মিছিল-স্লোগানে মুখরিত হয় জনসভাস্থল।
দীর্ঘ ৬ বছর পর ফরিদপুরের ভাঙ্গায় যাওয়া প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে মহাসড়ক বা অলিগলি সবখানে ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণে তাকে স্বাগত জানিয়ে তুলে ধরা হয় সরকারের উন্নয়ন কাজের ফিরিস্তি এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বদলে যাওয়ার চিত্র।
সড়ক, রেল ও আকাশপথে চলাচল ব্যবস্থা উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশকে সার্বিকভাবে উন্নয়ন করে বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
‘এটা করতে পেরেছি কেন? তার কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে। সেই কারণেই এটা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘নৌকা আপনাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, নৌকা পদ্মা সেতু, রেল সেতু দিয়েছে, রাস্তাঘাট উন্নতি করেছে, নৌকা আপনাদেরকে কলেজ, স্কুল বিশ্ববিদ্যালয় দিচ্ছে। নৌকা-ই এ দেশের মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন আনে।
‘তাই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার যাতে আপনাদের সেবা করতে পারে, আপনাদের কাছে আমার সেই আবেদন থাকল।’
ওরা লুটেরা
সমাবেশে জনগণকে বিএনপি থেকে দূরে থাকার পরামর্শও দেন আওয়ামী লীগ প্রধান। বিরোধী দলটির দুই শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘ওই লুটেরা, যে এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছে, দুর্নীতি করে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, যে পলাতক আসামি, মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে ভেগেছে, অর্থ আত্মসাৎ করেছে, অস্ত্র চোরাকারবারী- এই হল বিএনপির নেতা। আর জামায়াতে ইসলামী হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী, যুদ্ধাপাধের জন্য তাদের শাস্তি দিয়েছি।
এরা দেশকে ধ্বংস করে দেবে। এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য একমাত্র নৌকা মার্কা-ই আপনাদেরকে সব রকম সহযোগিতা দেবে।
ভোটের অধিকার দিয়েছে আওয়ামী লীগই
আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিলিটারি ডিক্টেটর জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া- এদের সময় কেউ ভোট দিতে পারত না। কথা-ই ছিল, ‘১০টা হুন্ডা, ২০টা গুন্ডা, নির্বাচন ঠান্ডা’। এখন আর সেই অবস্থা নেই।
‘এক টানা ১৪ বছর এই বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে, স্থিতিশীলতা আছে, যে কারণে আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। সমগ্র বাংলাদেশে আজ ওয়াইফাই কানেকশন আছে, আমরা স্কুলে স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব করে দিচ্ছি।’
সবার হাতে মোবাইল ফোন ও ডিজিটাল প্রযুক্তির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই মোবাইল ফোন কে দিয়েছে? আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর।
‘আপনারা জানেন, বিএনপির আমলে একটা মোবাইল ফোনের দাম ছিল ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আর ফোন করলে প্রতি মিনিট ১০ টাকা, ধরলেও ১০ টাকা, তাও একটা কোম্পানি, ঢাকা আর চট্টগ্রাম, বিএনপির এক মন্ত্রী তার ব্যবসা। আওয়ামী লীগ আসার পর এটাকে সর্বজনীন করে গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছি।’
নদী ভাঙন থেকে ফরিদপুর, শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন এলাকাকে রক্ষা করার জন্য ইতোমধ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছুর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।’