সুপ্রভাত ডেস্ক »
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এবারই ব্রিকসের সদস্যপদ পেতে হবে এমন কোনো চেষ্টা বাংলাদেশের ছিল না এবং বাংলাদেশ কাউকে সেটা বলেওনি। ‘চাইলে পাব না সেই অবস্থাটা আর নাই। কিন্তু প্রত্যেক কাজটারই একটা নিয়ম থাকে, আমরা সেই নিয়ম মেনেই চলি,’ বলেছেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকায় পঞ্চদশ ব্রিকস সম্মেলনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা জানাতে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন সরকারপ্রধান। সেখানেই ব্রিকস নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন।
বিশ্ব অর্থনীতির এক-চতুর্থাংশের নিয়ন্ত্রণকারী পাঁচ দেশের জোট ব্রিকসের সম্মেলনে যোগ দিতে এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেন শেখ হাসিনা। এবারের সম্মেলনের আগেই বাংলাদেশের সদস্য হওয়ার আবেদনের বিষয়টি আলোচনায় ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এর আগে এ বিষয়ে আগ্রহের কথা বলেছিলেন।
সম্মেলনে শেষ পর্যন্ত ৬ দেশকে ব্রিকসে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হলেও বাংলাদেশ সেই তালিকায় নেই, যা নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে। বিএনপি বিষয়টিকে বর্ণনা করেছে সরকারের ‘কূটনৈতিক ব্যর্থতা’ হিসেবে।
সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক ব্রিকসে বাংলাদেশের সুযোগ না পাওয়া এবং এ বিষয়ে চলমান আলোচনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী গত জুন মাসে তার ইতালি সফরের সময় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতে ব্রিকসে নতুন সদস্য নেওয়ার আলোচনার বিষয়টি তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ হল, তখন আমন্ত্রণ জানালেন, ব্রিকস সম্মেলন করবে, আমাকে আসতে বললেন এবং সে সময় আমাকে জানালেন যে, তারা কিছু সদস্যপদ বাড়াবেনও এবং সেটাতে আমার মতামত জানতে চাইলেন।
আমি বললাম যে, এটা খুবই ভালো হবে। কারণ ব্রিকস যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন থেকে এই পাঁচটা দেশের সরকারের প্রধানের সঙ্গে আমার যোগাযোগ সবসময় ছিল এবং আছে।
গত জুন মাসে জেনিভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্রিকসের সভাপতি দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার বৈঠক হয়।
ওই বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, বাংলাদেশের ব্রিকসে যোগদানের বিষয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে। এরপর জুনের মাঝামাঝিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকসের সদস্যপদের জন্য আবেদন করে সরকার।
চলতি মাসের ২৪ তারিখ ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আমন্ত্রিত হয়ে যোগ দেন। এই সম্মেলনেই ছয়টি দেশকে নতুন করে ব্রিকসের সদস্য হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেগুলো হল- আর্জেন্টিনা, মিশর, ইথিওপিয়া, ইরান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জুনে যে আলোচনা হয়, সেই পর্যায়েই বিষয়টি ছিল বলে জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ব্রিকসের সদস্য হওয়ার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট আমাকে তখনই বলেছিলেন যে, ধাপে ধাপে নেবেন, তারা ওই ভৌগোলিক অবস্থানকে বিবেচনা করে যে দেশগুলি তাদেরকে নেবেন এবং পর্যায়ক্রমিকভাবে তারা সদস্য সংখ্যা বাড়াবেন। খবর বিডিনিউজ।
