দেশে টিকার সংকট কাটতে শুরু করেছে, ফলে করোনার বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কিছুটা হলেও ইতিবাচক ফল মিলতে পারে। গণমাধ্যমের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেল, চীনের সাথে চুক্তি হওয়া দেড় কোটি ডোজ টিকার ২০ লাখ ডোজ দেশে এসেছে। এছাড়া চীন ১১ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে দিয়েছে। কোভ্যাক্স থেকে এসেছে ফাইজারের ১ লাখ ৬২০ ডোজ ও মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ। মডার্নার টিকা আমেরিকা দিয়েছে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে। জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রোজেনেকার ৩৫ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া যাবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এ সপ্তাহে বা আগামী সপ্তাহে জাপান কোভ্যাক্সের আওতায় ২৫ লাখ ডোজ চালান পাঠাবে মর্মে সাংবাদিকদের জানান। অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রোজেনেকার যে ১৫ লাখ প্রথম ডোজ গ্রহীতা শঙ্কায় ছিলেন, তা কেটে যাবে। কোভ্যাক্সের আওতায় ইউরোপ দেবে ১০ লাখ ডোজ। রাশিয়ার উদ্ভাবিত টিকা স্পুটনিক ভি কিনতে বাংলাদেশ চুক্তি সম্পন্ন করেছে মর্মে গত মঙ্গলবার জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক। বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে টিকা উৎপাদনে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলি কাজ করছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে টিকা পাওয়ার এসব বিষয় সবিস্তারে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভারতের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সেরাম ইনস্টিটিউট চুক্তি হওয়া ৩ কোটি ডোজ টিকার অবশিষ্ট ডোজ যথানিয়মে পাঠাবে বলে আমরা আশা করি। টিকা নিয়ে বৈশ্বিক অপকূটনীতি থাকা বাঞ্ছনীয় নয়, বিশ্বের ধনী দেশগুলি যেভাবে টিকা মজুদ করেছে, তাতে অনেক টিকাই মেয়াদউর্ত্তীণ হয়ে যেতে পারে। তারা যে সব দেশে টিকা প্রয়োজন তাদের দিলে প্রাণহানি কমবে। করোনা উত্তর বিশ্বব্যবস্থায় সমতা ও ন্যায্যতা আনতে উন্নত দেশগুলির যথাযথ ভূমিকা বিশ্ববাসী দেখতে চায়।
টিকা প্রাপ্তির এই অবস্থায় দেশে টিকা কার্যক্রম পুনরায় গতি পেয়েছে, নিবন্ধন কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বয়সসীমাও শিথিল করে ৩৫ বছর করা হয়েছে। জেলা-উপজেলায় করোনা সামাজিক সংক্রমণ দেখা দেওয়ায়, টিকা কার্যক্রম উপজেলা-গ্রামাঞ্চলে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। মানুষদের টিকা নিতে উদ্ধুদ্ধ করতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে নিবন্ধন করার ব্যবস্থা সুফল দেবে। করোনার বিভীষিকা দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সীমাবদ্ধতা। এ ক্ষেত্রে কোনোরূপ বৈষম্য থাকা উচিত নয় বরং দেশের সকল মানুষ যাতে সহজে ও সুলভে স্বাস্থ্যসেবা পায় সে লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে হবে।
দেশের অধিকাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে টিকা উৎপাদনকারী দেশ ও প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ অব্যাহতভাবে চালিয়ে যেতে হবে সেই সাথে দেশে যাতে করোনার টিকা উৎপাদন করা যায় সে ব্যাপারে দেশীয় সক্ষমতা জোরদার করতে হবে। আবার অন্য দেশের সাথে যৌথভাবে উৎপাদনে যেতে সচেষ্ট হতে হবে। টিকা উৎপাদনে আমাদের সক্ষমতার কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিপূর্বে বলেছেন।
মনে রাখতে হবে জীবন জীবিকা ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আমাদের টিকা নেওয়া যেমন অপরিহার্য তেমনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। মাস্ক পরিধান করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন-এসব বিষয় আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অবশ্য কর্তব্য হিসেবে বিবেচনায় নিতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়