নদী হত্যা বন্ধে কঠোর না হলে বড় বিপর্যয় ঘটবে

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের নদ-নদী, সংজ্ঞা ও সংখ্যা’ শীর্ষক বইয়ের তথ্যমতে বাংলাদেশে বর্তমানে মোট নদীর সংখ্যা ১০০৮টি। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড হতে আরো নদীর সংখ্যা পাওয়া গেছে। বর্তমানে জেলা প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে বাংলাদেশে ৯৩১টি নদী প্রবহমান রয়েছে। এরমধ্যে ৩০৮টি নদী নাব্যতা হারিয়েছে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি সংসদ অধিবেশনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই তথ্য দেন।
এসময় তিনি জানান, নাব্যতাহীন নদীগুলোর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৮৫, রংপুর বিভাগে ৭১, রাজশাহী বিভাগে ১৮, বরিশাল বিভাগ শূন্য, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১, সিলেট বিভাগে ১০, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৬ এবং খুলনা বিভাগে ৮৭টি নদী রয়েছে।
মানবসভ্যতার ইতিহাসে নদীর ভূমিকা বড় অংশ জুড়ে আছে। আদিকাল থেকে মানববসতি ও সভ্যতা গড়ে উঠেছে নদীকে কেন্দ্র করে। এই নদী মানুষের তৃষ্ণার পানি যুগিয়েছে, কৃষিকাজ থেকে শুরু করে প্রাত্যহিক কাজে পানির জোগান দিয়েছে। মাছের মধ্য দিয়ে আমিষের জোগান দিয়েছে। কিন্তু সে নদীকে দখলে-দূষণে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে মানুষই।
ঢাকার কাছে তুরাগ নদকে দখল ও দূষণ থেকে বাঁচানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছিলো পরিবেশবাদী একটি সংগঠন। এ প্রেক্ষিতে দেয়া আদেশে হাইকোর্ট তুরাগ নদকে ‘জীবন্ত সত্তা (লিভিং এনটিটি)’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
সে রিটের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ সে সময় বলছিলেন, আদালতের ঘোষণা অনুযায়ী তুরাগসহ নদ-নদীগুলো এখন থেকে মানুষ বা প্রাণি যেমন কিছু আইনি অধিকার পায় তেমনি অধিকার পাবে। নদীর কিছু আইনি অধিকার তৈরি হবে এ রায়ের ফলে। ফলে নদী নিজেই তার ক্ষতির বা দখলের বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবে। তবে নদী তো আর নিজে যেতে পারবেনা। সেক্ষেত্রে কেউ তার প্রতিনিধি হয়ে ক্ষয়ক্ষতিগুলো আদালতকে জানালে তার প্রতিকার পাবে। আদালতের রায়ে আমাদের দেশের নদীগুলোকেও জীবন্ত সত্তা, জুরিসটিক পারসন বা লিগ্যাল পারসন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং মূলত এর মাধ্যমে মানুষের মত নদীর মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হল।’ এখন নদ-নদীর ক্ষতি করলে যে কেউ নদীর পক্ষে মামলা করতে পারবেন।
একই সংসদ সদস্যের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকার রাজধানীসহ দেশের নৌযোগাযোগ ব্যবস্থায় আধুনিকায়নের লক্ষ্যে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় মোট ৩৫টি এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে পাঁচটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক রাখতে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করার জন্য ৪৯১টি নদী খননের জন্য একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ ১৭৮টি নদী এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩১৩টি নদী খনন করবে। এরই মধ্যে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক নৌপথ খননের মাধ্যমে ৩ হাজার ৭৩৩ কিলোমিটার নৌপথ নাব্য করা হয়েছে। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২০২৪) ১৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ চলমান রয়েছে।
আমরা জানি সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ব্যর্থ হয়ে যায় সঠিক পরিকল্পনা ও তত্ত্ব¡াবধানের অভাবে। নদ-নদী খননের কাজটিও অনেক ব্যয়বহুল ও প্রযুক্তিনির্ভর। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত না হলে এ উদ্যোগও ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। তাই আশা করব এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি যেন না হয়।