নিজস্ব প্রতিবেদক »
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে দুই মাসের মধ্যেই শুরু হবে ১৫০ শয্যার বিশেষায়িত বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের নির্মাণকাজ। এতে ব্যয় হবে প্রায় ২৮৫ কোটি টাকা।
শনিবার চমেক হাসপাতালের গোঁয়াছি বাগান এলাকায় পরিদর্শনে এসে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
এ সময় তিনি বলেন, আমরা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছি। এটা যেহেতু একনেকে পাস হয়ে গেছে; আর আমার ইচ্ছা আছে যে প্রধানমন্ত্রী যখন দেশে থাকেন তখনই ওনাকে দিয়ে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করানোর। প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে যাচ্ছেন; তাই আশা করি, উনি দেশে ফিরে এলে আমরা এটা উদ্বোধন করতে পারব। এ মাসেই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার চেষ্টা করব, আর যত দ্রুত সম্ভব কাজ শুরু করব।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চাইনিজরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে আগামি দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে ভবন নির্মাণ শেষ করবে। একইসঙ্গে আমরা জনবল যন্ত্রপাতি সব নিয়েই কাজ করছি। আমি যে রকম শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে একদিনে শুরু করতে পেরেছিলাম, এবারও টার্গেট হচ্ছে আমরা সবকটি একসঙ্গে করে চালু করব। এই বার্ন ইউনিট চালু হলে চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলা উপকৃত হবে। সবাইকে ঢাকা ছুটতে হবে না।’
১৫০ শয্যার বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের মধ্যে থাকছে শিশুদের জন্য ৫টিসহ মোট ২০টি বার্ন আইসিইউ বেড, ২৫টি এইচডিইউ বেড এবং ৩টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার। রোগী আসা-যাওয়ার সুবিধার জন্য থাকবে তিনটি রাস্তা। ছয়তলাবিশিষ্ট এই হাসপাতালের ইউনিটটির প্রথমতলায় থাকবে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড এবং ওপিডি, দ্বিতীয়তলায় তিনটি অপারেশন থিয়েটার (ওটি), নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), তৃতীয়তলায় হাইডিপেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), চতুর্থ এবং পঞ্চমতলায় থাকবে সাধারণ ওয়ার্ড, ষষ্ঠতলায় ওয়ার্ডের সঙ্গে থাকবে অফিস।
এই বার্ন ইউনিট নির্মাণে ব্যয় হবে ২৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন সরকার অনুদান হিসেবে দেবে ১৮০ কোটি টাকা। বাকি ১০৫ কোটি টাকা দেবে সরকার। চলতি বছরের ৯ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ সংক্রান্ত প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।
উল্লেখ্য, গত ২০২৩ সালের মার্চে চীন সরকারের সঙ্গে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি হয়। যেহেতু চীন সরকার এ প্রকল্পে ৬৩ শতাংশ অর্থ অনুদান হিসেবে দিচ্ছে, তাই তাদের নির্বাচিত ঠিকাদারই অবকাঠামো নির্মাণ করবে। অবকাঠামো নির্মাণের যন্ত্রপাতি, প্রকৌশলী ও উপকরণ সরবরাহ করবে দেশটি। প্রকল্প শেষে এক বছর প্রযুক্তিগত সহায়তাও দেবে তারা। অন্যদিকে পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ টেলিযোগাযোগ সংযোগসহ বিভিন্ন পরিষেবা দেবে বাংলাদেশ সরকার।
২০১২ সালে অনানুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতালের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২৬টি শয্যা নিয়ে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া শুরু করে চমেক হাসপাতাল। এটাকে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট বলা হলেও রোগীদের চিকিৎসায় গুররুত্বর্পূণ যন্ত্রপাতিসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার সংকট ছিল। পরবর্তী সময়ে সরকারের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ আলাদা অবকাঠামোতে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করেন চীন সরকার।
এরপর চীনা প্রতিনিধিদল ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর চমেক হাসপাতাল এলাকায় সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করে। এরপরের কয়েক বছরে চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের কয়েক দফা বৈঠক হলেও হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা নানা কারনে আটকে ছিল। পরে ২০২২ সালের মাঝামাঝিতে এসে চীন সরকার চমেক হাসপাতাল এলাকার গোঁয়াছিবাগান এলাকায় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি কেন্দ্র তৈরির স্থান নির্বাচন করে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের জানায়। এরপর গতবছর ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে চট্টগ্রামে এসে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন, ভবনের নকশা অনুযায়ী সবকিছু পরিমাপ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো যাচাই করেন চীনা প্রতিনিধিদল। ওই বছরের ৩০ মার্চ এ বিষয়ে চূড়াস্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। এবং চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সফরে এসে বার্ন অ্যান্ড প্লাাস্টিক সার্জারি ইউনিটের নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু করার ঘোষণা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। যদিও মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার আগে থেকে এ বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি।