প্রথম দিন পার
রাস্তাজুড়ে ছিল রিকশার দাপট
নিজস্ব প্রতিবেদক <<
ঘঁড়ির কাটায় সকাল ১০টা ৪৫ মিনিট। একে খান মোড়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে লরিগুলো যাচ্ছে ঢাকা অভিমুখী। কিন্তু মোড়ের মধ্যে রিকশা রয়েছে অনেক। জাকির হোসেন রোডের মুখ কিংবা অলংকার অভিমুখী সব দিকেই রয়েছে রিকশা। অলংকারের দিকে হেঁটে এগিয়ে গিয়ে দেখা যায় সেখানে যেনো রিকশার সমাবেশ। অসংখ্য রিকশা দাঁড়িয়ে রয়েছে। যাত্রীও প্রচুর। দেওয়ানহাট মুখী এবং বড়পুলমুখী যাত্রীদের নিয়ে যেতে রিকশাগুলো যেনো অপেক্ষায় রয়েছে। এই চিত্র শুধু একেখান কিংবা অলংকার মোড় এলাকায় নয়, পুরো নগরজুড়েই ছিল।
লকডাউনের প্রথম দিন সোমবার মানুষের বিচরণও ছিল গত বছরের লকডাউনের তুলনায় বেশি। এছাড়া দোকানপাটও খোলা ছিল।
পাহাড়তলী বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাজারমুখী মানুষের ঢল রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানপাট যেমন খোলা ছিল, তেমনিভাবে ছোটো আকারের কারখানাগুলো খোলা ছিল। পোর্ট কানেকটিং রোডের লোহা লক্করের কারখানাগুলোকে শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা যায়। নয়বাজার মোড় থেকে বড়পোল পর্যন্ত বিভিন্ন দোকানপাট এবং গ্যারেজগুলো খোলা ছিল।
নগরীর জামালখান, আন্দরকিল্লা ও নিউমার্কেট এলাকায়ও দেখা গেছে রাস্তায় অনেক মানুষ। কিন্তুু রিকশায় দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে চলাচল করেছে যাত্রীরা। কোলাহলমুক্ত সুনশান নগরে যেন শুধু মানুষ আছে। যান্ত্রিক ছোয়া পায়নি নগরী। মাঝেমধ্যে দু একটির দেখা মেলে। তাও তারা নগরীর দূরের গন্তব্যে যেতে অনিহা প্রকাশ করছে। এসব যন্ত্রে চালিত পরিবহনে চড়া মানে রাজার ঘোড়ায় চেপে বসা একই হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাড়া খোজা হচ্ছে চারগুণ বা তারও বেশি। প্রাইভেট গাড়ি যাদের আছে তারা একমাত্র সুখী এ লকডাউনে। দুর্ভোগের শেষ নেই এ যান্ত্রিক নগরের অন্তিম লকডাউনে।
রাস্তায় বের হওয়া জামালখান নিবাসী শাহনাজ সুলতানা বলেন, ‘জরুরি ওষুদের জন্য হাজারী লেইন গিয়েছিলাম। রিকশা ভাড়া নিয়েছে দ্বিগুণ। লকডাউন মানে যেন এক জনদুর্ভোগে। গণপরিবহন না থাকলেও মানুষ কিন্তু কম বের হচ্ছে না।’
অপরদিকে বেলা ১১টায় সরেজমিনে বহদ্দারহাট ঘুরে দেখা গেছে, লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাঁচাবাজার খোলা রাখার কথা বলা হলেও বাস্তবে সে চিত্রের দেখা যায় না। এসময় বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের অধিকাংশ বিক্রেতার মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বেশিরভাগ রেস্তোরাঁয় ক্রেতাদের বসে খাবার গ্রহণ করতে দেখা গেছে। শপিংমল ও মার্কেট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হলেও বহদ্দারহাটের বখতিয়ার ও স্বজন সুপার মার্কেট এবং সিটি করপোরেশন মার্কেটের অনেক দোকান খোলা থাকতে দেখা গেছে। গণপরিবহন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হলেও বহদ্দারহাট থেকে শাহ আমানত সেতু এবং চকবাজার রোডে বাস, টেম্পু, সিএনজি অটোরিকসা এবং টিকটিকি টেম্পু চলতে দেখা গেছে। রাস্তায় যাত্রীদের তুলনায় গণপরিবহন না থাকায় এসব গণপরিবহনে ভিড় করেই যাতায়াত করতেও দেখা গেছে।
সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে দোকান খোলার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করতে ইচ্ছুক বহদ্দারহাটের বখতিয়ার মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, গার্মেন্টস, কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে সব কিছুই খোলা। করোনা কি শুধুই কাপড়ের দোকান কিংবা মার্কেটে থাকে? গার্মেন্টস কিংবা কাঁচাবাজারে থাকে না? গত বছরে লকডাউনের কারণে প্রচুর পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছি। এ বছরও লকডাউনে দোকান বন্ধ রাখতে হলে না খেয়ে থাকতে হবে। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই দোকান খোলা রেখেছি।
দুপুর ১টার দিকে চকবাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায় সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী মার্কেট বন্ধ থাকলেও রাস্তার পাশে গাড়ীর গ্যারেজের পাশাপাশি অন্যান্য দোকান খোলা থাকতে দেখা গেছে। এসময় রাস্তায় গাড়িতে পুলিশ দেখা গেলেও এসব দোকান বন্ধে কোন রকম পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এছাড়া খাবার দোকানে বসে ক্রেতাদের খাবার গ্রহণ করতে দেখা গেছে। রাস্তায় লোকজনের আনাগোনা, সিএনজি, মোটরসাইকেলে লোকজনের চলাচল দেখে লকডাউনে বলে মনে হয়নি। এছাড়া রাস্তার পাশে চায়ের টং দোকানে রিকশা চালক থেকে শুরু করেই পথচারীদের খাবার গ্রহণের পাশাপাশি আড্ডা দিতে দেখা গেছে।
দুপুর ২টার দিকে প্রবর্তক মোড়, পাঁচলাইশ থানা মোড় এবং মুরাদপুর ঘুরেও একই চিত্র দেখা গেছে। পাঁচলাইশ থানার সামনের রেস্টুরেন্টগুলোতে ক্রেতাদের বসে খাবার গ্রহণ করতে দেখা গেলেও এক্ষেত্রে প্রশাসনের কোন ভূমিকা দেখা যায়নি। মুরাদপুরে অধিকাংশ ক্রোকারিজের দোকান বন্ধ থাকলেও কিছু কিছু দোকানে খোলা থাকতে দেখা গেছে। রাস্তায় লোকজনের চলাচল ও গণপরিবহন চলাচল করায় অধিকাংশে ক্ষেত্রে লকডাউন ছিল ঢিলেঢালা। করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করতে লকডাউন দেওয়া হলেও সাত দিনের লকডাউনের প্রথম দিনে অবস্থা ছিল অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক।
প্রথম দিনে লকডাউন তদারকিতে মাঠে ছিলেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা আফরোজ। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিনে মানুষের বিচরণ বেশি ছিল। একইসাথে অক্সিজেনসহ কিছু এলাকায় সিএনজির চলাচলও দেখা গেছে। তবে মানুষ ডাক্তারের স্লিপ নিয়ে এবং বিভিন্ন অজুহাতে বের হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, প্রথম দিন হওয়ায় একটু শিথিল ছিলাম। তবে ধীরে ধীরে আরো কঠোর হবো।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামসহ দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। সাত দিনের জন্য শুরু হওয়া এই লকডাউন আগামীতে আরো বাড়তেও পারে। লকডাউনে গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানা এবং বিভিন্ন অফিস নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় খোলা রাখা হয়েছে। এছাড়া সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী দিন সকাল ৬টা পর্যন্ত মানুষকে বাইরে না থাকতে বলা হয়েছে।