আমরা ঠিক ওইভাবে হ্যাঁ, নিলে আমরা খুব খুশি। কিন্তু আমরা ঠিক ওইভাবে ব্রিকসে এখনই সদস্যপদ পাব, এই প্রথমবারই যে সদস্যপদ পাব, এ ধরনের চিন্তা আমাদের মাথায় ছিলও না, আর সেই রকম চেষ্টাও কিন্তু আমরা করিও নাই বা কাউকে আমরা বলিও নাই।
ব্রাজিল ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কিন্তু কাউকে কিছু বলতে যাইনি যে, এখনি মেম্বার করেন। তখন থেকে আমরা জানি যে তারা কয়েকটা দেশ নেবেন।
ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ অন্য সরকারপ্রধানদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজেও সদস্যপদ নিয়ে আলোচনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ওই সময় আলোচনা হয়, ‘এখন আমরা এই কয়জন নেব। এরপরে ধাপে ধাপে আমরা আরও সদস্য সংখ্যা বাড়াব’; এই।
বিরোধীদলের সমালোচনার জবাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানি, এই ইস্যুটা আসবে বা আমাদের অপজিশান থেকে খুব হুতাশ, যে আমরা নাকি চেয়েছি, পাইনি, হেনতেন।
বাংলাদেশ কিছু চেয়ে পাবে না এটা কিন্তু ঠিক না। অন্তত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের যে মর্যাদাটা আমরা তুলে ধরেছি, সেখানে আমাদের সেই সুযোগটা আছে।
তিনি বলেন, তারা বলতে পারে, কারণ তারা বিএনপির আমলে ওইটাই ছিল। বাংলাদেশের কোনো অবস্থানই ছিল না সারাবিশ্বে। বাংলাদেশ মানেই ছিল দুর্ভিক্ষের দেশ, ঝড়ের দেশ, বন্যার দেশ, হাত পেতে চলার দেশ, ভিক্ষা চাওয়ার দেশ। এখন অন্তত বাংলাদেশ ভিক্ষা চাওয়ার দেশ না, এটা সবাই জানে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ব্রিকস জোটের অধীনে গঠিত নিউ ডেভেলপমন্টে ব্যাংকে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ শুরু থেকেই বাংলাদেশের ছিল এবং বাংলাদেশ ওই ব্যাংকের সদস্য হয়েছে।
আমাদের পক্ষ থেকে আমরা যখন শুনলাম যে, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক হচ্ছে, ওটার উপরে আমাদের আগ্রহটা বেশি ছিল, সেখানে আমরা যুক্ত হতে চেয়েছিলাম।
ওই ব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশে দুটি প্রকল্প চালু থাকার কথাও আরেক প্রশ্নে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বিনিময়ের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট মুদ্রার বাধাধরা না কথাও তিনি বলেন।
নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করতে হবে
নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বের দক্ষিণের দেশগুলো কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা ব্রিকস সম্মেলনে বাংলাদেশ তুলে ধরেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে মঙ্গলবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “দক্ষিণের দেশসমূহের উপর আরোপিত সিদ্ধান্ত, বিভাজনের নীতিকে না বলার এখনই সময়।
সর্বজনীন নিয়ম ও মূল্যবোধকে অস্ত্রে পরিণত করার প্রচেষ্টাকে অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আমাদের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করতে হবে।”
সব ধরনের হুমকি, উসকানি ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলার উপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণের দেশসমূহের উপর আরোপিত কৃত্রিম সিদ্ধান্তের কারণে আর ক্ষতিগ্রস্ত হতে রাজি নই।
সর্বজনীন নিয়মের নামে আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া অসম নীতিকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য আমি দক্ষিণের দেশসমূহকে আহ্বান জানিয়েছি।
