শুভ্রজিৎ বড়ুয়া »
ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বাইপাস সড়কের ছয় নম্বর কালভার্টটি বসানো হয়েছে কালীর ছড়ার পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে। কিন্তু এ ছড়া পথের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে স্থানীয়রা। আর তাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম। দীর্ঘদিন ধরে এ ঘটনা ঘটলেও পরিবেশ অধিদপ্তর নীরব।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সুপারি বাগান এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের লেকসিটি আবাসন প্রকল্পটির দক্ষিণ-পশ্চিমে এই এলাকায় অবস্থিত। পাহাড়ে ঘেরা এ এলাকার সামান্য কিছুদূর উত্তরে গেলেই ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বাইপাস সড়ক। স্থানীয়রা চলাচলের পথ তৈরি করতে কেটেছে পাহাড়, রোধ করেছে কালীর ছড়ার গতিপথ।
আবার সুপারি বাগানের পূর্বে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের মূল ক্যাম্পাসের পশ্চিম অংশে দেখা যায়, সিডিএর আগে তৈরি করা লুপ রোডের কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। সেখানে কাটা পাহাড়ের দুই অংশে দুটি কালভার্ট বসানো হয়েছে। পশ্চিম অংশের কালভার্টটিতে দুটি ৩ ফুটের পাইপ ও পূর্ব অংশের কালভার্টটিতে ৪ ফুটের একটি পাইপ বসানো হয়েছে। কিন্তু পূর্ব অংশের কালভার্টের দক্ষিণমুখে নেই ছড়ার গতিপথ। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে সিমেন্টের ঢালাই করা একটি রাস্তা যা লেকসিটি আবাসিক এলাকাকে সংযুক্ত করেছে।
কাটা পাহাড়ে রাস্তা তৈরি সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলা হয় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের প্রকল্প পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মো. শাকিলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এ রাস্তাটি পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে। তবে এ পাহাড়টি আমরা কাটিনি। পাহাড়টি সিডিএ কেটে এখানে একটি সড়ক নির্মাণ করেছিলো ২০০৬ সালে। এমনকি ২০০৮ সালে এখানে পিচঢালা রাস্তাও ছিলো। কিন্তু পরে আমরা যখন সরকার থেকে জায়গাটি পাই, তখন সিডিএ বর্তমান বায়েজিদ বাইপাস রোড নির্মাণ করে। আর এ জায়গাটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। সময়ের সাথে সাথে রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় রাস্তাটি ওয়াশআউট হয়ে যায়। আমরা এখন এ রাস্তাটি কোনো পাহাড় না কেটে এবং পানি প্রবাহ বিঘিœত না করে তৈরি করছি। এটার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর আমাদের ডেকেছিলো। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই শুনানিতে আমরা পুরানো ছবিসহ আমাদের সকল কাগজপত্র দেখিয়েছি। তারাও বিষয়টি বুঝেছেন।’
পাহাড় কাটা নিয়ে সুপারিবাগান এলাকার আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) হিফজুল কোরআন মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক মো, সরফরাজ বলেন, ‘আগের তুলনায় এখানে মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। মানুষ শুধু থাকলে তো হবে না। তাদের চলাচলের পথও লাগবে। তাই কাউন্সিলর আমাদের জন্য রাস্তার ব্যবস্থা করেছেন। আর এ রাস্তার জন্য পাহাড়ের কিছু অংশ কাটা গেলেও মানুষের তো খারাপ হয়নি।’
একইভাবে কালীর ছড়ার পানি প্রবাহের জন্য নির্মিত পূর্ব পাশের কালভার্ট নিয়ে কথা বলা হয় মুজিবনগর এলাকার বাসিন্দা সোবাহানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাউন্সিলর তো যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো করার জন্যই রাস্তা করেছেন। আর এ ছড়া দিয়ে বর্ষাকাল ছাড়া তেমন পানি থাকে না। তাই রাস্তা করেছে। আর এ রাস্তা করা হয়েছে প্রায় তিন বছর হলো। প্রথমে কোনো কিছু না থাকলেও পরে আমাদের কাউন্সিলর ছড়া ঠিক রাখার জন্য পাশে একটা ড্রেন করেছে।’
পুরো বিষয়টি নিয়ে কথা হলে উত্তর পাহাড়তলী ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আপনি এসে দেখে যান, এখানে কারা রাস্তা করেছে। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি কত বড় রাস্তা করলো। এটা নিয়ে কেউ কোনো কথা বললো না। এখন সবাই শুধু আমার দোষ খুঁজছে। আমি কেন এ রাস্তা করতে যাবো। রাস্তা করার জন্য সিডিএ আছে, সিটি করপোরেশন আছে। কারো একার ইচ্ছায় তো আর রাস্তা করা সম্ভব না।’
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের প্রকল্প পরিচালকের বক্তব্যের সত্যতা জানতে কথা হয় সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ওই রাস্তাটা বায়েজিদ বাইপাস সড়কের আগে করা হয়েছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়টি ওখানে জায়গা পাওয়ার পর আমরা ওই সড়কটি আর সচল রাখতে পারিনি। এরপর বাইপাস সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগের সড়কটির ম্যাপ অনুযায়ী কাজ করছে।’
ছড়ার পথে রাস্তা নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ সংস্থাতো তো জনগণ থেকে ট্যাক্স নেয় না। সুতরাং কোনো প্রকল্প ছাড়া কোনো রাস্তা এ সংস্থা নির্মাণ কেন করবে। এটা ওখানকার কাউন্সিলর ভালো বলতে পারবে।’
একই প্রসঙ্গে কথা হলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘লেকসিটি আবাসন প্রকল্পে বর্তমানে সিটি করপোরেশনের কোনো প্রকল্প নেই। এছাড়া বায়েজিদ বাইপাস সড়কের সাথে অন্য কোন সড়কের সংযোগ করার প্রকল্প সিটি করপোরেশনের নেই।’
এ নিয়ে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদফতরের মহানগরের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে বহুবার ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি জবাব দেননি। এর মাঝে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘এ এলাকার একটি কেইস আমাদের পরিচালক মহোদয় ভালো জানবেন। আমি বিষয়টি বিস্তারিত যেহেতু জানি না, তাই কথা বলা ঠিক হবে না। তবে ওখানে ছড়ার গতিপথ রোধ করে সড়ক নির্মাণের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। কিছুদিন আগে আমরা ওখানে একটি অভিযান পরিচালনা করেছি। ওখানকার কাউন্সিলর পাহাড় কেটে গরুর ফার্ম করেছিলেন। সেটা আমরা ভেঙেছি।’