গত শুক্রবার চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ১৪ দলের আহ্বায়ক খোরশেদ আলম সুজন ছাত্রলীগের সভাপতিকে ফোন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরার অনুরোধ করেন। পরে তিনি গণমাধ্যমে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কিছু নেতার কারণে ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসনের দুর্বলতার কারণেই কিছু অছাত্র অপকর্মে জড়াচ্ছেন। তাঁদের কর্মকা-ে সরকার ও দল বিব্রত।’
কতটা অসহায় হলে নিজ দলের ছাত্র সংগঠন নিয়ে এমন আহ্বান জানাতে পারেন একজন সিনিয়র নেতা তা ভাববার বিষয়।
ছাত্রলীগকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনটির নেতা-কর্মীরা বারবার নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি, হলের কক্ষ দখল, কর্মকর্তাদের মারধর, যৌন হয়রানি, ভাঙচুর ও শিক্ষক-ঠিকাদারদের হুমকি দিয়ে বিতর্কিত হচ্ছে। অধিকাংশ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
সবচেয়ে বড় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে ৭ সেপ্টেম্বর রাতে। সেদিন কিছু শিক্ষার্থী শাটল ট্রেনের ছাদে চড়ে যাওয়ার সময় হেলে পড়া গাছের ধাক্কায় আহত হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাতে ভাঙচুর করা হয় উপাচার্যের বাসভবন, পুলিশ বক্স, শিক্ষক ক্লাব। ভাঙচুর করা হয় ৬৫টি যানবাহন। এসব ঘটনায় ১২ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে দুটি মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে এখনো একজনকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
সর্বশেষ গত রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একটি পক্ষ একজন সাংবাদিককে বেধড়ক মারধর করে। এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি।
ছাত্রলীগের লাগাতার বিতর্কিত কর্মকা- নিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন সরকারে থাকায় দেখা গেছে বহু অছাত্র কোনো ধরনের আদর্শের পরোয়া করছেন না। অছাত্রদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বারবার বলা হলেও কাজ হচ্ছে না। হল থেকে অছাত্রদের বের করে দিলে সংঘর্ষ ৯০ শতাংশ কমে যাবে।’
এর পাশাপাশি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, ‘কী অদৃশ্য কারণে অপকর্মে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারে না, তা জানা নেই। আমি বারবার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলি। আমি এসব নিয়ে ক্ষুব্ধ।’
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতির দুই প্রভাবশালী নেতা যদি এমন কথা বলে থাকেন গণমাধ্যমে তাহলে ছাত্রলীগকে কেন নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনের বাধা কোথায় তা আমরা বুঝতে পারছি না। আর কতদিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীরা কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল বখাটের হাতে জিম্মি হয়ে থাকবে। শিক্ষার পরিবেশ স্থবির হয়ে থাকবে। এবার এই অরাজকতার অবসান হোক।
এ মুহূর্তের সংবাদ