সফরের মূল আলোচনার বাইরে ইন্দোনেশিয়া, বেলারুশসহ বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের এই সফরটা অত্যন্ত ফলপ্রসূ ছিল বাংলাদেশের জন্য।
যখন সারাবিশ্ব স্যাংশন, কাউন্টার স্যাংশনের নামে নানা ঝামেলায়, সেখানে একটা নতুন দুয়ার খুলে গেছে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু সম্প্রসারণ করার জন্য সেটাই আমি মনে করি।
বিপদজনক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় সম্পদ অপচয় না করে বিশ্বব্যাপী জনসাধারণের জন্য পণ্য ও পরিষেবা প্রদানের জন্য আহ্বান সম্মেলনে জানানো হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
বিশ্ব অর্থনীতির এক-চতুর্থাংশের নিয়ন্ত্রণকারী পাঁচ দেশের জোট ব্রিকসের সম্মেলনে যোগ দিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেন শেখ হাসিনা।
জনগণ ভোট দিলেই নির্বাচন ‘অংশগ্রহণমূলক’
বিএনপি নির্বাচনে না এলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ার কোনো কারণ দেখছেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, ‘অংশগ্রহণটা কার অংশগ্রহণ। আমার কাছে অংশগ্রহণটা জনগণের অংশগ্রহণ। জনগণ ভোট দেবে, সেই ভোটে যারা নির্বাচতি হবে, জয়ী হবে, তারা সরকারে আসবে।’
এক দফা আন্দোলনে থাকা বিএনপি সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাইছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে এবং ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে সরকার কী উদ্যোগ নেবে তা জানতে চান একজন সাংবাদিক।
উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন অংশগ্রহণ বলতে কাদের অংশগ্রহণ? ভোট চোরদের? ভোট ডাকাতদের? দুর্নীতিবাজ, মানিলন্ডারিং, খুনি, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী, জাতির পিতার হত্যাকারী, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী, তাদের অংশগ্রহণ? এটা কি জনগণ চায়? তারা (বিএনপি) অংশগ্রহণ করলেই বৈধ হবে, অন্য কেউ করলে হবে না এটা তো হতে পারে না। তাদের প্রতি মানুষের ঘৃণা, এটা মাথায় রাখতে হবে।’
গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের সময়ে সব নির্বাচনেই ‘জনগণ অংশগ্রহণ করছে’ মন্তব্য করে দলের সভাপতি বলেন, ‘তা না হলে ২০০৮ সালে নির্বাচনে বিএনপি তো ৩০টা আসন পেয়েছিলো। তারপর থেকে আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না। তারা বাণিজ্য করে নমিনেশন বেচে। হয়ত তারা আসবে নমিনেশন বেচবে, বাণিজ্য করবে।
কিছু টাকা নয়াপল্টন অফিস পাবে, কিছু টাকা গুলশান অফিস পাবে, আর মোটা অংক যাবে লন্ডনে। এই তো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে! তারপর নিজেরাই মারামারি করবে পরে নির্বাচন উইথড্রো করবে। সব নির্বাচনেই জনগণ অংশগ্রহণ করেছে।’
নির্বাচনী ডামাঢোলের মধ্যে সিঙ্গাপুরে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি নেতাদের কথিত বৈঠকের বিষয়ে এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে কয়টা নির্বাচন এই পর্যন্ত হয়ে গেল, সেটাতে কি জনগণ নির্বিঘেœ অংশগ্রহণ করতে পারেনি? হ্যাঁ, কেউ কেউ চেষ্টা করেছে, সেখানে নিজেরাই একটা গোলমাল সৃষ্টি করে সেই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার, কিন্তু সেটাতে সফল হয়নি। যেহেতু জনগণ ভোটে গিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন দেশে জায়গা না পেয়ে বিদেশে গিয়ে কার শিং গজালো, সেটাতো আমি খোঁজ নিতে পারব না। বলে যে সিঙ্গাপুর, আমি বললাম যে, কোথায় যেয়ে কার শিং গজালো, সেটা আমি দেখব কোত্থেকে বলেন?
