ঝাউতলা রেলগেটে বাস-ট্রেন-সিএনজি সংঘর্ষ
নিজস্ব প্রতিবেদক »
নগরীর জাকির হোসেন রোডে খুলশী ঝাউতলা রেল ক্রসিংয়ে বাস, টেম্পো-সিএনজি ও ডেমু ট্রেনের সংঘর্ষে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে দশটায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় নয়জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন পুলিশের ট্রাফিক কনস্টেবল এবং দুজন টেম্পোর যাত্রী ছিল। এ দুই যাত্রীর মধ্যে একজন চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন।
দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন ৪৯টি পুরস্কারপ্রাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল মো. মনিরুল ইসলাম (৪৪), টেম্পোর যাত্রী ডালিয়া কনস্ট্রাকশনের সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার বাহাউদ্দিন সোহাগ (২৮) ও পাহাড়তলী কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সাতরাজ উদ্দীন শাহীন (১৯)। অপরদিকে আহতরা হলেন টেম্পো যাত্রী জমির হোসেন (৪৮), শহীদুল ইসলাম (৪০), মোহাম্মদ (১০), টেম্পো ড্রাইভার খুলশী কলোনির কবির (৩৫), স্থানীয় আবুল হাসেম (৬৫)। সিএনজি ড্রাইভারের নাম জানা যায়নি। জয়নাল আবেদিন (২৬), জোবাইরা (২১), আফনান (৭) ও সুমিমা (৮) ছিলেন ওই সিএনজিতে।
দুর্ঘটনার পর সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর খুলশী ঝাউতলা রেল ক্রসিংয়ে এলাকায় দুর্ঘটনা কবলিত বাস সড়কের মাঝে আড়াআড়িভাবে পড়ে আছে। পাশেই দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা। রাস্তা থেকে রেল লাইন ধরে প্রায় ৩৫ ফুট দূরত্বে বস্তির সামনে একটি ভাঙা টেম্পো। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত টেম্পোর এক আহত যাত্রীকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন বস্তির এক নারী শায়েলা বেগম। তিনি বলেন, ‘ট্রেন আসার সময় ক্রসিংয়ের ব্যারিয়ার না নামিয়ে গেটম্যান বাইট্টা আলমগীর (মো. আশ্রাফুল আলমগীর ভূইয়া) ওপারে চা খাচ্ছেন। ট্রাফিক পুলিশ মনির ভাই সামনে থাকা টেম্পো ও সিএনজিকে রেললাইনে উঠতে বাধা দিচ্ছিল। ট্রেন আসা মাত্রই একটি ৭ নম্বর বাস সিএনজিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়।
তিনি আরো বলেন, পলক পড়তেই ট্রেন এবং বাসের মাঝে পড়ে সিএনজিটি ধুমড়ে-মুচড়ে যায়। ট্রেনের ধাক্কায় বাস ঘুরে যায়। বাসের পেছনের অংশের ঠেলায় টেম্পোটি ট্রেনের সঙ্গে লেগে যায়। ট্রেনের ধাক্কায় টেম্পোটি অনেকদূরে গিয়ে ছিটকে পড়ে। এসময় ট্রাফিক মনির ভাই সিএনজির নিচে চাপা পড়ে, একজন ট্রেনের চাকায় পিষ্ট হন, আরেকজন ছিটকে পড়া টেম্পোর ভেতরে আটকে থাকে। দ্রুত টেম্পোতে আটকে পড়া মানুষটিকে আমি নিজে টেনে হিঁচড়ে বের করি। এসময় আলমগীরকে দৌড়ে পালাতে দেখা গেছে।’
দুর্ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের টিম উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেন। বাসে থাকা যাত্রীদের তেমন কোন ক্ষতি না হলেও টেম্পোতে থাকা দুজন যাত্রী মারা যান। অন্যরা গুরুতর আহত হন। সাপ্তাহিক রোস্টারিং ডিউটির শেষদিনে ডিউটি করতে এসে লাশ হয়ে ঘরে ফিরলেন পুলিশ কনস্টেবল মো. মনিরুল ইসলাম। নিহতদের মধ্যে সাতরাজ উদ্দীন ছিলেন পাহাড়তলী কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগের উচ্চ মাধ্যমিকের পরিক্ষার্থী। কলেজ ক্যাম্পাসে বিএনসিসি কার্যালয়ে যাওয়ার পথেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এদিকে সিএনজি অটোরিকশাতে থাকা ৪ যাত্রী ও চালক প্রাণে বেঁচে গেছেন। সিএনজিতে থাকা সৌদি প্রবাসী জয়নাল আবেদিন গত বুধবার আকদ শেষ করে সদ্য বিবাহিত স্ত্রী এবং দুই ভাগিনা ভাগ্নিকে নিয়ে বেড়াতে এসে এ দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন। তবে মিরাকল ঘটেছে এ নব দম্পতির সাথে।
এসময় গেটম্যানকে দোষারোপ করে অন্য একজন স্থানীয় অভিযোগকারী বলেন, ‘এখানে লম্বা ও বাইট্টা আলমগীর দুজন গেটম্যান আছে। তাদের মধ্যে নেশাগ্রস্ত বাইট্টা আলমগীর সব সময় দায়িত্বে অবহেলা করে। নেশার ঘোরে সে আশেপাশে থাকা ছোট ছেলেদের চকলেট দিয়ে গেট খোলা বাধা করায়। বেশিরভাগ সময় গেট না লাগিয়ে হাতের ইশারায় কাজ চালিয়ে নেয়। তার এমন অবহেলায় এতো মানুষের প্রাণ গেছে।’
চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ সুপার হাসান চৌধুরী সুপ্রভাতকে বলেন, ‘রেলওয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল গফুরকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে রাখা হয়েছে সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) ও রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে। তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।’
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘রেলক্রসিংয়ে গেট থাকলেও তা বন্ধ করেনি। এর মধ্যে রাস্তার গাড়িগুলো রেললাইনের কাছে চলে আসে। দুটি রেললাইন থাকায় আর গেট বন্ধ না করায় গাড়ির চালকরা ভেবেছিলেন রেল অন্য লাইন দিয়ে যাবে। কিন্তু পেছন থেকে আসা বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং টেম্পো দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।’