আজ থেকে ৮০ টাকা ধরে বিক্রি হবে খেজুর
রুমন ভট্টাচার্য <
কারও প্রয়োজন তেল, চিনি, কারও ডাল, পেঁয়াজের দরকার নেই। আবার কারও পেঁয়াজ প্রয়োজন, অন্য পণ্য লাগবে না। কিন্তু টিসিবি ডিলারদের ট্রাক থেকে পণ্যগুলো চাহিদা অনুযায়ী কিনতে পারছেন না ক্রেতারা। একসঙ্গে প্যাকেজের মতো সব পণ্য কিনতে হচ্ছে বাধ্যতামূলকভাবে। ৭৯৫ টাকার প্যাকেজে পণ্য কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
নগরে টিসিবির পণ্য বিক্রিতে এমন তুঘলকি কারবার চললেও দেখার যেন কেউ নেই। এতে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ভোগান্তি পোহাচ্ছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের ক্রেতারা।
এদিকে, আজ থেকে টিসিবির ট্রাকে যুক্ত হচ্ছে খেজুর। প্রতিকেজি বিক্রি করা হবে ৮০ টাকা দরে। একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ১ কেজি খেজুর নিতে পারবেন।
জানা যায়, পবিত্র রমজান উপলক্ষে নগরের বিভিন্ন স্পটে ৩০টি ট্রাকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) পণ্য বিক্রি শুরু করেছে ডিলারদের মাধ্যমে। ট্রাকে সাদা চিনি প্রতিকেজি ৫৫ টাকা, মসুর ডাল ৫৫ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন ১০০ টাকা লিটার, ২০ টাকায় তুরস্কের বড় পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে।
টিসিবি জানায়, প্রতিটি ট্রাকে ৪০০ কেজি ছোলা, ৮০০ কেজি চিনি, ১২শ লিটার সয়াবিন তেল, ৬০০ কেজি মসুর ডাল, ১ টন পেঁয়াজ দেওয়া হয়েছে। আর খেজুর থাকবে ১০০ কেজি।
ক্রেতাদের অভিযোগ টিসিবির পণ্য প্যাকেজ ছাড়া মিলছে না। তেল কেনায় বাধ্যতামূলক পেঁয়াজ, ডাল, চিনি ও ছোলা নিতে হচ্ছে। না হয় পণ্য দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া ৫ কেজি পেঁয়াজে প্রায় দেড় থেকে ২ কেজি কেজি পঁচা পড়ছে। এছাড়া ওজনেও দেওয়া হচ্ছে কম। ট্রাকের ভেতর থেকে মেপে পণ্য দেওয়া হচ্ছে ফলে ক্রেতাদের দেখার কোনো সুযোগ থাকছে না। বাইরে গিয়ে ওজন করা হলে ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম কম পাওয়া যাচ্ছে।
টিসিবি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক প্রধান জামাল উদ্দিন জানান, এমন কোনো নিয়ম নেই। যার যে পণ্য প্রয়োজন তিনি সেই পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। এ বিষয়ে ডিলারদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিভিন্ন স্পট ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি ট্রাকেই টিসিবির পণ্য প্যাকেজেই বিক্রি করা হচ্ছে। টিসিবির সেই নির্দেশনা কোনো ডিলারই মানছে না। কেউ শুধু একটি বা দু’টি পণ্য চাইলে তাকে ফেরত দিচ্ছে। এছাড়া টাকা ভাংতি করে নিয়ে আসতে বলা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, চকবাজারে টিসিবির পণ্য বিক্রয়কারী ডিলারের নাম মেসার্স গাউসে পাক বাণিজ্য সংস্থা। তারাও পণ্য বিক্রি করছেন প্যাকেজে। ৭৯৫ টাকা প্রতি প্যাকেজ। এর বাইরে কাউকে দেওয়া হচ্ছে না। টাকাও ভাংতি রাখতে বলা হচ্ছে ক্রেতাদের। ভাংতি টাকা না থাকলে তাতেও দিতে গড়িমসি করা হচ্ছে। একইচিত্র দেখা গেল আন্দরকিল্লা, জামালখান ও বহদ্দারহাটেও।
প্যাকেজের বিষয়ে বিক্রয়কারীদের কাছে জানতে চাইলে তারা ডিলারের সাথে কথা বলতে বলেন। পরে মেসার্স গাউসে পাক বাণিজ্য সংস্থার ডিলারের নম্বরে কল করা হলেও বারবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
চকবাজারে টিসিবির পণ্য কিনতে আসা গৃহিনী আসমা সুলতানা জানালেন, বাজারের চেয়ে কম মূল্যে পণ্য পাওয়া বলে এখানে এসেছেন। সয়াবিন তেল নিতে চান। কিন্তু পেঁয়াজ বা অন্য পণ্যগুলো কেনার টাকা তার কাছে নেই। অথচ এগুলো নিতে না চাওয়ায় তাকে খালি হাতে ফেরত দেওয়া হলো। বিক্রয়কর্মী বলেছেন সবই নিতে হবে। একই অবস্থা অন্যদের ক্ষেত্রেও। এমন ভুক্তভোগীর সংখ্যা অনেক।
জামালখানে সমীর দাশ নামে একজন ক্রেতা বলেন, ‘আমি শুধু ডাল ও তেল নিতে চাইলাম। কিন্তু বিক্রয়কর্মীরা জানালেন সব নিতে হবে। আমার ঘরে অন্যসব পণ্য আছে। যা প্রয়োজন তাই নেব। কিন্তু এখানে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যা সাধারণ মানুষের জন্য কষ্টের। এসব বিষয়ে কাউকে অভিযোগ করার কোনো সুযোগ নেই।’ টিসিবি কর্মকর্তাদের তদারকি বাড়ানো প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক প্রধান জামাল উদ্দিন বলেন, ‘সরকার সাধারণ মানুষের সর্বোচ্চ সুবিধার জন্যই কম দামে টিসিবির মাধ্যমে নিত্যপণ্য বিক্রি করছে। প্যাকেজে পণ্য বিক্রি করা যাবে না। অভিযোগ উঠার পর এ ব্যাপারে ডিলারদের মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। এরপর এমন করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে অভিযুক্ত ডিলারের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।’