নিজস্ব প্রতিবেদক »
আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা রক্ষায় বৈদেশিক বাণিজ্যে আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিং নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ব্যাংকিং সেক্টরের সবাইকে একযোগে এথিক্যাল ব্যাংকিং অনুশীলন করতে হবে। পাশাপাশি এ খাত নিয়ে সৃষ্ট গুজব মোকাবেলায় একযোগে কাজ করতে হবে। এথিক্যাল ব্যাংকিংয়ে ব্যাংকার্সদের সুর যেন এক হয়।’
গতকাল কোতোয়ালীর বাংলাদেশ ব্যাংকের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত চট্টগ্রামের সকল ব্যাংকের আঞ্চলিক প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এলসি খোলার ক্ষেত্রে পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে যাচাই করতে হবে। আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখেছি, রমজানের পণ্য আনতে অনেক আমদানিকারকরা এলসি খুলতে পারছে না। দেখা গেছে, কিছু কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠান এলসি খুলতে পেরেছে। অন্যরা খুলতে পারেনি। এমন যেন না হয়। বিলাসী পণ্য বাদ দিয়ে জরুরি পণ্য আমদানিতে উৎসাহিত করতে হবে। এরমধ্যে রমজান যেহেতু সামনে তাই এ বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। ছোট ব্যবসায়ীও যেন আমদানির সুযোগ পায়।’
খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ নিয়ে যেন কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া না হয়। এ বিষয়ে যদি কোনো ব্যাংকের শৈথিল্য দেখি, তাহলে অবশ্যই প্রধান কার্যালয় বরাবরে লিখবো। এ নিয়ে সকলেকে কঠোর হতে হবে। পাশাপাশি সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন বিনিয়োগের দিকে প্রধান্য দিচ্ছে। তাই বিনিয়োগকারীরা যেন কম সুদে ঋণ পায়। এ বিষয়টি আপনার অবশ্যই দেখবেন। এছাড়া কৃষি উৎপাদন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পেও জোর দিতে হবে।’
আমদানি ও রপ্তানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আনইউজুয়্যাল এক্সপোর্ট ও ইমপোর্টে যেন কোনো সুযোগ দেওয়া না হয়। এলসি খুলতে ট্র্যারিফ মূল্য নিয়ে এনবিআরের নির্দেশনায় যদি কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে আপনারা আমাকে লিখিতভাবে তা জানাবেন। আমি সেটা প্রধান কার্যালয় বরাবরে পাঠাবো। আনইউজুয়্যাল এক্সপোর্ট ও ইমপোর্টে যেন আপনাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা না থাকে। এছাড়া শেল ব্যাংকের সাথে এলসি খোলা বন্ধ করা, রপ্তানিমূল্য দ্রুত প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করা, হুন্ডি প্রতিরোধ এবং রেমিট্যান্স বৃদ্ধির লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
হু-ি ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হু-ি ব্যবসায়ীরা ব্যাংকিংয়ের শত্রু। এ বিষয়টি আপনারা সকলেই জানেন। হু-ি ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করার জন্য আগে পরামর্শ দিয়েছিলাম। প্রতিবেদন জমা করার কথা থাকলেও কোনো ব্যাংক তা করেনি। আপনারা যদি আমাদের কাছে রিপোর্টগুলো পাঠান, তাহলে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আমরা হু-ি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বের সাপ্লাই চেইন বিঘিœত হওয়ার এবং চলমান বৈশ্বিক সংকটে দেশে খাদ্য চাহিদা মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত বিভিন্ন কৃষি ও সিএমএসএমই খাতের প্রদত্ত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় প্রকৃত কৃষক ও সঠিক উদ্যোক্তা বাছাই করে দ্রুত বিতরণের বিষয়ে তিনি পরামর্শ দেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের উদ্যোগে ‘বৈদেশিক বাণিজ্য ও আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা’ শীর্ষক এ মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম অফিসের আওতাধীন তফসিলি ব্যাংকসমূহের আঞ্চলিক প্রধান এবং বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম অফিসের পরিচালক মো. নুরুল আলম, মোহাম্মদ সেলিম, সগির আহমেদ শরিফ এবং অতিরিক্ত পরিচালক মো. সোহরাব হোসেন, অসীম কুমার চৌধুরী, মো. মাহবুবুর রহমানসহ সুপারভিশন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট শুভ্র কান্তি সাহা, পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের আঞ্চলিক প্রধান আবদুর রহিম, উরি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট খোরশেদ কাদের চৌধুরী, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া চট্টগ্রাম শাখার হেড অব ক্রেডিট সৌমিত্র বড়–য়াসহ বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।