‘তারা কোথাও শিং ধার করতে গেছে নাকি, যে গুঁতাটুতা মারবে, বাংলাদেশের জনগণকে ইলেকশন করতে দেবে না।’
প্রশ্নকর্তার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনি বলছেন, যে গোয়েন্দা সংস্থার খোঁজ নিতে হবে। এটা খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করব কে গেল, কে কোথায় গেল, কী করল? ওটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না।
শিং নাই তবু সিংহ। ওই নিয়ে চিন্তার কী আছে,’ বলেন শেখ হাসিনা।
বিকল্প ব্যবস্থা হবে, সিন্ডিকেট এমনি ভেঙে যাবে প্রধানমন্ত্রী
নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর সঙ্গে জড়িত ‘সিন্ডিকেটের’ বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজেরা উৎপাদন বাড়ালে, বিকল্প উপায়ে গেলে তা এমনিতেই ভেঙে যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
মৌসুমের সময় ফসল এবং যখন দাম কম থাকবে তখন ডিমের মতো খাদ্যপণ্য বিকল্প উপায়ে সংরক্ষণের বিকল্প উপায় কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের খাদ্যপণ্য নিয়ে কয়েকটা হাউজ আছে তারাই ব্যবসা করে। যখন আর্টিফিশিয়ালি দাম বাড়ায়, আমরা সাথে সাথে আমদানি করি অথবা বিকল্প ব্যবস্থা নেই। তখন তারা বাধ্য হয় দামগুলো কমাতে।
‘খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে আমরা সাথে সাথে তো ব্যবস্থা নেই। কাজেই সিন্ডিকেট থাকলে সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না এটা তো কোনো কথা না। কে কত বড় সিন্ডিকেট আমি জানি না। তবে আমি দেখব কি ব্যবস্থা করা যায়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশে নিত্যপণ্য নিয়ে মৌসুমী ব্যবসা পরিচালিত হয়। মজুদ আছে, সরবরাহ আছে, তারপরও হঠাৎ করে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। পেঁয়াজ, ডাব, কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যায়। এরকম সিন্ডিকেট করে বাংলাদেশে ব্যবসা করে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে টাকা নিয়ে যাওয়া হয়। সিন্ডিকেটের একথা দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা বলেন যে, এটাতে হাত দেওয়া যায় না, দিতে গেলে বিপদ আছে। এ ব্যাপারে মৌসুমী ব্যবসা যারা করেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবেন কি না?
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, নিয়ে থাকি। কিন্তু বিপদ আছে- কে বলেছে, আমি ঠিক জানি না। কোন মন্ত্রী বলেছেন?
তখন এ নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর ‘সিন্ডিকেটে হাত দেওয়া যাবে না’ বক্তব্যের বিষয়টি তুলে ধরা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিষয়টি দেখব। দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির পেছনে এক শ্রেণির সিন্ডিকেট রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে নিয়ম আছে, যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এখন হয়ত সকলের আয় বেড়ে গেছে, যেমন আমরা ছোট বেলায় দেখেছি, শীতকালে বাজারে প্রথম শিম উঠলে কে কত বেশি দামে কিনতে পারে-এটার একটা প্রতিযোগিতা হত। দুইদিন দাম কমে যেত।’
আবার বর্ষাকালে কাঁচা মরিচের দাম বাড়ে মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, বিকল্প ব্যবস্থা তো রয়েছে যে- কাঁচা মরিচ এখন শুকনা করে রেখে দেওয়া যায়, পেঁয়াজ শুকিয়ে সুন্দর করে রেখে দেওয়া যায়। সেটা বলার পরে ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তারপরে যে জিনিসটা বেশি হবে সেটা ভালো করে রোদে শুকিয়ে রেখে দিলে অনেকদিন ব্যবহার করা যায়। বিকল্প ব্যবস্থা তো আছে।
