নিজস্ব প্রতিবেদক :
এক দশক আগের কথা। চাঁদপুরের সিরিয়াল কিলার রসু খাঁ। নারীদের ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ পানিতে ভাসিয়ে দিত সে। এভাবে ১১ নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছিল সে। বিচারে তার ফাঁসি হয়েছিল।
চট্টগ্রামের বেলাল হোসেন দফাদারের (৩৯) সাথে যেন রসূ খা’র অন্তমিল। রসূ নারীদের ধর্ষণের পরে হত্যা করত। আর বেলাল দফাদার শিশুদের ধর্ষণ করে ছেড়ে দিত। পুলিশ সেই রসূ খা’র সাথে তুলনা করে বেলালকে সিরিয়াল ‘শিশু ধর্ষক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন । বুধবার গভীর রাতে বায়েজিদ বোস্তামি থানার শান্তিনগর আবাসিক এলাকায় পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে বেলাল।
সিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার পরিত্রাণ তালুকদার জানান, গ্রেফতারের পর শান্তিনগর আবাসিক এলাকার একটি পাহাড়ে বেলালের সহযোগীদের সঙ্গে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ হয়। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় বেলাল। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ অস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধার করেছে।
পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, বেলাল এক সময় থাকত বায়েজিদ এলাকায়। পরে সীতাকুণ্ড উপজেলার কালু শাহ মাজার এলাকায় ভাসমানভাবে বসবাস করত। এর আগে ২০১৬ সালে একাধিক শিশু ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিল বেলাল। সেসময় অনেক শিশুকে ধর্ষণের কথা পুলিশের কাছে স্বীকারও করেছিল সে। বায়েজিদ থানার সাবেক ওসি মো. মহসীন বেলালকে দ্বিতীয় রসু খা হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
বায়েজিদ থানার সাবেক ওসি (বতমানে কোতোয়ালী থানায় কর্মরত) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘বেলাল হোসেন দফাদার একজন সিরিয়াল শিশু ধর্ষক। গত কয়েকবছরে সে চকলেট ও টাকার লোভ দেখিয়ে অধশতাধিক শিশুকে ধর্ষণ করেছে। গ্রেফতারের পর সে এ কথা পুলিশের কাছে স্বীকারও করেছিল।
পুলিশ জানায়, বেলাল পেশায় ছিল সিএনজি অটোরিকশা চালক। কিন্তু আড়ালে সে শিশুদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালাত। শিশুদের ফুসলিয়ে চকলেট ও টাকার লোভ দেখিয়ে অটোরিকশাতে করে তুলে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়ে শিশুদের ধর্ষণ করত সে।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে গ্রেফতারের পর বেলাল জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছিল, ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বায়েজিদ আরেফিন নগর থেকে ৮ বছরের আরেকটি শিশুকে ফুসলিয়ে সে নগরের চকবাজার এমএম আলী সড়ক এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে একটি নালার ভেতর শিশুটিকে ধর্ষণ করে। পরে ওই শিশুটির পরিচয় বের করে পুলিশ। শিশুটির পরিবার বেলালের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করে। পুলিশ জানায়, বেলাল শুধু শিশু ‘ধর্ষক’ নয়, সে ছিল একজন মাদক বিক্রেতা। তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে খুলশী থানায় মামলা আছে।
বেলাল পুলিশকে জানায়, ‘লাকড়ি, চকলেট ও টাকার লোভ দেখিয়ে সে বিভিন্ন জায়গা থেকে শিশুদের তার অটোরিকশায় তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করত। ধর্ষণ শেষে আবার অটোরিকশা করে ওই শিশুদের বাড়ির পাশে নামিয়ে দিত।
পুলিশ জানায়, একসময় নিজের অটোরিকশা করে নগরের বিভিন্ন জায়গায় মদ বিক্রি করত বেলাল। ২০০৬ সালে মাদকদ্রব্যসহ পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ৮ মাস জেল কেটে বাইরে আসার পর সে বিভিন্ন জায়গায় চুরি করা শুরু করেছিল। বিগত কয়েকবছর ধরে শিশু ধর্ষণের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে সে।
পুলিশ জানায়, বেলাল চারটি বিয়ে করার কথা পুলিশকে জানিয়েছিল। তার স্ত্রী পটুয়াখালীর কলাপাড়া থানায় বাবা-মার সঙ্গে থাকত। বেলালের দুই মেয়ে ও এক ছেলে আছে। সেসময় বেলাল পুলিশকে বলেছিল ‘আমি অন্যায় করেছি। এসব খারাপ কাজ করার জন্য আমার ফাঁসি চাই। ’
সিএমপির বায়েজিদ জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) পরিত্রাণ তালুকদার জানান, বায়েজিদ বোস্তামি থানা এলাকায় পাঁচজন, আকবরশাহ থানা এলাকায় দুইজন ও খুলশী এলাকায় একজনসহ মোট ৮ শিশুকে বেলাল ধর্ষণ করেছে। পুলিশের অনুসন্ধানে তা বেরিয়ে এসেছে। এরপর তাকে বুধবার রাতে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানায়, বায়েজিদে থানা এলাকায় গত ১৫ দিনে দুই শিশু ধর্ষণের শিকার করা হয়েছে। গত ছয় মাসে আট শিশুকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে এবং টাকার বিনিময়ে অটোরিকশায় তুলে পাহাড়ে নিয়ে ধর্ষণ করে ছেড়ে দিয়েছে বেলাল। ধর্ষণ শেষে আলামত নষ্ট করতে শিশুদের গোসল করাত সে। শিশুরা কান্নাকাটি করলে ছুরি দিয়ে ভয় দেখানো হতো।
২০১৬ সালে এক শিশু ধর্ষণের মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলে যায় বেলাল। কিন্তু এক বছর আগে জামিনে বেরিয়ে সে বায়েজিদ এলাকায় না ফিরে সীতাকুণ্ডে গিয়ে বসবাস শুরু করে। গত জানুয়ারি থেকে সে আবারও বায়েজিদ এলাকায় আসতে শুরু করে। এরপর সে ফিরে যায় পুরনো অপরাধে।