সুপ্রভাত ডেস্ক :
আমাদের দেশে গ্রীষ্মের গরমে যেখানে টিকে থাকা দুষ্কর, সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে উত্তপ্ত জায়গায় মানুষ কীভাবে থাকে? এই প্রশ্ন কম-বেশি সবার মনেই জেগে ওঠে। অনেকেরই জানার আগ্রহ বাড়ায়, এতো গরমে সেখানকার মানুষের টিকে থাকার আসল রহস্যটা কী? আমাদের আজকের প্রতিবেদন সাজানো হয়েছে আপনার এই প্রশ্নের উত্তর নিয়েই। পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তপ্ত জায়গা ‘ডেথ ভ্যালি’, সেখানে মানুষ কীভাবে থাকে এই রহস্যটি আজ আপনাদের জানাবো। চলুন তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক-
ব্রান্ডি স্টুয়ার্ট কাজ করেন ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে। তিনি সেখানে কমুনিকেশন বিভাগে আছেন। গত ১৬ আগস্ট, রোববার ডেথ ভ্যালিতে তাপমাত্রা ছিল ৫৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিশ্বে নির্ভরযোগ্যভাবে এযাবতকালের রেকর্ড করা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
ব্রান্ডি স্টুয়ার্ট বলেন- এখানে এখন যে রকম গরম পড়েছে, আমরা সবাই আমাদের ধৈর্য হারিয়ে ফেলছি। আপনি যখন বাইরে যাবেন, মনে হবে যেন আপনার মুখে অনেকগুলো হেয়ার ড্রায়ারের গরম বাতাস এসে পড়ছে।
ডেথ ভ্যালি এক বিস্তীর্ণ মরুভূমি। মাঝে মাঝে আছে বালিয়াড়ি আর গভীর খাদ। পার্শ্ববর্তী রাজ্য নেভাডা পর্যন্ত বিস্তৃত।
১৬ আগস্ট, রোববারের তাপমাত্রা আসলেই বিশ্বে রেকর্ড করা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কিনা, সেটি বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডাব্লিউএমও) এখন যাচাই করে দেখছে। কিন্তু ডেথ ভ্যালিতে গরম আসলে কত বেশি, সেটা বোঝার জন্য ব্রান্ডি স্টুয়ার্টের কোনো বিশেষজ্ঞের মতামতে অপেক্ষায় বসে থাকার দরকার নেই।
ডেথ ভ্যালি হচ্ছে বিশ্বের উষ্ণতম জায়গা। কিন্তু এরকম একটা জায়গাতেও থাকে কয়েকশো মানুষ। ব্রান্ডি তাদের একজন। ডেথ ভ্যালিতে তিনি প্রায় পাঁচ বছর ধরে আছেন।
ডেথ ভ্যালি সম্পর্কে তিনি আরো জানান- এখানে এত গরম যে, আপনার গায়ে যে ঘাম হচ্ছে তা আপনি টেরই পাবেন না। কারণ খুব দ্রুত এটি বাষ্প হয়ে উবে যাচ্ছে। ঘামে যখন কাপড় ভিজে যায়, সেটা টের পাওয়া যায়। কিন্তু গায়ের চামড়ায় ঘাম শুকিয়ে যায় খুব দ্রুত। এই বিষয়টিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে আমার সময় লেগেছে।
মিজ স্টুয়ার্ট বলেন, গ্রীষ্মকালে তাদের বেশিরভাগ সময় ঘরের ভেতরেই কাটে। তবে অনেকে পাহাড়ের দিকে চলে যায়, যেখানে তাপমাত্রা একটু কম।
ডেথ ভ্যালিতে যখন লোকে এই গরমে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন এটা স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। তখন তাপমাত্রা ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের (২৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) নিচে নামলে সেটাকেই মনে হয় খুব ঠা-া।
ডেথ ভ্যালির লোকজনের বাড়িতে এয়ার কন্ডিশনিং এর ব্যবস্থা আছে। এটি তাদের ঘর ঠা-া রাখে। কাজেই ঘুমাতে অসুবিধা হয় না। তবে বিদ্যুৎ যদি চলে না যায়। যখন প্রচন্ড গরম পড়ে, তখন সবাই সারাক্ষণ এয়ারকন্ডিশনিং চালিয়ে ঘর ঠা-া রাখার চেষ্টা করে। তখন বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা তৈরি হয়।
ডেথ ভ্যালির বেশিরভাগ মানুষ থাকেন এবং কাজ করেন ফার্নেস ক্রীকে। এখানেই সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এই জায়গাটা সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ২৮০ ফুট নিচু একটা বেসিনের মতো। চারিদিকে উঁচু এবং খাড়া পাহাড় দিয়ে ঘেরা।
জেসন হেসার এই ফার্নেস ক্রীকেই থাকেন। তিনি ফার্নেস ক্রীকে আছেন ২০১৯ সাল থেকে। তার আসল বাড়ি মিনেসোটাতে। কাজ করেন এখানকার একটি গলফ কোর্সে। এটি বিশ্বে সমুদ্র সমতল থেকে সবচেয়ে নিচু কোনো গলফ কোর্স।
সামরিক বাহিনীর এই সাবেক সদস্য বলেন- আমি দুবার ইরাকে ছিলাম। যদি ইরাকে থাকতে পারি, তাহলে ডেথ ভ্যালিতেও থাকা যায়।
জেসন গলফ কোর্সে কাজ শুরু করেন ভোর পাঁচটার একটু আগে এবং দুপুর একটা পর্যন্ত কাজ করে যান।
তিনি জানান- ওরা আমাদের জানিয়েছে, যখন গরম আরো বেশি পড়বে, তখন আমাদের আরো ভোরে কাজ শুরু করতে হবে। একেবারে ভোর চারটায়। আর সেই ভোরেও কিন্তু তাপমাত্রা প্রায় ১০০ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৭ দশমিক ৭ হতে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস)।
এই গলফ কোর্সটিকে নিপাট রাখার জন্য যে পানি দরকার, তা আসে একটি ভূগর্ভস্থ ঝর্ণা থেকে। যে দলটি গলফ কোর্সটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে মিস্টার হেসার তাদের একজন।
তিনি আরো বলেন- আমরা প্রতিদিন ঘাস কাটি। এটা-ওটা ছাঁটি। বাংকারগুলো থেকে আগাছা পরিষ্কার করি। আবহাওয়া যেহেতু খুবই শুষ্ক, অনেক গাছ মরে যায়। আমরা সেগুলো সরাই। এত গরম পড়ে যে এসব গাছ শুকিয়ে ফেটে যায়। আমাদের দিনের অনেক সময় যায় এগুলো পরিষ্কার করতে।
হেসার এখানে এসেছিলেন ২০১৯ সালে। তিনি তার কাজটা বেশ পছন্দ করে ফেলেছেন। আরো কয়েক বছর তিনি এখানে থাকার পরিকল্পনা করছেন। তবে ডেথ ভ্যালিতে গ্রীষ্মের ভয়াবহ গরমের যে কষ্ট, সেটা কিছুটা পুষিয়ে দেয় শীতকাল। হেসার অবসরে গলফ কোর্সে গলফ খেলতে পছন্দ করেন। তবে সেজন্য উঠতে হয় বেশ সকালে এবং খেলা শুরু করতে হয় সকাল সাতটায়। কারণ এরপর গরম খুবই অসহনীয় হয়ে উঠে।
তিনি বলেন, আমি গলফ খুব ভালোবাসি। খবর : ডেইলিবাংলাদেশ’র।
ফিচার দেউড়ি