জলাবদ্ধতা নিরসন
ভূঁইয়া নজরুল »
বৃষ্টি হলেই পানি জমে নগরীতে। গত তিন বছর ধরে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও জলাবদ্ধতার চিত্রে কোনো পরিবর্তন নেই। তবে এবার চিত্রের পরিবর্তন হতে পারে। আর তা করতে দিন-রাত দুই শিফটে নগরীর শতাধিক পয়েন্টে কাজ করছে আড়াই হাজার শ্রমিক। এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে ৩৬টি খালের মধ্যে ২৩টি খালের কাজ পুরোদমে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চলছে কাজ।
জানা গেছে, ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের এক বছরের বর্ধিত সময়ের কাজ চলছে। প্রকল্পটি আরো দুই বছরের জন্য বৃদ্ধি করতে সংশোধিত আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখনো একনেকে অনুমোদন পাওয়া যায়নি। সংশোধিত সেই প্রকল্পে বাজেট ও সময় উভয়ই বাড়বে। কিন্তু নগরবাসীর জলাবদ্ধতা দুর্ভোগের কি হবে?
গত কয়েকদিন নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সব খালেই পুরোদমে কাজ চলছে। তবে সব খালেই চলছে রিটেইনিং দেয়াল নির্মাণের কাজ। নগরীর সিডিএ এভিনিউ রোডের পাশে (ষোলশহর দুই নম্বর গেট থেকে শুলকবহর পর্যন্ত) রাস্তার পাশের খালে দেখা যায় রিটেইনিং দেয়াল নির্মাণের কাজ চলছে পুরোদমে। চশমা খালের মুখে রিটেইনিং দেয়াল নির্মাণকারী ঠিকাদার রনবোল্ড সোর্সিং এর সাইট সুপারভাইজার মোহাম্মদ সুজন বলেন, ‘আমরা মাটির চার মিটার গভীর থেকে রিটেইনিং দেয়াল নির্মাণ করছি। চশমা খালের মুখ থেকে এস এ পরিবহন পর্যন্ত রাস্তার একপাশের রিটেইনিং দেয়াল নির্মাণ করবো।’
এস এ পরিবহনের অফিস থেকে একাধিক ঠিকাদার কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে মুরাদপুর মোড় পর্যন্ত নির্মাণ শেষ করেছে। তবে মুরাদপুর মোড় থেকে শুলকবহর পর্যন্ত অংশে ব্যাপকহারে কাজ করছে আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। একই চিত্র দেখা গেছে বহদ্দারহাট পুলিশ বক্সের পাশ দিয়ে চাক্তাই খালের অংশেও রিটেইনিং দেয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। ফিরিঙ্গীবাজার অংশে ভবন ভেঙে চলছে রিটেইনিং দেয়াল নির্মাণের কাজ। এছাড়া আগ্রাবাদ, হালিশহর, ষোলশহরসহ পুরো নগরীতে চলছে বিক্ষিপ্তভাবে নালা ও খালের কাজ।
কতোটি পয়েন্টে একযোগে কাজ চলছে জানতে চাইলে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পে সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী বলেন, প্রায় শতাধিক পয়েন্টে আড়াই হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করছে। এখন যেহেতু শুষ্ক মৌসুম তাই কাজের গতি বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
এপ্রিলে এক বা দুই দিনের আচমকা বৃষ্টিতে নগরীতে জলাবদ্ধতা দেখা যায়। এবারো কি এমন হতে পারে? এই প্রশ্নের জবাবে লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী বলেন, ‘এবার আর আগের মতো ঘটনা ঘটবে না। এপ্রিল ও মে মাসের মধ্যে নতুন করে ২০টি খালের কাজ পুরোদমে শেষ করবো। এর আগে শেষ করেছি তিনটি খাল (কলাবাগিচা, রাজাখালি-২ ও সদরঘাট-২)। তাহলে আমাদের শেষ হচ্ছে ২৩টি খাল। এসব খালের কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতা দেখা যাবে না।
স্ল্ইুস গেটের কি অবস্থা?
জলাবদ্ধতা মেগা প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৫টি খালে স্লুইস গেট বসার কথা। এসব খালগুলো হলো-মহেশখাল, কলাবাগিচা খাল, মরিয়ম বিবি খাল, টেকপাড়া খাল ও ফিরিঙ্গীবাজার খাল। এবারের বর্ষার আগে খালের মুখে স্লুইস গেট বসবে কিনা জানতে চাইলে লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী বলেন, ‘মহেশখাল ছাড়া বাকি চারটি খালে এপ্রিলের মধ্যে স্লুইস গেট বসবে। মহেশখালে জুনের আগে বসবে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের আওতায় খালগুলোতে বর্ষার আগেই স্লুইট গেট বসছে।
তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে বাকি খালগুলোর মুখে স্লুইসগেট না বসলে নগরবাসীর আবারো দুর্ভোগের মুখে পড়তে পারে বলে তিনি জানান। এবিষয়ে শাহ্ আলী বলেন, ‘চাক্তাই খাল, রাজাখালী খাল, নোয়া খাল, ডোমখালী খাল দিয়ে নগরীর অধিকাংশ পানি কর্ণফুলীতে গিয়ে পড়ে। এখন এসব খালের মুখে যদি স্লুইস গেট না বসে কিংবা বর্ষার মুখ খালের মুখ পুরোপুরি কেটে দেয়া না হয় তাহলে জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ যাবে না।’
এদিকে এসব খালের মুখে স্লুইস গেট বসানোর কাজ চলছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রথক আরেকটি প্রকল্পের আওতায়। চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত ১২টি খালের মুখে স্লইস গেট বসানোর কাজ করছে সিডিএ’র প্রকল্পের আওতায়। এবিষয়ে সিডিএ’র অগ্রগতি কি জানতে চাইলে সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘১২টি স্লুইস গেটের মধ্যে ১০টির কাজ প্রায় শেষ। এই ১০টি স্লুইস গেট আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে বসবে। তাই এবার জোয়ারের পানি নগরীতে প্রবেশ করতে পারবে না।’
উল্লেখ্য, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে নেয়া মেগা প্রকল্পটি ২০১৭ সালের আগস্টে একনেকে অনুমোদনের পর ২০১৮ সালের এপ্রিলে সেনাবাহিনীর সাথে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তারপর সেনাবাহিনীর পরামর্শক নিয়োগ করে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি ও প্রকল্পের ডিজাইন চূড়ান্ত করে। আর তা করতেই দুই বছর চলে যায়। এসময়ের মধ্যে শুধু খালগুলো পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয় ২০১৯-২০ সালে। গত জুন পর্যন্ত এই প্রকল্পের আওতায় খরচ হয় ১৭৭১ কোটি টাকা। প্রকল্পের কাজ পুরোদমে শেষ হলে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন দুর্ভোগ থেকে নগরবাসী রেহাই পাওয়ার কথা।