নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু’র কোনারপাড়া সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া ৪টি মর্টারশেল এসেছে পড়েছে। এতে শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন রোহিঙ্গা শিশুসহ ৪ জন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তুমব্রু রোহিঙ্গা ক্যাম্প কমিটির চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ।
তিনি জানান, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে মিয়ানমার থেকে ৪টি মর্টারশেল এসে পড়ে। এর মধ্যে ৩টি শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ও আরেকটি বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে পড়েছে। এতে এক রোহিঙ্গা শিশুসহ ৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদ ইকবাল নামে আহত এক রোহিঙ্গা যুবক মারা গেছে।
তিনি আরও জানান, আহতদের মধ্যে বাংলাদেশি একজনও আছেন। তবে তাদের নাম-পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
এই সীমান্তেই হেডম্যানপাড়ার ৩৫ নম্বর পিলারের ৩০০ মিটার মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে শুক্রবার দুপুরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মাইন বিস্ফোরণে আহত হন এক বাংলাদেশি যুবক।
আহত অন্নথাইং তঞ্চঙ্গ্যার বাড়ি ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তুমব্রু হেডম্যানপাড়ায়।
ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলম জানান, শুক্রবার দুপুরে ওই বাংলাদেশি যুবক গরু আনতে তুমব্রু সীমান্ত এলাকায় ৩৫ নম্বর পিলারের কাছাকাছি কাঁটাতার পেরিয়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যান। সেখানে পুঁতে রাখা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে তার বাম পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
প্রায় এক মাস ধরে সীমান্তে উত্তেজনা চলছে। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে মর্টার শেলসহ নানা ভারী অস্ত্রের আওয়াজে এপারের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু ও বাইশপারী এলাকার মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
গত ২৮ আগস্ট তুমব্রু উত্তর পাড়ায় এসে পড়েছে একটি অবিস্ফোরিত মর্টারশেল। সেদিনই সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার চক্কর দিতে দেখা যায়।
শূন্যরেখার কোনারপাড়া আশ্রয় শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘গুলির শব্দে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছি না এক মাস। গোলাগুলি শুরু হলে মনে হয় ক্যাম্পেই গুলি ছোড়া হচ্ছে। সকাল ৬-৭টার দিকে শুরু হয় গোলাগুলি, চলে গভীর রাত পর্যন্ত।’
গত ৩ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধবিমান ও ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া দুটি গোলা ঘুমধুম ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় পড়ে। সেগুলো অবিস্ফোরিত থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।এ ঘটনার ৩ দিন পর ফের ওই সীমান্তে ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দ ভেসে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, বিভিন্ন সূত্রে তিনি জানতে পেরেছেন মিয়ানমার সীমান্তে (রাখাইন রাজ্যের তুমব্রু এলাকায়) সশস্ত্র বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ চলছে। সংঘর্ষে গুলি ছাড়াও মর্টারশেলের মতো ভারী অস্ত্রও ব্যবহৃত হচ্ছে।