জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বলেন, ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে যত আক্রান্ত হয়েছে, এবার এই নভেম্বরের মধ্যে তার তুলনায় সোয়া গুণ রোগী বেশি হয়ে গেছে। আর ২৩ বছরের চেয়ে এবার প্রায় ১ দশমিক ৮ গুণ বেশি মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, এবার আক্রান্ত রোগীদের ৬০ ভাগ পুরুষ। কিন্তু ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ৫৮ শতাংশ নারী। এবার আক্রান্তদের ৬২ শতাংশের বেশি বয়স ৩০ বছরের নিচে। কিন্তু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতদের ৬৪ ভাগের বয়স ৩০ বছরের বেশি।
ডেঙ্গুতে প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ কিন্তু এ নিয়ে যেন সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। সিটি করপোরেশন নামে যে সেবাদানকারী সংস্থাটি আছে যার অন্যতম প্রধান কাজ হলো মশক নিধন সে প্রতিষ্ঠান হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে যেন এ নিয়ে তাদের করার কিছু নেই। অথচ এবার ডেঙ্গুর ভয়াবহতার বিপরীতে নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা খুব অপ্রতুল বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কর্মকর্তা এস এম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আজ পর্যন্ত কোনো টাস্কফোর্স হয়নি। একটি জরুরি সভা হয়নি। কোনো দেশে ডেঙ্গু শুরু হলে এটি শেষ হয়ে যায় না। তবে একে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু সে জন্য জরুরি সমন্বিত উদ্যোগ নেই। জনসম্পৃক্ততা নেই। সরকারের পক্ষ থেকে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে তেমন করে সহযোগিতাও চাওয়া হয়নি। উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে আমরা সহযোগিতা করতে সব সময় প্রস্তুত।’
এ পরিস্থিতিতে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এখনই সমন্বিত ও শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়া না হলে আগামী দিনে আরও ভয়াবহ আকারে আসতে পারে । তিনি বলেছেন, ডেঙ্গু এখন জাতীয় সমস্যায় রূপ নিয়েছে। এর নিয়ন্ত্রণে এখন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নেতৃত্ব দরকার। বড় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দরকার। ‘ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতি এবং উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে মীরজাদী সেব্রিনা এ কথা বলেন। রাজধানীর মহাখালীতে নিপসমের সভাকক্ষে শনিবার এ সভার আয়োজন করা হয়। আয়োজক প্রতিষ্ঠান এপিডেমিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইপাব)। মীরজাদী সেব্রিনা এই সংগঠনের সভাপতি। তিনি করোনা মহামারির শুরুতে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক ছিলেন। সেই সময় করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আইইডিসিআরের তথ্য ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
নভেম্বরের শেষ এখন। এই সময়ে এসেও ডেঙ্গুর প্রকোপ কমেনি। এরমধ্যে সাইক্লোনের কারণে মাঝেমধ্যে বৃষ্টিপাত হওয়ায় এডিস মশার বংশ বিস্তার থেমে থাকছে না। তাই এ বছর প্রলম্বিত হচ্ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। প্রথমে সামান্য তৎপরতা চালালেও এখন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা যেন ভুলেই গেছেন সমস্যাটি। এইসব প্রতিষ্ঠানের দায়সারা আচরণের কারণে ভুগতে হয় পুরো নগরবাসী তথা দেশবাসী। এই খামখেয়ালির অবসান হোক।
মতামত