বিশেষ করে বর্ষাকালে এখন অন্তত বলতে পারি শিম, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, টমেটো বাংলাদেশে হতো কখনও? হতো না। এগুলো তো সব শীতের সবজি। আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীরা সবকিছু গবেষণা করে ১২ মাস উৎপাদনের ব্যবস্থা করেন। ভবিষ্যতে এগুলো প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ সাইলো তৈরি করা সেখানে সেগুলো সংরক্ষণ করা, আমরা সেই পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে আমার কথা হল, তিনি আমাদের এখান থেকে চাল কিনতে চান। বললাম যে, আমাদের তো ১৭ কোটি মানুষের খাবার দিতে হয় আগে, আর আমি তো গরীব মানুষদেরকে বিনা পয়সায় খাবার দেই। আমি আগে দেখব উদ্ধৃত্ত যদি থাকে তাহলে আপনাকে দেব।
‘এখন অনেক দেশ আমাদের তরিতরকারি চাচ্ছে। আমরা কিন্তু দিচ্ছি। আমাদের তরিতরকারি সুইজারল্যান্ডে যাচ্ছে। এটা তো সুপার মার্কেট চেইনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। পৃথিবী তো ছোট হয়ে আসছে। কিছু পণ্য তো বাইরেও যাচ্ছে।
চাহিদা মেটাতে নিজেদের চাষাবাদের বিষয়ে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেজন্য আমি বলেছি নিজেরা উৎপাদন করেন। নিজেরা কৃষি ভূমিতে উৎপাদন করতে পারেন তাহলে তো বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা থাকে না। নিজেরা যত উৎপাদন করতে পারেন সিন্ডিকেট এমনি ভেঙে যাবে। ওদের আর কিছু করার থাকবে না।
‘এটা করলে তো ভালো হবে। দেখেন ছাদবাগান-টাগান তো ভালোই চলছে। আমার প্রচুর কাঁচা মরিচ হয়েছে, কাঁচা মরিচের ছবি তুলে দিয়েছিলাম। নিজের কাঁচা মরিচের গাছ থেকে একটা কাঁচা মরিচ ছিঁড়ে খাওয়া। এটার আলাদা টেস্ট, তাই না। সবাই নিজেদের আঙিনায় শাকসবজি লাগান-এই সিন্ডিকেট কিছু করতে পারবে না।’
ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আবার ডিম নিয়ে শুরু করল। ঠিক আছে এরপর ডিমের দাম যখন কম থাকবে সেদ্ধ করে ফ্রিজে রেখে দেবেন। বহুদিন থাকবে, সহজে নষ্ট হবে না। সব কিছুর বিকল্প ব্যবস্থা আছে।
‘ডিম সেদ্ধ করে আপনি যদি ডিপ ফ্রিজে রেখে দেন ডিম ভালো থাকবে অনেকদিন। রান্না করে খাওয়া যায়, ভর্তা করেও খাওয়া যায়। আমরা রাখি খাই, দেখি বলি। এটা তো নিজের থেকে শেখা।’
তিনি বলেন, ‘অভাব যেন না থাকে সেটা দেখব। বিকল্প ব্যবস্থা করে দেব এই সিন্ডিকেটের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেব, এটা এমনি ভেঙে যাবে।’
পেনশন তহবিলের টাকায় ভোট! এমন দীনতায় আওয়ামী লীগ পড়েনি
সর্বজনীন পেনশন নিয়ে ‘নেতিবাচক’ কথায় বিভ্রান্ত না হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এক প্রশ্নে তিনি বলেছেন, সর্বজনীন পেনশনের টাকা কীভাবে কোথায় জমা হবে এবং কীভাবে মানুষ পেনশন পাবে, তা ‘খুব স্পষ্টভাবে’ বলা আছে।
আর এই টাকা নিয়ে ইলেকশন ফান্ড করতে হবে, আওয়ামী লীগ তো ওই রকম দৈন্যতায় পড়েনি। আওয়ামী লীগ হচ্ছে নিজের খেয়ে নৌকা, আর জনগণ নিজের খেয়ে নৌকায় ভোট দেয়। এবং আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে।
বেশ কয়েক বছরের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির পর গত ১৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। এই স্কিমে ৬০ বছর পর্যন্ত মানুষ টাকা জমা করবে এবং এরপর থেকে আজীবন মাসে মাসে অর্থ পাবে।
সবার জন্য পেনশনের এ উদ্যোগের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, এটা সরকারের ‘নির্বাচনী তহবিল তৈরির ফন্দি’।
এমন সমালোচনার মধ্যে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক।
