নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি
করোনা মহামারিতে নিজের খাবারের দোকানের বিকিকিনিতে ভাটা নেমে আসে। চারপাশে অন্ধকার দেখছিলেন নিপু ত্রিপুরা। বাসায় বসে বসে অলস সময় কাটাচ্ছিলেন। হঠাৎ চোখের সামনে ভেসে উঠলো মাশরুম চাষের একটি চমৎকার ভিডিও। আর তাতেই মাশরুম চাষের দিকে মনোযোগী হন খাগড়াছড়ি জেলা সদরের ঠাকুরছড়া এলাকার নিপু ত্রিপুরা।
মাত্র ১ বছর ২ মাসের মাথায় নিজের উৎপাদিত মাশরুম বিক্রি করে এর মধ্যে লাভ করেছেন প্রায় ৯ লক্ষ টাকা। নিজেদের চাষযোগ্য ঘরে নিপু ত্রিপুরা ২ হাজার প্যাকেট দিয়ে চাষ করেন। যেখান থেকে প্রতি দুই মাসে ১৫/১৭শ’ কেজি মাশরুম উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য ৫ লক্ষ টাকা। সব খরচ শেষে প্রতি দু’মাসে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়।
মাশরুম চাষ করার জন্য যে বীজ প্রয়োজন হয় তা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে কিনে চাষ করতেন। কিন্তু বর্তমানে নিজে বীজ বানিয়ে চাষের পাশাপাশি বাইরে বিক্রি করা শুরু করেছেন। মাশরুমের মতো বীজেরও চাহিদা বেড়ে চলেছে।
নিপু ত্রিপুরা জানান, মাশরুমের লক্ষ্য নিয়ে জেলা শহরের খবংপুড়িয়া এলাকার উলবাবু মাশরুম সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষ শুরু করেন। পরে আরেক দফা মাগুরায় ড্রিম মাশরুম সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষের পাশাপাশি বীজ উৎপাদন শুরু করেন এই নারী উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, বাড়ির সামনে একটি দোকান চালু করেছিলাম, করোনার আঘাতে সবকিছু থেমে যায়। কিছু ঋণ হয়েছিলো তা পরিশোধ করতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো। এখন আমার এখানে অনেক বেড়ে গেছে মাশরুম চাষের চাহিদা। প্রচুর পরিমাণ বিক্রি হচ্ছে। এখানে অনেকে মাশরুম চাষের উপর প্রশিক্ষণ নিতে আসছে কিন্তু দিতে পারছি না। যদি আমি সরকারিভাবে কোনো প্রকল্প পাই তাহলে যারা বেকার বসে আছে তাদের মধ্যে বিনামূল্যে এই চাষ পদ্ধতি শেখাতে পারবো। তাহলে বেকার লোকজন খুব সহজে এই কাজ করতে পারবে।
খাগড়াছড়ি কৃষি কর্মকর্তা মো. মর্তুজ আলী বলেন, মাশরুম খুবই লাভজনক একটি চাষ। এটি সঠিকভাবে পরিচর্যা করে রাখতে পারলে খুব ভালো ফলন হয়। কম পুঁজিতে ভালো লাভ করা যায়। এই মাশরুমের চাহিদা আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি। যদি এই চাষে মানুষ আরো আগ্রহী হয় তাহলে এটি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাহাড় থেকে সারাদেশে সরবরাহ করা যাবে। এতে এখানকার মানুষের জীবন-মান অনেক উন্নত হবে।