নিজস্ব প্রতিবেদক »
আগামীকাল মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রায় দেড় বছর ধরে অলস পড়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরে নবনির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল। দেশি না কি বিদেশি অপারেটর পরিচালনা করবে এই জটিলতায় আটকে ছিল। অবশেষে এই দীর্ঘসূত্রতার অবসান হয়েছে।
চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি), নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) পর চট্টগ্রাম বন্দরের তৃতীয় কনটেইনার টার্মিনাল হিসেবে যাত্রা শুরু করছে এ পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)।
জেদ্দাভিত্তিক সৌদি কনটোইনার টার্মিনাল ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের আধুনিকীকরণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন করবে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ ২২ বছরের জন্য সৌদি প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে চুক্তির প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় জি-টু-জি-র মাধ্যমে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান টার্মিনালটি পরিচালনা করবে। টার্মিনাল ব্যবহারের সবধরনের যন্ত্রপাতি সৌদি প্রতিষ্ঠানই আনবে। চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি কোনো অপারেটর প্রথমবারের মতো অপারেশনের দায়িত্ব পাচ্ছে।
স্বাধীনতার পর সমুদ্রগামী জাহাজ ভেড়ানোর দুটি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। তিন দশক আগে নির্মিত চট্টগ্রাম বন্দরের চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনালের (সিসিটি) নির্মাণকাজ করেছে ইউরোপীয় একটি প্রতিষ্ঠান। আর সর্বশেষ ২০০৭ সালে এ বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল নির্মাণ করেছে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি।
পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের পূর্ত কাজের দায়িত্ব ছিল সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের। সেনাবাহিনী পূর্ত কাজের জন্য নিয়োগ দেয় দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। জেটি নির্মাণের জন্য দেশীয় প্রতিষ্ঠান ই–ইঞ্জিনিয়ারিংকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এটি বন্দরের টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। ইয়ার্ডসহ অন্যান্য কাজেও দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করা হয়েছে। টার্মিনাল নির্মাণের বিস্তারিত নকশা ও পরামর্শক ছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ টার্মিনালের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হয় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে। ২০১৯ সালে এই কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে প্রকল্প এলাকায় সরকারি–বেসরকারি স্থাপনা স্থানান্তরসহ নানা জটিলতায় নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে।
নতুন টার্মিনালের ৫৮৪ মিটার লম্বা জেটিতে একসঙ্গে ৩টি কনটেইনার জাহাজ ভেড়ানো যাবে। এ টার্মিনালের মাধ্যমে বছরে জাহাজ থেকে পাঁচ লাখ আমদানি–রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার ওঠানো–নামানো সম্ভব হবে। এ ছাড়া ২০৪ মিটার লম্বা ডলফিন জেটিতে তেল পরিবহনকারী একটি জাহাজ ভেড়ানো যাবে। তিন জেটির এই কনটেইনার টার্মিনাল পুরোদমে চালু হলে বন্দরে একসঙ্গে ১৪–১৫টি কনটেইনার জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের মূল অংশ থেকে ভাটির দিকে বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলী নদীর মোহনায় ড্রাইডক ও বোটক্লাবের মাঝে ২৬ একর জায়গাজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল। বহির্নোঙ্গরে আসা মাদার ভ্যাসেলকে চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটিতে পৌঁছাতে ১২ নটিক্যাল মাইল অতিক্রম করতে হয়। কিন্তু পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে পৌঁছাতে অতিক্রম করতে হবে ৬ নটিক্যাল মাইল।
এ টার্মিনাল চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দর ১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের (পানির নিচে জাহাজের গভীরতা) জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা অর্জন করবে।