সরকারি চাকুরের পেনশনের বিপরীতে সাধারণের ভবিষ্যতের নিশ্চয়তার জন্য সর্বজনীন পেনশন চালুর কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বৃদ্ধ বয়সে তাদের একটা নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্যই এই সর্বজনীন পেনশনের কথাটা আমরা বলেছি। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারের সময় এটা ঘোষণা ছিল, আমরা এটা কার্যকর করেছি।
তিনি বলেন, এখন যেই টাকাটা রাখবে, ধীরে ধীরে তা ম্যাচিউর হবে একটা সময় নিয়ে এবং বয়সসীমাও দেওয়া আছে। এরপর থেকে ওই টাকাটা সে তুলতে পারবে। যেটা তার সেই সময়ের চিকিৎসা বা জীবনজীবিকার জন্য কাজে লাগবে।
এই টাকা তো অন্য কোেেনা দিকে যাওয়ার উপায় নাই। এই টাকা সরকারি কোষাগারে যাচ্ছে এবং পেনশন যে স্কিম, সেই স্কিমে টাকাটা থেকে যাবে। যে কেউ তুলে নিতেও পারবে না, ব্যবহারও করতে পারবে না, কেউ এটা নিয়ে কোনো রকম নড়াচড়াও করতে পারবে না, সেই গ্যারান্টিটা দিয়েই তো এই স্কিমটা করা।
সরকারের সব ভালো কাজ নিয়ে ‘অপপ্রচার’ করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরশ্রীকাতরতায় যারা ভোগে এবং যারা সবসময় একটা ফ্রাসটেশনে ভোগে, যারা নিজেরা কিছু করতে পারে না এবং যারা সম্পূর্ণ অর্বাচীন। অর্বাচীনের এ ধরনের কথায় জনগণ যেন কান না দেয়।
আমি দেশবাসীকে বলব, যে এ সমস্ত নেতিবাচক কথায় কান না দিয়ে নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য। এবং যারা আজকে বলছে তারাই কিন্তু আবার পেনশনে যোগ হবে, সেটাও আমি বলে দিতে পারি।জনগণকে আশ্বস্ত করে তিনি আরও বলেন, “আজকে টাকা জমা দেবেন, একটা সময় পরে আপনি প্রতিমাসে টাকা তুলতে পারবেন। আপনার জীবন-জীবিকা, চিকিৎসা এই রকম অনেক কাজ করতে পারবেন।
এই যে সুযোগটা আমরা সৃষ্টি করে দিলাম জনগণের জন্য, এটাতো একটা সব থেকে কল্যাণমুখী একটা পদক্ষেপ আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার হাতে নিয়েছে। কাজে এটা নিয়ে নেতিবাচক কথা শুনে কেউ যেন বিভ্রান্ত না হয়, আমার সেটাই আহ্বান থাকবে জাতির কাছে।
বিরোধীরা এত ধরনের যতন নেতিবাচক কথা বলেছে, পরে তার সবগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, এরা আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াতে পারে, এরা জনগণকে খুন করতে পারে, হত্যা করতে পারে, গ্রেনেড মারতে পারে, দুর্নীতি করে টাকা পাচার করতে পারে, এসব কাজে তাদের পারদর্শিতা আছে।
কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সেটা করতে আসে নাই, জনগণের কল্যাণে কাজ করতে এসেছে। কাজে সেই ভরসাটা দেশবাসীর থাকতে হবে।
ইউনূসের জন্য বিবৃতি না দিয়ে আইনজীবী পাঠান
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলার আসামি নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে যারা বিবৃতি দিচ্ছেন, তাদের বিবৃতি না দিয়ে বিশেষজ্ঞ আইনবিদ পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যাতে তারা দেখতে পারেন, এখানে কোনো অন্যায় হয়েছে কি না।
তিনি বলেছেন, আমার খুব অবাক লাগছে, ভদ্রলোকের যদি এতই আত্মবিশ্বাস থাকত, যে তিনি কোনো আপরাধ করেননি, তাহলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না।
শ্রম আদালতে ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম এগিয়ে চলার প্রেক্ষাপটে ১০০ নোবেল বিজয়ী এবং বিভিন্ন দেশের ৬০ জন বিশিষ্ট নাগরিক একটি বিবৃতি দিয়েছেন, যেখানে ইউনূস ‘কারারুদ্ধ হতে পারেন’ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে তাকে ‘হয়রানি’ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।
