স্পোর্টস ডেস্ক »
মুস্তাফিজের শেষ ওভারে বেশি রান দেয়ার হিসাব চুকলো ম্যাচের শেষ বলে। শেষ বলেই ম্যাচ হারল ৩ রানে। হিসাব না মেলাতে পারার ব্যর্থতাতেই এ হার। জয়ের খুব কাছে গিয়েও জয়ের দেখা পেলো না বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের হৃদয় ভাঙা হার। শেষ ওভারে ১৩ রানের সমীকরণ মিলল না। আন্দ্রে রাসেলের শেষ বলটা আর ব্যাটে লাগাতে পারলেন না অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এর আগের ওভারে জেতার পরিস্থিতি তৈরি করে দেওয়া লিটন দাস ধরে পড়েন বাউন্ডারি লাইনে। কঠিন উইকেটে একটা বড় সময়ে ম্যাচে থেকেও বাংলাদেশের জেতা হলো না।
শুক্রবার শারজাহতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের করা ১৪২ রানের জবাবে ১৩৯ রানে থেমেছে লাল সবুজের বাংলাদেশ।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ক্যাচ ছেড়ে সমালোচনায় বিদ্ধ লিটনই করেন ৪৩ বলে সর্বোচ্চ ৪৪ রান। বাউন্ডারি লাইনে ধরা না পড়লে তিনি হতে পারতেন নায়কও। মাহমুদউল্লাহ ২৪ বলে অপরাজিত থাকেন ৩১ রানে। ১৩ বলে ১৭ করেন সৌম্য সরকার, নাঈম শেখ ১৭ রান করেন ১৯ বলে।
একটা সময় ম্যাচ জিততে শেষ ৫ ওভারে চাই ৪৪, হাতে ৬ উইকেট। টি-টোয়েন্টিতে এমনিতে সহজ সমীকরণই। তবে শারজাহর মন্থর উইকেটের বিচারে কাজটা সহজ ছিল না। ১৬তম ওভার থেকে আসে ১১ রান। ম্যাচ কিছুটা বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকতেই পরের ওভারে ডোয়াইন ব্রাভো দেন মাত্র ৩ রান। পরের ওভারে আসে আরও ৮ রান।
ব্রাভোর করা ১৯তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মেরেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ বলে ছক্কায় রাঙাতে পারতেন লিটনও। ব্রাভোর ওয়াইড লাইনের বল ঠিকমতো লাগিয়েছিলেনও ব্যাটে। ছক্কার দিকে ছুটে যাওয়া বল উচ্চতার সুবিধা কাজে লাগিয়ে ছোঁ মেরে হাতে জমিয়ে বাংলাদেশকে স্তব্ধ করে দেন জেসন হোল্ডার। আফিফ হোসেন নেমে ২ বলে অপরাজিত থাকেন ২।
রান তাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা হয় দেখেশুনে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার ওপেন করতে নেমে সাকিব আল হাসান ছাপ রাখতে পারেননি যদিও।
পঞ্চম ওভারে আন্দ্রে রাসেলের বলে সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন নাঈম। ১২ রানে তার সহজ ক্যাচ রাখতে পারেননি হেইডেন ওয়ালশ জুনিয়র। স্ট্রাইক পেয়ে ঠিক পরের বলেই মিড অনে সহজ ক্যাচ উঠিয়ে বিদায় নেন ১২ বলে ৯ করা সাকিব। ২১ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
ছন্দে থাকা নাঈম এদিন পারেননি। একবার জীবন পেয়েও থামেন ১৭ রান। হোল্ডারের বলে স্টাম্পে টেনে ফিরলে পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশও তোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সমান ২৯ রান।
এরপর জুটি বাঁধেন সৌম্য সরকার আর লিটন। তৃতীয় উইকেটে তাদের জুটিতে আসে ৩১ রান। জুটিতে লিটন ছিলেন কিছুটা শ্লথ। সৌম্যই বাড়িয়েছেন রান। তাকে বেশ সাবলীল লাগছিল। তবে আকিল হোসেনের বলে টাইমিংয়ে গড়বড় করে ফেরেন ১৭ রানে। ১৩ বলের ইনিংসে মারেন দুই চার।
