সুপ্রভাত ডেস্ক »
বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ নীতির সুবিধা নিয়ে মার্কিন উদ্যোক্তাদের এদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুরে নিউ ইয়র্কে ইউএস বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সদস্যদের সঙ্গে গোল টেবিল বৈঠকে এ আহ্বান জানান তিনি। খবর বিডিনিউজের।
নবায়নযোগ্য শক্তি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, ওষুধ, ভারি যন্ত্রপাতি, সার, সমুদ্র সম্পদ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও কোভিড ১৯ টিকা তৈরিসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রয়োজনে দেশটির বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ঘোষণাও দেন সরকারপ্রধান। ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল এসব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
দেশের বিনিয়োগ পরিবেশের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের রয়েছে উদার বিনিয়োগ নীতি, যেটির আওতায় বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষা, কর অবকাশ, রয়্যালটি প্রেরণ, অনিয়ন্ত্রিত বিনিয়োগ প্রত্যাহার নীতি, পুরো লভ্যাংশ ও পুঁজি প্রত্যাবাসন ইত্যাদি।’
বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) এবং বেশ কয়েকটি হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ছয় লাখেরও বেশি ফ্রিল্যান্সার পেশাদার থাকার কারণে বাংলাদেশ এ খাতে বিনিয়োগের জন্য সঠিক গন্তব্য।
প্রতিযোগিতামূলক মজুরিতে দক্ষ মানবসম্পদও বাড়তি সুবিধা বলে যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে বাংলাদেশের উত্তোরণ ঘটবে। এ কারণে আমাদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা এবং রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে পর্যাপ্ত সহায়তা প্রয়োজন। আমি নিশ্চিত এ চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার প্রচেষ্টায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশীদার হবে।’
ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সাফল্য কামনা করে তিনি টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য পারস্পরিক অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশীদারিত্বের জন্য যৌথভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শেখ হাসিনা এ বছরের মে মাসে কাউন্সিলের সদস্যদের ঢাকা সফরের কথা স্মরণ করে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সভাপতি নিশা বিসওয়ালকে ওই সফরে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠানোর জন্য ধন্যবাদ জানান।
এ বছর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধান অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগী। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পারস্পরিক সামরিক সহযোগিতা, নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ইত্যাদির মত বিস্তৃত বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের ব্যাপক সংযোগ রয়েছে।’
উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের তথ্যও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। ২০২১-২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে প্রায় ১০ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। একই সময়ে আমদানি করে প্রায় ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।
আঞ্চলিক সংযোগে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় অগ্রগামী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক হাব হওয়ার জন্য প্রচুর সম্ভাবনার দাবি রাখে। ভারত, চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চার বিলিয়ন মানুষের সম্মিলিত বাজারের মাঝখানে বাংলাদেশের অবস্থান। প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।
‘এভাবে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক, তৃতীয় বৃহত্তম সবজি উৎপাদনকারী, চতুর্থ বৃহত্তম ধান উৎপাদনকারী এবং বিশ্বে পঞ্চম বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ মৎস্য উৎপাদনকারী হয়ে উঠেছে।’
বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে তার প্রতিবেশী এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক কূটনীতি চালিয়ে যাবে বলে তিনি যোগ করেন।
পদ্মা সেতু অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক সংযোগে ভূমিকা রাখবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা ক্রমাগত আমাদের ভৌত, আইনি ও আর্থিক অবকাঠামো উন্নত করছি এবং দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাচ্ছি।’
তার সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন যেখানে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ একটি শোষণমুক্ত সমাজ পাবে এবং তারা পূর্ণ অর্থনৈতিক মুক্তি পাবে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এ রূপান্তরের পথে রয়েছে বাংলাদেশ, যেখানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশের উন্নয়নে নেওয়া নানামুখী ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
বর্তমান সরকার শ্রম অধিকার নিশ্চিত ও ক্রমাগত উন্নতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে যথাযথভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, শ্রম ইস্যুতে ৩+৫+১ প্রক্রিয়ায় মার্কিন সরকার সক্রিয়ভাবে প্রতিনিধিত্ব করছে।
‘তদুপরি দ্বিতীয় উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক পরামর্শের ফলোআপ সিদ্ধান্ত হিসেবে ‘সরকার-থেকে-সরকার’ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন এ ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
কোভিড মহামারীর মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ‘দুর্দান্ত স্থিতিশীলতা’ দেখিয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান কোভ্যাক্সের মাধ্যমে সাড়ে সাত কোটি কোভিড ১৯ টিকা দেওয়ায় মার্কিন সরকারকে ধন্যবাদ দেন।