যানবাহন চলাচল
নিজস্ব প্রতিবেদক <
সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলাচলে স্বস্তি ফিরেছে অফিসগামীদের। আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে লকডাউনের তৃতীয় দিন গতকাল বুধবার থেকে সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোতে গণপরিবহন চলাচলে অনুমতি দেয় সরকার। এর আগে সোমবার থেকে সারাদেশে ৭ দিনের লকডাউন কার্যকর হলেও গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকাতে দুর্ভোগে পড়ে অফিসগামীরা।
তবে বুধবার সীমিত আকারে গণপরিবহন চলাচল করলেও অধিকাংশ গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। অফিসের সময়ে পণপরিবহনগুলোতে ভিড় থাকলেও অন্যান্য সময়ে গণপরিবহন ছিল ফাঁকা।
সরেজমিনে সকাল ৯টার দিকে নগরীর বহদ্দারহাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অফিসগামীদের তুলনায় গণপরিবহন কম থাকায় হুড়ো হুড়ি করে যাত্রীদের গণপরিবহনে উঠতে দেখা যায়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ী চলাচলের নির্দেশ দেওয়া হলেও অফিসগামীদের ভিড়ে তাও মানছে না কেউ। কিছু কিছু গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেলেও কিছুদূর যেতে না যেতেই দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতে দেখা গেছে। চালক ও হেল্পারদের মাস্ক ব্যবহারের কথা থাকলেও অধিকাংশ হেল্পারের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। এছাড়া অধিকাংশ যানবাহনে ৬০ শতাংশের পরিবর্তে দ্বিগুণ ভাড়া নিতে দেখা গেছে। তবে অফিসের সময় পার হতেই দেখা মিলে ভিন্ন চিত্রের। রাস্তায় যাত্রী না থাকাতে বেলা ১১টার দিকে বেশিরভাগ পরিবহন ফাঁকা থাকতে দেখা গেছে। সেসময় যাত্রীদের চাপ না থাকাতে গণপরিবহনগুলো কিছুটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত আন্দরকিল্লাহ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকালে অফিস চলাকালীন যাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি লক্ষ্যণীয় না হলেও বেলা গড়াতেই দেখা মেলে ভিন্ন চিত্রের। বহদ্দারহাট থেকে নিউমার্কেটগামী বাস, টেম্পুসহ গণপরিবহনগুলোতে অফিস সময় ছাড়া বাকি সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা গেছে। তবে সন্ধ্যা গড়াতেই অফিস ছুটির সময় গাদাগাদি করে নেয়া হয়েছে যাত্রী। নির্ধারিত সিটে যাত্রী নিলেও দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন বহু লোক।
বেলা ১১টা। কর্মমুখী ও অফিসগামীরা। সীমিত গণ-পরিবহন। নিউমার্কেট মোড়ে কথা হয় এনজিও কর্মী তোহফাতুলের সাথে।
গণ-পরিবহন চালু হওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘গত দুইদিন অনেকদূর হেঁটে অফিসে গেছি। কিছুদূর হেঁটে, কিছু দূর রিকশায় যাতায়াত করেছি। দুইদিনে খরচ গেছে সাড়ে তিনশ থেকে চারশ টাকা। এভাবে হলে বেতনের টাকা থাকবেনা। আজকে একটু কষ্ট হলেও ভাল লেগেছে সীমিত আকারে পরিবহন চালু হওয়ায়।’
অন্যদিকে বিকাল ৫টার দিকে কথা হয় দেওয়ানহাট থেকে অলঙ্কারগামী যাত্রী সাফায়েত উল্লাহর সাথে। তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, টেম্পুতে ৬ জন যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানলেও পেছনে দাঁড়িয়ে ও ঝুলিয়ে নেওয়া হচ্ছে ২ থেকে ৩ জন যাত্রী। সাধারণ সময়ে ভাড়া নেওয়া হতো ১০ টাকা কিন্তু বর্তমানে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করে ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। তবে গত দুদিনের ভোগান্তির রেহায় মিলেছে।’ একই চিত্রের দেখা মিলে বহদ্দারহাট থেকে আগ্রাবাদ রুটেরও। তাছাড়া লকডাউনের প্রথম দুদিনের মতো নগরের প্রতিটি মোড়ে ছিল রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশার ভিড়। বর্ধিত ভাড়ায় চলছিল এসব পরিবহন। গণপরিবহন চালু হলেও বর্ধিত ভাড়ায় যাত্রীদের শত অভিযোগ।
গণপরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী ও বেশি ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক সুপ্রভাতকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী অর্ধেক আসনের চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। তবে কিছু কিছু পরিবহনে আসন সংখ্যার অর্ধেকের বেশি যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এসময় সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ও বেশি ভাড়া নেওয়ায় ৬ জন চালককে ৮ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’