সিভিক কারেজ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে সোমবার ওই বিবৃতি আসে। ‘প্রটেক্ট ইউনূস’ নামে একটি প্রচারাভিযানও শুরু করেছে সংগঠনটি।
একজন সাংবাদিক জানতে চান, ওই বিবৃতির প্রেক্ষাপটে সরকার কোনো নমনীয়তা দেখাবে কি না। ওই বিবৃতির কারণে বিচারে কোনো প্রভাব পড়বে কি না, তাও জানতে চান আরেক সাংবাদিক।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। তাছাড়া আমাদের দেশে সবকিছু একটা আইনমত চলে। কেউ যদি ট্যাক্স না দেয়, আর যদি শ্রমিকের অর্থ আত্মসাত করে, আর শ্রমিকদের পক্ষ থেকে শ্রম আদালতে যদি মামলা করা হয়, সেখানে আমাদের কি হাত আছে? আমরা মামলা বন্ধ করে দেব? আপনারাই বিচার করেন।
সরকার যে শ্রম আদালতের ওই মামলা করেনি, সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা চলমান মামলা, আমাদের দেশে তো চলমান মামলা নিয়ে আলোচনাও করি না। কারণ এটা বিচারাধীন। যেখানে বিচারাধীন হিসেবে নিজের দেশেই কথা বলা বন্ধ করা হয়। সেখানে বাইরে দেশ থেকে বিবৃতি এনে মামলা প্রত্যাহারের কথা, আমি কে মামলা প্রত্যাহারের? এখানে আমার কোন অধিকারটা আছে, সেই অধিকারটা দিয়েছেন আমাকে? জুডিশিয়ারি তো সম্পূর্ণ স্বাধীন।
একটা দেশে জুডিশিয়ারি, লেজিসলেটিভ এবং এক্সিকিউটিভ তিনটা অঙ্গ একসঙ্গে চলে। কিন্তু একটা আরেকটার প্রতি হস্তক্ষেপ আমরা করতে পারি না।
ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি না দিয়ে বিশেষজ্ঞ আইনজীবী পাঠানোর জন্য পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা এই বিবৃতি দিয়েছেন, তাদেরকে আমি আহ্বান করি, তারা এক্সপার্ট পাঠাক। তাদের যদি এত দরদ থাকে তারা আইনজীবী পাঠাক এবং যার বিরুদ্ধে মামলা তার সমস্ত দলিল দস্তবেজ খতিয়ে দেখুক। তারাই এসে দেখুক কোনো অন্যায় আছে কি না।
বিবৃতি দিয়ে কীভাবে একটা মামলা তোলে, তা তো আমরা জানি না। কিন্তু তাদের এসে দেখা দরকার এখানে কি কি অসঙ্গতি আছে, অসামঞ্জস্যতা আছে।
ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টাকে ‘শান্তি স্থাপন’ বিবেচনা করে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংককে।
১৯৮৩ সালে একটি সামরিক অধ্যাদেশের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনা হওয়ার পর থেকেই এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন ইউনূস। বয়সসীমা অতিক্রান্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালে তাকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে হেরে যান ইউনূস।
শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করার অভিযোগে একটি মামলায় গত জুন মাসে ইউনূসের বিচার শুরু করে শ্রম আদালত।
সর্বশেষ সোমবার গ্রামীণ টেলিকমের ১৮ জন কর্মচারী তাদের পাওনা মুনাফা না দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেন, সেখানে কোম্পানির চেয়ারম্যান ইউনূসকে আসামি করা হয়।
ইউনূসের বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে দুইশর মত মামলা রয়েছে বলে তার আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
সিভিক কারেজের ব্যানারে নোবেলজয়ীদের পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ঘটনাগুলো খুব দ্রুত ঘটে যাচ্ছে এবং মনে হয়, আগামী নির্বাচনের আগেই ড. ইউনূসকে কারারুদ্ধ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
