সুপ্রভাত ডেস্ক »
দুই হাজার ২৪৯ জনের ধারণক্ষমতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বর্তমানে বন্দির সংখ্যা ছয় হাজার ১৫১ জন। ধারণক্ষমতার তিনগুণ বেশি বন্দি থাকায় পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা মিলছে না বলেও জানা গেছে।
সদ্য জামিনে মুক্তি পাওয়া ইউসুফ তালুকদার বলেন, ‘কারাগারের এক কক্ষে যেখানে ২০ জন থাকার কথা সেখানে ৬০-৬৫ জনকে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। বন্দিদের ঘুমাতে চরম কষ্ট হয়। সেই সঙ্গে আছে জনবল সংকট। কারাগারের টয়লেট পরিষ্কার থেকে শুরু করে রান্নাবান্না সবই করতে হয় বন্দিদের। একটি কক্ষে অতিরিক্ত বন্দি থাকায় চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হন বন্দিরা।’ খবর বাংলাট্রিবিউনের।
কারা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কারাগারে রান্নাবান্নার জন্য বাবুর্চি একজন এবং সহকারী বাবুর্চি দুজন। ছয় হাজারের বেশি বন্দির রান্নাবান্না করা এই তিন জনের পক্ষে অসম্ভব। এ কারণে রান্নার কাজে বন্দিদের সহযোগিতা করতে হয়।
চট্টগ্রাম কারাগার সূত্র জানায়, ১৮৮৫ সালে চট্টগ্রাম কারাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৯৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর কারাগারকে কেন্দ্রীয় কারাগারে রূপান্তর করা হয়। জেল কোড অনুযায়ী প্রতি বন্দির জন্য ছয় ফুট দৈর্ঘ্য ও ছয় ফুট প্রস্থের মোট ৩৬ বর্গফুটের জায়গা বরাদ্দ থাকার কথা। সে হিসাবে কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা দুই হাজার ২৪৯ জনের। এরমধ্যে পুরুষ বন্দি থাকার কথা দুই হাজার ১১৪ জন এবং নারী বন্দি থাকার কথা ১৩৫ জন। অথচ মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত কারাগারে বন্দি রয়েছেন ছয় হাজার ১৩৩ জন। অর্থাৎ ধারণক্ষমতার প্রায় তিনগুণ বেশি বন্দি রয়েছেন কারাগারে। এরমধ্যে পুরুষ বন্দি পাঁচ হাজার ৮৪২ ও নারী বন্দি ২৯১ জন। তাদের মধ্যে হাজতি পাঁচ হাজার ২৮৬ জন ও সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি বন্দি আছেন ৮৪৭ জন।
এছাড়া কারাগারে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বন্দি আছেন ৯৫ জন। এরমধ্যে একজন নারীও আছেন। বিদেশি বন্দি আছেন ১৭ জন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি আছেন ৩৩৯ জন। এরমধ্যে নারী ১৪ জন।
চট্টগ্রাম কারাগারে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের একাধিক সদস্য বন্দি আছে। এরমধ্যে জেএমবির হাজতি আছে এক নারীসহ ১৩ জন, জেএমবির কয়েদি আছে চার জন, নব্য জেএমবির সাত জন, মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জেএমবি সদস্য তিন জন, হামজা ব্রিগেডের সদস্য আছে ১০ জন, আনসার আল ইসলামের ৯ জন, হুজির দুজন ও হিজবুত তাহরিরের দুজন।
কারাগারে ১২টি ভবনের ১৩৭টি ওয়ার্ড আছে। এর বাইরে ৩২টি সেল, ১০টি কনডেম সেল, কারা হাসপাতালে ২৫টি ওয়ার্ড, নারীদের জন্য দুটি সেল এবং ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য আছে চারটি ওয়ার্ড।
এদিকে, জনবল সংকটও রয়েছে এই কারাগারে। ৪৫৯টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৩৮৯ জন। দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে ৭০টি পদ। এমনকি কারা হাসপাতালে প্যাথলজিস্ট, সহকারী নারী সার্জন ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট পদ ২০০৬ সালে সৃষ্টির পর থেকে শূন্য রয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, ‘কারাগার মানেই শাস্তি দেওয়ার স্থান নয়; এটি সংশোধনাগার। কারাগারে বন্দিদের মানবিক জীবনযাপন করতে দিতে হবে। এখানে সব বন্দি অপরাধী নয়। অনেকে মিথ্যা মামলায় কারাভোগ করছেন। যা বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখেছি। তাই পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পাওয়া বন্দিদের অধিকার।’
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘দুই হাজার ২৪৯ জনের ধারণক্ষমতার কারাগারে বন্দি আছেন ছয় হাজারের বেশি। জেল কোড অনুযায়ী প্রত্যেক বন্দির জন্য ৩৬ বর্গফুটের জায়গা বরাদ্দের কথা। অথচ কারাগারে ওই জায়গায় এক জনের স্থলে চার জন করে রাখতে হচ্ছে। একটি কক্ষে বন্দি থাকার কথা ২০ জন। বর্তমানে রাখতে হচ্ছে ৬০-৬৫ জন। আমাদের কিছুই করার নেই। জায়গা সংকটের কারণে বন্দিদের এভাবে রাখতে হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মোহাম্মদ এমরান হোসেন মিঞা বলেন, ‘যেটুকু জায়গা আছে তার মধ্যে বন্দিদের সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করছি আমরা। তবে খাবারের সমস্যা নেই। প্রত্যেক বন্দিকে নির্ধারিত খাবার দেওয়া হয়।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) এ কে এম ফজলুল হক বলেন, ‘চট্টগ্রামসহ বিভাগের ১১টি কারাগারে ধারণক্ষমতার দুই-তিনগুণ বেশি বন্দি রয়েছেন। চট্টগ্রামে আরও একটি কারাগার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সীতাকু-ের জঙ্গল সলিমপুরে ইতোমধ্যে জমি নির্বাচন করা হয়েছে। জমি বুঝে পেলে কারাগার নির্মাণের কাজ শুরু হবে। এটি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার-২ হিসেবে পরিচিতি পাবে। নির্মাণকাজ শেষ হলে বর্তমান কারাগারে বন্দি অর্ধেক কমে আসবে।’