এরপর লিটন কিছুটা ডানা মেলে খেলতে থাকেন। পাঁচে নেমে মুশফিকুর রহিম এক চারে থামান তার লড়াই। রবি রামপালের বলে স্কুপ করতে গিয়ে হন বোল্ড।
তবে মাঝের ওভারে খেলা ধরে রেখে জেতার আশা বাঁচিয়ে রাখেন লিটন। তার সঙ্গে যোগ দিয়ে সেই আশার পালে হাওয়া দেন অধিনায়ক। কিন্তু শেষে গিয়ে মেলেনি সমীকরণ। বাংলাদেশ পোড়ে হৃদয় ভাঙার বেদনায়।
টস জিতে আগে বল করতে নেমে শুরুতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চেপে ধরে বাংলাদেশ। এবার বিশ্বকাপে ভুগতে থাকা ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা খাবি খান বাংলাদেশের বোলারদের বিপক্ষেও।
তৃতীয় ওভারে প্রথম উইকেট পান মোস্তাফিজুর রহমান। তুলে মারতে গিয়ে টাইমিং পাননি আগের ম্যাচে ফিফটি করা এভিন লুইস। মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ জমান মুশফিক। অনেকদিন ধরে ভুগতে থাকা ক্রিস গেইল কোনোভাবেই রান বের করতে পারছিলেন না। অফ স্পিনে নিজের দুর্বলতা জানান দিয়ে এবারও শেখ মেহেদীর বলে স্টাম্প ভাঙে তার।
পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৯ রান তুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের ওভারেই অভিষিক্ত রোস্টন চেজ শেখ মেহেদীর বলে তার হাতেই সহজ ক্যাচ দিয়ে বেঁচেছিলেন। কিন্তু পরের বলেই অবশ্য চলে আসে বড় উইকেট। মেহেদীকে উড়াতে গিয়ে লং অফে সৌম্যর সহজ ক্যাচে পরিণত হন শিমরন হেটমায়ার। মাত্র ৩২ রানেই ৩ উইকেট পড়ে ক্যারিবিয়ানদের। রানের চাকাও তখন বেশ শ্লথ।
৯ রানে জীবন পাওয়া চেজ টিকে থাকলেও সেই চাকা আর গতি পায়নি। অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড নেমে কোনভাবেই বাড়াতে পারছিলেন না রানের চাকা। আসছিল একের পর এক ডট বল। ১৩তম ওভারে ঘটে বিস্ময়কর ঘটনা। ১৬ বলে ৮ করে ধুঁকতে থাকা পোলার্ড নিজেকে স্বেচ্ছায় সরিয়ে নেন। ঠিক পরের বলেই কোনো বল না খেলেই দুর্ভাগ্যজনক রান আউটে কাটা পড়েন আন্দ্রে রাসেল।
সাতে নেমে নিকোলাস পুরান তুলেন ঝড়। একবার অবশ্য স্টাম্পিংয়ের হাত থেকে বেঁচেছেন। তবে বাকিটা সময় মাতিয়েছেন। সাকিবকে মারেন দুই ছক্কা, শেখ মেহেদীকে আরও দুটি। ১৯তম ওভারে তার ২২ বলে ৪০ রানের ইনিংস থামান শরিফুল ইসলাম। ঠিক পরের বলেই বোল্ড হয়ে যান ৪৫ বলে ৩৯ করা রোস্টন চেজ। তার আগে এই ব্যাটসম্যানের আরেক দফা ক্যাচ ছাড়েন শেখ মেহেদী।
নয় নম্বরে নামা জেসন হোল্ডারেরও মূল্যবান ক্যাচ পড়ে ওই ওভারে। এবার ফেলে দেন আফিফ। হোল্ডার পরে দুই ছক্কায় মাত্র ৫ বলেই করে ফেলেন ১৫ রান। ক্রিজে ফিরে পোলার্ডও মোস্তাফিজকে মারেন ছক্কা। তিন ছয়ে শেষ ওভার থেকে আসে ১৯ রান। ওই রানই শেষ পর্যন্ত গড়ে দেয় ব্যবধান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৪২/৭ (গেইল ৪, লুইস ৬, চেজ ৩৯, হেটমায়ার ৯, পোলার্ড ১৪*, রাসেল ০, পুরান ৪০, ব্রাভো ১, হোল্ডার ১৫*; শেখ মেহেদী ২/২৭, তাসকিন ০/১৭, মোস্তফিজ ২/৪৩, শরিফুল ২/২০, সাকিব ০/২৮)
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৯/৫ (নাঈম ১৭, সাকিব ৯, লিটন ৪৪, সৌম্য ১৭, মুশফিক ৮, মাহমুদউল্লাহ ৩১*, আফিফ ২*; রামপাল ১/২৫, হোল্ডার ১/২২, রাসেল ১/২৯, আকিল ১/২৪, ব্রাভো ১/৩৬)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নিকোলাস পুরান।