নিজস্ব প্রতিবেদক »
সীতাকুণ্ডের জঙ্গল ছলিমপুরে ৪০ একর জায়গায় সাফারি পার্ক গড়ে তুলবে জেলা প্রশাসন। এটি হবে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার সম্প্রসারণ।
একইসাথে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানাকেও আরো আধুনিকায়ন করা হবে। একইসাথে এখানে প্রজাপতি পার্ক ও নাইট জু গড়ে তোলা হবে। গতকাল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার সম্মেলন কক্ষে রাজ ও পরি নামক বাধ দম্পতির ঘরে চারটি বিরল প্রজাতির সাদা বাঘ শাবক জন্ম নেয়া উপলক্ষে এসব পরিকল্পনার কথা বলেন জেলা প্রশাসক মমিমুর রহমান।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেছেন, চলতি ৩০ জুন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা রাজ ও পরি নামক বাঘ দম্পতি থেকে ৪টি বিরল প্রজাতির সাদা বাঘ শাবক জন্ম নেয়। বাঘ শাবকগুলোর নাম দেয়া হয়েছে-পদ্মা, মেঘনা, হালদা ও সাঙ্গু। একই দম্পতির ঘরে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ২০১৮ সালে বাংলাদেশে জন্ম নেয়া প্রথম সাদা বাঘটি পর্যটকদের জন্য বিশেষ একটি আকর্ষণ। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এটি দেখতে ভিড় করছে। এ চিড়িয়াখানায় বর্তমানে ১৬টি বাঘ রয়েছে, তন্মধ্যে ৫টি বিরল প্রজাতির সাদা বাঘ যা একটি অনন্য নজির।
জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে চিড়িয়াখানার সার্বিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সুশাসনের ক্ষেত্রে একটি অনন্য নজির স্থাপন করেছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, চিড়িয়াখানার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বাঘ ও জেব্রা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া এখানে রয়েছে-ভল্লুক, সিংহ, হরিণ (চিত্রা, সাম্বার, মায়া), উল্লুক, বানর, মেছো বিড়াল, চিতা বিড়াল, অজগর, বাঘদাশ, উঠপাখি, ইমু পাখি, গয়াল, কুমির, ময়ূর, ঘোড়া, বক ও টিয়াসহ ৬৬ প্রজাতির ৬২০টি পশুপাখি আছে। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে ২০১৯ সালে দলগতভাবে বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক অর্জন করে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান আরো বলেন, চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন প্রকার অবকাঠামোগত সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং নতুন নতুন প্রাণি ক্রয় ও সংগ্রহের মাধ্যমে চিড়িয়াখানার পর্যটন সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে ব্যাপক হারে চিড়িয়াখানায় দর্শক সমাগম হচ্ছে ও প্রতিষ্ঠানটির আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি অনুদান কিংবা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অনুদান ছাড়া শুধুমাত্র টিকেট বিক্রির টাকা দিয়ে চিড়িয়াখানার সকল অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ, পশু-পাখির খাদ্য ব্যয়, ওষুধ ও পরিচর্যা ব্যয়, প্রাণি ক্রয় ও সংগ্রহ বাবদ ব্যয় এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন নির্বাহ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্কের মধ্যে সব চেয়ে বেশি বাঘ এখন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়। এছাড়া চিড়িয়াখানায় গড়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম প্রাকৃতিক এভিয়ারি (পক্ষীশালা) যেখানে ৩ শতাধিক পাখি রয়েছে। এ চিড়িয়াখানা আরও যুগোপযোগী করতে নানান পরিকল্পনা রয়েছে।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মো. বদিউল আলম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. সুমনী আক্তার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মো. মাসুদ কামাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আবু রায়হান দোলন, এনডিসি মো. তৌহিদুল আলম, কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. উমর ফারুক, স্টাফ অফিসার টু ডিসি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্লাবন কুমার বিশ্বাস ও চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ।
উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী আব্দুল মান্নানের উদ্যোগে ও জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দ্বারা ৫ একর (বর্তমানে ১০.২ একর) জমির উপর চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় এর মূল উদ্দেশ্য ছিল চট্টগ্রাম জেলার মানুষের জন্য একটি চিড়িয়াখানা তৈরি তথা বিনোদনের ব্যবস্থা করা।