রতন কুমার তুরী »
সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে বেড়েছে চাল এবং আলুসহ বেশকিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য। পেঁয়াজ-রসুনের কথা বাদই দিলাম, এগুলো পার্শ্ববর্তী দেশ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে বলে বেড়েছে, কিন্তু চাল এবং আলুর মূল্য বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত এবং নি¤œবিত্তরা কষ্ট পাচ্ছে খুব বেশি। চালের বাজার মূল্য আগে একধাপ বাড়ার পর সাম্প্রতিক আরেক দফা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে সবজির বাজারও বেশ চড়া। সবমিলিয়ে কোভিক১৯ পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণের মধ্যে নাভিশ্বাস উঠেছে। উত্তরবঙ্গে এখনও বন্যা লেগে থাকায় সবজির বাজার চড়া বলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানালেও চাল এবং আলুর বাজার মূল্য কেনো ঊর্ধগতি তার কোনো যুৎসই জবাব মিলছে না। মাঝে মাঝে পাইকারি চালের আড়তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযান চালাতে দেখা গেলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। এমতাবস্থায় কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকার এবং স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রকৃতপক্ষে সবজির মধ্যে আলুই হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের প্রধানতম খাদ্য। বর্তমান আলুর মূল্য অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় জনগণকে দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। আগের দামের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বিক্রি হচ্ছে কয়েকদিন থেকে।
এক সময় বলা হত ‘বেশি করে আলু খান, ভাতের ওপর চাপ কমান’ বর্তমানে আলুর বাজার মূল্য চালের চাইতেও বেশি হওয়ায় সে আপ্তবাক্য আর ধোপে টিকছে না। আলুর মূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতি পূর্বে পরিলক্ষিত হয়নি। নতুন দেশী আলু বাজারে না আসা পর্যন্ত সবসময় মানুষ বাজার থেকে আলু কিনেছে কেজি প্রতি সর্বোচ্চ ২৫ টাকায়। বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। কেজি প্রতি আলুর দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় জনগণের ওপর চাপ পড়েছে।
প্রয়োজন হলে টিসিবির মাধ্যমে খোলা বাজারে ন্যায্য দামে আলু বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।
বাজারে বর্তমানে অন্যান্য সবজিরও দাম ও অগ্নিমূল্য তবুও আলু যেহেতু মানুষ সারা বছর খায় সেহেতু আলুর মূল্য সর্বপ্রথম নিয়ন্ত্রণে আনা উচিৎ। অন্যান্য সবজি সময় হলেই এমনিতেই দাম কমে যাবে। অপরদিকে বিগত কয়েক মাসে কয়েক দফা নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মধ্যবিত্ত এবং নি¤œবিত্তদের জীবনে নেমে এসেছে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন। কেজিপ্রতি ৩৬ টাকার মোটা চাল বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। চালের এমন বাজার দর দেখে অনেক মানুষই হতাশা প্রকাশ করেছেন।
অনেকে প্রশ্ন করেছেন, নিদারুণ কোভিড সংকটের প্রথম দিকে সরকার চালসহ সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কঠোর নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলো, এখন কেনো পারছে না ?
অনেক সময় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী বেশি পরিমাণে কিনে গুদামজাত করে রাখার ফলে বাজারে এসব দ্রব্যসামগ্রীর সরবরাহ কমে গিয়ে মূল্য বেড়ে যায়।
অতীতেও এমন হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এদের গুটিকয়েককে শাস্তিও দিয়েছে কিন্তু এদের সমূলে উৎপাটন করা সম্ভব হয়নি ফলে এরা মাঝে মাঝে বাজার অস্থির করে তোলে। বর্তমান সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিশেষ আলুর বাজার মূল্য সরকার ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও এই মূল্য কেউ মানছে না, বাড়তি মূল্যেই আলু কিনতে হচ্ছে। অন্যদিকে চালের বাজার মূল্য অত্যধিক বেড়ে গেলেও এখনো খোলা বাজারে টিসিবি কর্তৃক চাল বিক্রি অব্যাহত থাকায় কিছু মানুষ সামান্য স্বস্তি পাচ্ছে। তবে চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের পদক্ষেপ প্রয়োজন।
প্রকৃতপক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অকারণে ঊর্ধগতি রুখতে বড় বড় বাজারে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনিটরিং করার বিকল্প নেই। দ্রব্যের অকারণে মূল্য বৃদ্ধি ঘটালে কঠোর শাস্তিরও ব্যবস্থা করতে হবে। শুধুমাত্র ধরলাম আর জরিমানা দিয়ে বেরিয়ে গেলো, তাহলে এদের দৌরাত্ম্য কমানো সম্ভব হবে না। সর্বোপরি অসাধু মজুদদারদের কঠোর নজরদারিতে আনতে হবে এবং তাদের আইনের আওতা এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে নিয়ন্ত্রণ কিংবা প্রশাসনের অভিযান খুব একটা ফল দেয় না। আমরা তার দৃষ্টান্ত বাজারে দেখতে পাচ্ছি। সরবরাহ এবং বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আগে থেকেই মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নিতে হবে। সময়মতো আমদানি, মজুদ ঠিকমতো রাখতে পারলে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি সফল হবে না। মোট কথা, সবসময় বাজার পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে এবং যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক