পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠানে বক্তারা
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে ৬৪ জেলার মত গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম প্রান্ত থেকে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে জেলা প্রশাসন বর্ণাঢ্য কর্মসূচির আয়োজন করেন।
সকাল সাড়ে ৮টা থেকে আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ছিল সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে আলোচনা সভা, পদ্মা সেতু উদ্বোধন পরবর্তী জেলা শিল্পকলা-শিশু একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনায় নৃত্যসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কনসার্ট ও বর্ণিল আতশবাজি ডিসপ্লে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মো. বদিউল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, জেলা পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোবারক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, র্যাব-৭ এর অধিনায়ক কর্নেল ইউসুফ, একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি আবুল মোমেন চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহাবুবুল আলম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমান, নগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমেদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার একেএম সরওয়ার কামাল দুলু, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান, উইম্যান চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবিদা মুস্তফা প্রমুখ। সরকারের বিভিন্ন স্তরে কর্মরত পদস্থ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এনজিও প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। আলোচনা সভা শেষে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রান্ত থেকে বেলুন উড়ানো হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বিশে^র ইতিহাসে স্থান করে নেওয়া বাঙালির আত্ম-প্রত্যয়ের, আত্ম-প্রকাশের, আত্ম-মর্যাদার, আত্ম-সক্ষমতার একটি চিরঞ্জীব মহাকাব্য। নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারায় বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে সম্মানিত। এদেশের মানুষের একটা ধারণা ছিল অন্যের অর্থায়ন ছাড়া কিছুই করতে পারব না। এই বদনাম ঘুচিয়ে এখন গৌরবের অংশীদার। সেই গৌরব ও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে চট্টগ্রামও। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে নানা আয়োজনের পাশাপাশি বড় পর্দায় মানুষকে দেখানোর ব্যবস্থা করেছে জেলা প্রশাসন।
শুধু জিমনেসিয়ামে নয়-নগরীর বেশ কয়েকটি স্থানে বড় পর্দায় উদ্বোধন অনুষ্ঠান দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। প্রশাসনের পাশাপাশি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখানোর ব্যবস্থা করেছে বেশ কয়েকটি স্থানে। পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে সরকারি সব ভবনে ঝলমলে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। এদিকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে শুরু হয় কনসার্ট। বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যান্ড আর্টসেল, জনপ্রিয় ব্যান্ড দল তীরন্দাজ, নাটাই, সাসটেইন, খ্যাতনামা শিল্পী বৃষ্টি মির্জা ও প্রমি কনসার্টে অংশ নেন। কনসার্টে উপস্থাপনায় ছিলেন আঁখি মজুমদার। কনসার্ট শেষে বর্ণিল আতশবাজি ডিসপ্লে করা হয়।
উত্তাল পদ্মাকে পোষ মানানো স্বপ্নের পদ্মা সেতু শুধুমাত্র একটি স্টিল ও কংক্রিটের ৪১টি পিলার এবং ৪২টি স্পেনের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে থাকা দ্বিতল বহুমুখী সেতু নয়। এতে জড়িয়ে রয়েছে ষোলো কোটি কৃষক, শ্রমিক ও রেমিট্যান্স যোদ্ধার ঘাম এবং বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। প্রমত্তা পদ্মার উত্তাল ঢেউয়ের ভাঁজে ভাঁজে ম্লান আছে বৃদ্ধ পিতা-মাতা, সন্তানসহ স্বজন হাড়ানোর কত না হাহাকার ও আত্মাহুতির গল্প। শনিবার এই মাহেন্দ্রক্ষণে দক্ষিণ-পঞ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা শুধু নয়, বাংলার ৬৪ জেলার ১৬ কোটি বাঙালির হৃদয়ে মেলবন্ধনের উৎসব ‘পদ্মা সেতু’র এ উদ্বোধন। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।