রাজু কুমার দে, মিরসরাই »
যখন দেশের প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে কাড়ি কাড়ি টাকার বিনিময়ে অহরহ অস্ত্রপচার বা সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব হচ্ছে, সেখানে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট পৌরসভায় অবস্থিত হিঙ্গুলী ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। গত এক বছরে ওই হাসপাতালে ৬৬ জন প্রসূতি স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিয়েছেন। এতে খরচ হয়নি এক টাকাও। ফলে ধীরে ধীরে গর্ভবতী ও প্রসূতিদের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে হাসপাতালটি। কিন্তু হাসপাতালটিতে ১০টি পদের মধ্যে ৮টি খালি পড়ে আছে। ফলে অস্ত্রপচার সহ অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।
জানা গেছে, সরকার প্রান্তিক পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে সারা দেশে ১৫৯টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপন করে। তম্মধ্যে হিঙ্গুলী ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র একটি।
গত বছরের ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন। যদিও এখনো হাসপাতালটি কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। রোগীদের কথা চিন্তা করে উদ্বোধনের আগে থেকেই চিকিৎসাসেবা দেয়া শুরু করেন চিকিৎসকরা। প্রত্যেকটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের জন্য ১০টি পদ সৃজন করা হয়। তারই ধারবাহিকতায় হিঙ্গুলী ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের জন্য ১০টি পদ সৃজন করা হয়। পদগুলো হলো : মেডিক্যাল অফিসার ২টি, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) ১টি, ফার্মাসিস্ট ১টি, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ৪টি, অফিস সহকারী ১টি ও অফিস সহায়ক ১টি। কিন্তু হিঙ্গুুলী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে মাত্র দু’জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা রয়েছে। এদের দিয়েই চলছে হাসপাতালটি।
হিঙ্গুলী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ হাসপাতাল থেকে গত এক বছরে ৬৬ জন গর্ভবতী বিনা খরচে স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে এই হাসপাতালে সন্তান জন্ম দিয়েছেন। এছাড়া কমপক্ষে ৬শ’ মা ও শিশুকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ প্রেরণ করা হয়েছে। স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে ৩ জন, মে মাসে ১ জন, জুনে ২ জন, জুলাইয়ে ৩ জন, আগস্টে ৫ জন, সেপ্টেম্বরে ৫ জন, অক্টোবরে ৫ জন, নভেম্বরে ৬ জন, ডিসেম্বরে ৮ জন এবং ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ১১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৭ জন ও মার্চে ১০ জন প্রসূতি স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিয়েছেন।
সরেজমিনে হিঙ্গুলী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে দেখা যায়, দুই পাশে দু’জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। একজন গর্ভবতী ও প্রসূতিকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। অন্যজন শিশু রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যের ওষুধ। দুই ডাক্তারের কক্ষের সামনে দীর্ঘ লাইন। চিকিৎসাসেবা নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরছেন রোগীরা।
বারইয়ারহাট পৌরসভার জামালপুর গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা গর্ভবতী ফাতেমা ইয়াসমিন বলেন, আমি ৯ মাসের গর্ভবতী। হিঙ্গুলী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে বিনা খরচে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়ে থাকে শুনে এসেছি। কর্তব্যরত ডাক্তার প্রসব বেদনা উঠলে দ্রুত হাসপাতালে আসার পরামর্শ দিয়েছেন।
জানতে চাইলে হিঙ্গুলী মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা তমা দেবী বলেন, রোগীদের কথা চিন্তা করে উদ্বোধনের আগে থেকে এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। গত এক বছরের ৬৬ জন গর্ভবতী স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিয়েছেন। এছাড়া বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে নিয়মিত। তবে আমাদের জন্য স্টাফ কোয়ার্টার না থাকায় ভাড়াবাসায় থেকে আমরা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি।
এই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল অফিসার ডা. নাজমুল হোসাইন (এম ও ) বলেন, আমরা দু’জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা দিয়ে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছি। গর্ভবতীরা একটু সচেতন হলে স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেয়া সম্ভব। তাই প্রসব বেদনা উঠলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। শূন্য পদগুলোতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে চিকিৎসাসেবার পরিধি আরো বাড়বে।