সুপ্রভাত ডেস্ক >>
নিখিলের সঙ্গে তার সম্পর্কের নিরিখে অবশেষে মুখ খুললেন নুসরাত। তুরস্কে বিয়ে হয়েছিল তাদের। সেই প্রসঙ্গ টেনে নুসরাত জানালেন, তুরস্কের বিবাহ আইন অনুসারে এই অনুষ্ঠান অবৈধ। উপরন্তু হিন্দু-মুসলিম বিবাহের ক্ষেত্রে বিশেষ বিবাহ আইন অনুসারে বিয়ে করা উচিত। যা এ ক্ষেত্রে মানা হয়নি। ফলত, এটা বিয়েই নয়। বুধবার একটি বিবৃতি জারি করে নিজের যুক্তি প্রকাশ্যে আনলেন অভিনেত্রী ও সাংসদ নুসরত জাহান। তিনি বললেন, ‘নিখিলের সঙ্গে আমি সহবাস করেছি। বিয়ে নয়। ফলে বিবাহ-বিচ্ছেদের প্রশ্নই ওঠে না।
মা হবেন নুসরাত। অনাগত সন্তানের পিতৃপরিচয় কী? গত ৫ দিন ধরে অভিনেত্রী এবং সাংসদ নুসরত জাহানকে নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। শুধু তাই নয়, নিখিলের সঙ্গে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে না কেন, এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে চার দিক থেকে। এমনকি লেখিকা তসলিমা নাসরিনও নুসরতের নীরবতা নিয়ে কথা বলেছিলেন নেটমাধ্যমে। লিখেছিলেন, ‘…এই যদি পরিস্থিতি হয়, তবে নিখিল আর নুসরতের ডিভোর্স হয়ে যাওয়াই কি ভালো নয়? অচল কোনও সম্পর্ক বাদুড়ের মতো ঝুলিয়ে রাখার কোনও মানে হয় না। এতে দু’পক্ষেরই অস্বস্তি।
দু’দিন আগে নিখিল জানিয়েছিলেন, নুসরতের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা দায়ের করেছেন তিনি। নিখিলের কথায়, ‘‘যে দিন জানলাম, নুসরাত আমার সঙ্গে থাকতে চায় না, অন্য কারও সঙ্গে থাকতে চায়, সে দিনই দেওয়ানি মামলা দায়ের করেছি আমি। নুসারতের মা হওয়ার পরে এই সিদ্ধান্ত নিইনি আমি।’’ এমনকি আগামী জুলাই মাসে যে আদালতে এই মামলার শুনানি, নিখিল সে কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন।
বিবৃতি জারি করেই বুধবার নিজের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে নুসরাত লিখেছেন, ‘যে মহিলা সব শুনেও নীরব থাকেন, এ রকম পরিচয়ে পরিচিত হব না আমি। তার বিরুদ্ধে উঠে আসা অসংখ্য বিরোধী স্বরের মুখোমুখি হলেন নায়িকা।
নিখিল বললেন, ‘আদালতে দেখা হবে’
৬ মাসের ব্যবধান। মুখোমুখি হন না তাঁরা। নুসরাত জাহান, নিখিল জৈন। এক সময়ে যাঁদের ইনস্টাগ্রাম ভরে থাকত ‘দাম্পত্য’-এর প্রতি মুহূর্তের ছবিতে। সরাসরি তরজায় নামলেন অভিনেত্রী এবং তাঁর প্রাক্তন ‘সহবাস সঙ্গী’। নিখিল জানিয়েছিলেন, ‘‘যে দিন জানলাম, নুসরত আমার সঙ্গে থাকতে চায় না, অন্য কারও সঙ্গে থাকতে চায়, সে দিনই দেওয়ানি মামলা দায়ের করেছি আমি। যেহেতু ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন হয়নি তাই অ্যানালমেন্টের মাধ্যমে আলাদা হব।আগামী জুলাই মাসে আদালতে এই মামলার শুনানি বলে জানিয়েছিলেন নিখিল। এই প্রসঙ্গে নুসরাত বললেন, ‘আমি আর নিখিল সহবাস করেছি। আইনের চোখে এটা বিয়েই নয়। ফলে বিচ্ছেদের প্রশ্নই ওঠে না। এর মাধ্যমে অভিনেত্রী ও সাংসদ বুঝিয়ে দিলেন, আদালতে গিয়ে আলাদা করে বৈবাহিক সম্পর্ক ছেদ করার নিয়ম পালনের প্রয়োজন অনুভব করছেন না তিনি।
