নিজস্ব প্রতিবেদক »
চলতি মাসে আরেকদফা গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পর থেকেই দিন দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। চাল, ডাল, আটা-ময়দা, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, রসুন, চিনি, মুরগি, ডিম সবকিছুর দামই বাড়তি।
গত ৯ দিনের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। বাজারে কিছু পণ্যের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিলেও বাস্তবে সবকিছুর দাম বেড়েছে অনেক বেশি। নিত্যপণ্যের এই বাড়তি দরে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে স্বল্প আয়ের মানুষ।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জরিপে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে সকল ধরনের চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৭ শতাংশ। আটার দাম (খোলা ও প্যাকেট মানভেদে) বেড়েছে ৩৬ থেকে ৬৮ শতাংশ। পাম অয়েলের দাম একটু কমলেও সকল ধরনের ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে ৭ থেকে ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে শুকনা মরিচ ও এলাচের দাম একটু কমলেও সকল ধরনের মসলাজাত পণ্যের দাম বেড়েছে। তাছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের। সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগিতে কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা ও লেয়ার মুরগির ডিম ডজনপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে।
রেয়াজউদ্দিন বাজারে আসা রফিকুল আনোয়ার নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘এমনিতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তি, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গ্যাস ও বিদ্যুৎ। তার মধ্যে এসবের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারে। এতে সামগ্রিকভাবে জীবযাত্রার ব্যয় বহুলাংশে বেড়ে যাবে। পরিবহনের পাশাপাশি পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এতে দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী বড় ধরনের চাপের মুখে পড়বে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর খাতুনগঞ্জ, বক্সিরহাট ও রিয়াজউদ্দিন বাজারে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে সরু চাল নাজিরশাইল/মিনিকেট (মানভেদে) ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা, মাঝারি মানের চাল পাইজাম/লতা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা ও মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মাঝে কয়েক সপ্তাহ আটা, ময়দার দাম কিছুটা কমলেও এ দুটি পণ্যের দামও গত দু’দিনে কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে।
গতকাল বাজারে খোলা সাদা আটা কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ৬২ থেকে ৬৫ টাকা, খোলা ময়দা কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা ও প্যাকেট ময়দা ৩ টাকা বেড়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাম অয়েলের দাম কেজিপ্রতি ৪ টাকা কমলেও বেড়েছে ভোজ্যতেল সয়াবিনের দাম। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলে ১০ থেকে ১৪ টাকা বেড়ে ৮৭০ থেকে ৮৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিনে ৫ টাকা বেড়ে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমদানি সংকটের ইস্যুতে বেড়েই চলছে শুকনা মরিচ, আদা ও রসুনের দাম। এতে ভারতের (কেরালা) ও মায়ানমারের আদা ও রসুন কিছু আড়তে দেখা গেলেও চায়না আদা ও রসুনের সংকট রয়েছে।
গতকাল খাতুনগঞ্জের বাজারে প্রতি কেজি ভারতীয় আদা ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, দেশি আদা ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও আমদানি সংকটের কারণে চায়না আদা ও রসুন বাজারে তেমন দেখা যায়নি।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘আমদানি সংকটের কারণে চায়নার আদা ও রসুন এখনো বাজারে আসেনি। দেশি ও ভারতীয় আদার প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। চায়নার আদা বাজারে আসলে দাম আরও কমে যাবে।’
তাছাড়া প্রশাসন চিনির বাজারে তদারকি করলেও সরকারের নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি করছে না খাতুনগঞ্জ ও রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি ও খুচরা দোকানগুলোতে। গতকাল প্রতি কেজি চিনি ১১০ থেকে ১১৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
তবে গত নয় দিনের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ৬০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গতকাল বিক্রি হয়েছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা কেজিতে। আর সোনালি মুরগি ৭০ টাকা বেড়ে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা। দেশি মুরগি ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তাছাড়া গরুর মাংস (হাড়ছাড়া) কেজিপ্রতি ৮০০ এবং খাসির মাংস ১১০০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে।
বক্সিরহাটে মুরগি কিনতে আসা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আগামীকাল (শুক্রবার) মেহমান আসবে তাই মুরগি কিনতে আসা। ১০ দিন আগে মুরগি কিনেছিলাম কেজিপ্রতি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। আজকের (বৃহস্পতিবার) বাজারে দোকানিরা ২২০ টাকা বলছে। ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়। আমাদের মতো সাধারণদের কেনার সার্মথ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে সবকিছু। প্রশাসনের মুরগি ও ডিমের বাজার তদারকি করা প্রয়োজন বলে মনে করছি।’
বক্সিরহাটের ব্রয়লার মুরগি বিক্রেতা আবদুস সালাম বলেন, ‘ফার্ম থেকে মুরগি না আসলে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা মধ্যস্বত্ত্ব কারবারিদের থেকে বেশি দামে কিনছি তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
রিয়াজউদ্দিন বাজারের রশিদ পোল্ট্রির মালিক জহিরুল আলম বলেন, ‘আমাদের চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। তাছাড়া ফার্ম মালিকদের কাছে এখন মুরগি পর্যাপ্ত নেই। ফলে একটু বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
বক্সিরহাটের ডিম বিক্রেতা হারুন মিয়া বলেন, ‘আমরা পাহাড়তলী আড়ত থেকে ডিম কিনেছি হাজারে ৯ হাজার ৮০০ টাকা। মাত্র কয়েক টাকা লাভে বিক্রি করছি। তার মধ্যে নষ্ট ডিমও থাকে।’
সপ্তাহের ব্যবধানে সবধরনের মাছ ও শাকসবজির দাম অনেকটা স্থিতিশীল। গতকাল রিয়াজউদ্দিন বাজারে মাঝারি সাইজের পাবদা ৩৫০ টাকা, পোয়া ৩৫০ টাকা, চিতল ৪৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া সাগরের কোরাল (সাইজভেদে) ৩৫০ থেকে ৭০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। চাষের তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা, কাতলা ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা, চিংড়ি ৫৮০ থেকে ৭৫০ টাকা, শোল ৫৫০ টাকা, টাকি ৪০০ টাকা, শিং ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে সবজির দামও অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি মিষ্টিকুমড়া বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা, শিম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, শালগম ১৮ থেকে ২০ টাকা, মুলা ১৫ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, শিমের বিচি ৮০ টাকা, শশা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, টমেটো ২০ থেকে ২৫ টাকা, বেগুন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতিকেজি ফুলকপি ১২ থেকে ১৫ টাকা, বাঁধাকপি ১৮ থেকে ২০ টাকা, লাউ ২০ থেকে ২৫ টাকা। কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়।