সুপ্রভাত ডেস্ক »
ছোট লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই পথ হারায় বাংলাদেশ। বরাবরের মতো ব্যর্থ হয়েছে টপ অর্ডার। সেই ব্যর্থতার মিছিলে যোগ দিয়েছেন মিডল অর্ডার ব্যাটাররাও। ফলাফল— বড় হার। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৮৭ রানের হারে সেমির স্বপ্ন কাগজে-কলমে টিকে থাকলেও বাস্তবে শেষই বলা যায়!
শনিবার কলকাতায় টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৫০ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২২৯ রান সংগ্রহ করে নেদারল্যান্ডস। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৮ রান এসেছে এডওয়ার্ডসের ব্যাট থেকে। বাংলাদেশের হয়ে ২ টি করে উইকেট শিকার করেছেন মুস্তাফিজ, শরিফুল ও তাসকিন। জবাবে খেলতে নেমে ৪২ ওভার ২ বলে ১৪২ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। টাইগারদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেছেন মিরাজ।
শুরুতেই বাংলাদেশকে চেপে ধরে নেদারল্যান্ডস। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বোলিংয়ে ছিলেন আরিয়ান দত্ত। এই স্পিনারের গুড লেন্থের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে টপ-এজ হয় লিটনের। লেগ স্লিপের দিকে খানিকটা সরে এসে সহজ ক্যাচ নিয়েছেন এডওয়ার্ডস। সাজঘরে ফেরার আগে ১২ বলে ৩ রান করেছেন লিটন।
পরের ওভারেই ফিরেছেন আরেক ওপেনার তানজিদ তামিম। তার আউটের ধরন ছিল আরো দৃষ্টিকটু। অফ স্টাম্পের বাইরে পরে লাফিয়ে উঠা বল টেনে পুল করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন। ৩ চারে তামিম করেছেন ১৫ রান।
দুই ওপেনারকে হারিয়ে দল যখন ধুঁকছে তখন বিপদ আরো বাড়ান নাজমুল হোসেন শান্ত। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে ঠিকমতো টাইমিং করতে পারেননি। প্রথম স্লিপে খানিকটা ডানদিকে সরে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন ফন ভ্যাক। ৯ রান করে শান্ত ফেরায় দলীয় ফিফটির আগেই টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারালো বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপের শুরু থেকেই অফফর্মে সাকিব আল হাসান। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন তিনি। ছন্দে ফিরতে দিন দুয়েক আগেই দেশে ফিরে তার ছোট বেলার কোচের পরামর্শ নিয়েছেন। এতকিছুর পরও ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে পারছেন না তিনি। ফন ম্যাকারানের রাইজিং বলে ব্যাট চালিয়ে উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৫ রান। খবর ঢাকাপোস্ট।
সাকিব ফেরার চার বল পরই ফিরলেন মেহেদি মিরাজও। বাকিদের আসা-যাওয়ার মধ্যে একও প্রান্তে সাবলীল ছিলেন মিরাজ। হাঁটছিলেন ফিফটির পথে। তবে বাস ডি লিডি থামালেন এই ব্যাটারকে। খানিকটা খাটো লেন্থের বলে কাট করতে গিয়ে মিরাজের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল গেছে উইকেটকিপারের হাতে। সাজঘরে ফেরার আগে মিরাজের করেছেন ৪০ বলে ৩৫ রান।
মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন শেখ মেহেদি। কিন্তু সেটাও ভাঙলো রান আউটে। মাহেদি ফিরেছেন ৩৮ বলে ১৭ রান করে। বাংলাদেশের শেষ স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে উইকেটে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ডি লিডিকে বড় শট খেলতে গিয়ে আরিয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। ২০ রান করে রিয়াদ ফেরায় বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন সেখানেই কার্যত শেষ হয়।
এরপর মুস্তাফিজ-তাসকিন বেশ কিছুক্ষণ উইকেটে ছিলেন। তবে সেটা কেবলই ব্যবধান কমিয়েছে। ডাচদের হয়ে ২৩ রানে ৪ উইকেট শিকার করে সেরা বোলার ফন ম্যাকারেন।
এর আগে নতুন বলে দুর্দান্ত শুরু করে বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে আক্রমণে এসেই উইকেটের দেখা পান তাসকিন। এই ডানহাতি পেসারের লেগ স্টাম্পের ওপরে করা ফুল লেংথের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে মিড অফে সহজ ক্যাচ দেন বিক্রমজিত সিং। সাকিবের হাতে ধরা পড়ার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৩ রান।
পরের ওভারে আরেক ওপেনারকে ফিরিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। অফ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে বের হয়ে যাওয়া বলে খোঁচা মারতে গিয়ে ধরা পড়েন ম্যাক্সও’ডাউড। প্রথম স্লিপে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছেন তানজিদ তামিম। দ্রুত দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে শুরুতেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ।
দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর তৃতীয় উইকেট জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল নেদারল্যান্ডস। তবে ৪১ রান করে ওয়েসলি বারোসি ফেরায় ভাঙে ৫৯ রানের জুটি। মুস্তাফিজকে উড়িয়ে মারতি গিয়ে টপ এডজে বল সোজা ওপরে উঠে যায়, সহজ ক্যাচ নেন সাকিব।
উইকেটে এসে বেশ সতর্ক ছিলেন কলিন অ্যাকারম্যান। বাড়তি কোনো ঝুঁকি নিতে চাননি। তবে সাকিবকে সুইপ করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন তিনি। শর্ট-ফাইনলেগে মুস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৫ রান।
৬৩ রানে টপ অর্ডারের চার ব্যাটারকে হারিয়ে ধুঁকছিল ডাচরা। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করছেন এডওয়ার্ডস। তাকে ভালোই সঙ্গ দিচ্ছিলেন বাস ডি লিডি। তবে উইকেটে থিতু হয়ে ফিরেছেন লিডি। তাসকিনের ব্যক অব লেন্থের বল কাট করতে গিয়ে উইকেট পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন। তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৭ রান।
টপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনে শুরু থেকেই সাবলীল ছিলেন স্কট এডওয়ার্ডস। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার এক প্রান্ত আগলে রেখে খেলেছেন। তবে ৪৫তম ওভারে রানের গতি বাড়াতে গিয়ে আউট হয়েছেন। মুস্তাফিজের বলে মিরাজের হাতে ধরা পড়ার আগে ৬৮ রান করেছেন তিনি।
শেষদিকে লগান ফন বেকের ১৬ বলে ২৩ রানের ইনিংসে ভর করে ২২৯ রানের পুঁজি পায় ডাচরা। বাংলাদেশের হয়ে ২ টি করে উইকেট শিকার করেছেন মুস্তাফিজ, শরিফুল ও তাসকিন।