নিখিল জানিয়েছিলেন, নুসরাতের বোন নুজহতের পড়াশোনার খরচ অনেক সময়েই তাকে বহন করতে হয়েছে। এমনকি নুসরাতের পরিবারকে নিজের পরিবার মনে করে অনেক সাহায্য করেছেন নিখিল। এর পাশাপাশি তিনি বলেছিলেন, নুসরাত বহু দিন ধরে আমার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছে।’’ নিখিলের এই বক্তব্যকে সরাসরি নস্যাৎ করে দিয়ে নুসরাত জানিয়েছেন, ‘আমি বরাবর আমার বোনের পড়াশোনার এবং পরিবারের সমস্ত খরচ একা হাতে বহন করেছি। যে ব্যক্তির সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্কই নেই, কেনই বা তার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে যাব আমি? অভিযোগ তুললে প্রমাণ দিতে হবে। আর্থিক লেনদেনের প্রসঙ্গে নুসরাত আরও জানান, তার সমস্ত পারিবারিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য নিখিলের পরামর্শে তিনি নিখিলের দায়িত্বেই রেখেছিলেন। তার পরিবারের কেউই জানতেন না, নিখিল সেই অ্যাকাউন্টগুলি নিয়ে কী করছেন। ব্যাঙ্ক তাদের অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে কোনও নির্দেশ দিলে, সে তথ্য তাদের কাছে পৌঁছোত না। নুসরত জানান, তাঁর অনুমতি ছাড়াই তার বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে রাখা টাকাপয়সা বেআইনি ভাবে ব্যবহার করতেন নিখিল। এই বিষয়ে ব্যাঙ্কের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে তার টাকা অপব্যবহারের সমস্ত প্রমাণ খুব তাড়াতাড়ি সামনে আনবেন বলে জানিয়েছেন অভিনেত্রী।
নুসরাত প্রশ্ন তুলেছেন, নিজেকে ‘ধনী’ বলে জাহির করা ব্যক্তি কেন মধ্য রাতে নুসরাতের অ্যাকাউন্ট থেকে বেআইনি ভাবে টাকা তোলে? কারও নাম না করে নুসরাত বললেন, ‘যে মানুষ দাবি করছেন ‘ধনী’ বলে আমি তাকে ব্যবহার করেছি, আমাদের বিচ্ছেদের পরেও তাকে কেন লুকিয়ে আমার টাকা ব্যবহার করতে হয়?’ নুসরাত যে এই বিষয়ে সরাসরি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাবেন, তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিবৃতিতে।
নুসরাতের বিবৃতি থেকে জানা গিয়েছে, অভিনেত্রীর সমস্ত গয়নাগাটি, ব্যক্তিগত সম্পত্তি এখনও ‘তাদের’ কাছে আছে। নাম না করেই নিখিল ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেন তিনি। নুসরাতকে তার বাবা মা, বন্ধুবান্ধব যা যা উপহার দিয়েছিলেন, সেগুলি নিজের কাছে নিয়ে আসতে পারেননি এখনও।
নিখিলের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু জানিয়েছিলেন, বেশ অনেক দিন আগে নুসরাত গোয়ায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। নিখিলই বিমানের টিকিট ও রিসোর্ট বুক করে দিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গ তুলে নুসরাত বললেন, ‘আমি কোথাও বেড়াতে বা পেশাগত কারণে গেলে, তার খরচ নিজেই বহন করি। কেউ এক জন দাবি করেছেন, আমার ভ্রমণের খরচ অন্য কেউ দেয়, সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যে’।
ধনী’ বলেই এক জন একা মহিলাকে যেমন খুশি বলা যায়, তাকে ছোট করা যায়, এ রকম অধিকার কেউ দেয়নি কাউকে। নুসরাত জানিয়েছেন, তিনি যথেষ্ট পরিশ্রম করে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন। নুসরাতের কথায়, ‘এই সাফল্য সম্পূর্ণ আমার নিজের। এই সাফল্যের আলোয় আমি কাউকে আলোকিত হতে দেব না।
অভিনেত্রীর দাবি, এর আগে তিনি কোনও দিন নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে সামনে আনেননি। এমন কোনও ব্যক্তিকে নিয়ে তিনি কথাও বলতে চান না, যে তার জীবনের অংশই নয়। তার বিশ্বাস, যারা ‘সাধারণ মানুষ, তারা এমন কোনও বিষয় নিয়ে চর্চা করেন না, যেখানে তারা জড়িত নন।
কোনও কিছুই নজর এড়িয়ে যায়নি নুসরতের। নিখিল সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময়ে নিজেকে ‘সাধারণ মানুষ’ বলে দাবি করেছিলেন। সেই সূত্র টেনে এনে নুসরাত বললেন, তাঁকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপমান করে যে ‘সাধারণ মানুষ’ নিজে ‘নায়ক’ হয়ে উঠতে চাইছে, তাকে যেন সংবাদমাধ্যম আর গুরুত্ব না দেয়।