ইউনূসের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার কোনো ‘আইনি সারবত্তা নেই’ এবং ‘আইনি প্রক্রিয়ারও ত্রুটিপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করা হয় সেখানে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শ্রমিকদের জন্য জন্য তো আমাদের অনেক কথা শুনতে হয়, আন্তর্জাতিক বিশ্বে শুধু নালিশ আর নাশিল। এই দেশের কোম্পানি আইনে আছে, প্রফিটের শতকরা পাঁচ ভাগ লেবার ওয়েল ফেয়ারে দিতে হবে। এখন যদি কেউ না দেয়, লেবাররা মামলা করে, মামলা করার ফলে তাদের ছাঁটাই করা হয়, তারা যদি আবার মামলা করে, সে দায়িত্ব তো আমাদের না।
আবার এই মামলা যাতে না হয়, তার জন্য ঘুষ দেওয়া হয়। সেই ঘুষের টাকা পর্যন্ত যাওয়া, সেই নেতারা যে ঘুষ খেয়েছে সেই টাকা ব্যাংকে ফ্রিজ করা। যারা বিবৃতি দিয়েছে তাদের আহ্বান জানাই, বিবৃতিটা না দিয়ে তার এক্সপার্ট পাঠাক, তাদের ক্লায়েন্টের জন্য, আইনজীবী পাঠাক এবং তারা এসে দলিল দস্তবেজ কাগজপত্র সব দেখুক যে সেখানে কোনো অন্যায় আছে, না তাকে অন্যায়ভাবে কোনো মামলা দেওয়া হয়েছে।
পৃথিবীর কোনো দেশে কর ফাঁকি দিলে ছাড় দেওয়া হয় না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে ট্যাক্স ফাঁকিতে যদি কেউ ধরা পড়ে, তাকে তো সেই ট্যাক্স ফেরত দিতে হবে, কিছু কিছু ফেরত দিয়েছেও। এনবিআর থেকে যেটা বলা হয়েছে,পাঁচ হাজার কোটিই উচ্চ আদালতের নির্দেশে সেগুলো স্থগিত হয়ে আছে।
স্বাভাবিকভাবেই সারা বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফতি, অর্থনৈতিক একটা চাপ, যেখানে সরকারের অর্থ পাওনা, সেখান থেকে তো অর্থ আদায় করতেই হবে। যারা ট্যাক্স দেয় না এনবিআর তাদের অর্থ ছাড়বে কেন। ট্যাক্স দেওয়া তো সকল নাগরিকের দায়িত্ব। যদি আপনার বিদেশে, আমেরিকা বলেন ইংল্যান্ড বলেন, ইউরোপ বলেন, কেউ যদি তাদের দেশের ট্যাক্স ফাঁকি দেয়, তাদেরকে কি কোলে তুলে নাচে তাদের সরকার? না তাদের মামলা দেয়।
বিশ্বে ‘বহু নোবেলজয়ীকে বিভিন্ন অপকর্মের জন্য জেলে যেতে হয়েছে’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলে, ফিলিপাইনের নোবেলজয়ী, তার বিরুদ্ধে ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার মামলায় দিনের পর দিন, সেই মামলা তাকে চালাতে হয়েছে। এইরকম বহু নবেলজয়ী আছে, তারা কারাগারে বন্দিও আছে পরবর্তীতে অনেক কাজের জন্য। এখন একজনের জন্য এত এত বিবৃতি না দিয়ে তারা একটা এক্সপার্ট পাঠিয়ে দেখুক।
বিশেষজ্ঞা পাঠালে ‘আরও অনেক কিছু’ বেরিয়ে আসতে পারে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি তারা যদি একবার পাঠায় তাহলে, আরও অনেক কিছু বের হবে, যেটা আমরা হাতই দিইনি। এমন অনেক কিছু বের হবে। সেটা করা দরকার, বিবৃতি না দিয়ে আসেন, এক্সপার্ট পাঠান এবং সবকিছু যাচাই করে দেখেন সেই আহ্বান জানাই।
ইউনূস ছিলেন সরকারি মালিকানার একটি ব্যাংকের এমডি, সেই পদে থেকে তিনি কী করে বিদেশে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করলেন, সেই প্রশ্নও তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সরকারি বেতনভোগী একজন এমডি বিদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার কীভাবে ইনভেষ্ট করে? বাণিজ্য করে? এই যে শত ইন্টেলেকচুয়াল যারা বিবৃতি দিলেন, তারা কি জিজ্ঞাসা করেছেন, একটি ব্যাংকে চাকরি করা অবস্থায় কীভাবে বিদেশে এত টাকা বিনিয়োগ করলেন। ব্যবসা করলেন, আসা যাওয়া করেন, এত কিছু করেন কোনো নিয়ম নাই।
কোথা থেকে টাকাটা এল, কীভাবে টাকাটা উপার্জন করা হল, সে কথা সাংবাদিকরা কখনো ইউনূসকে জিজ্ঞাসা করেছেন কিনা, সেই প্রশ্নও তোলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমাদের একজন রাজনীতিবীদ করলে লিখতে লিখতে কলম শেষ হয়ে যেত। দুর্নীতি খুঁজে বেড়াচ্ছেন, দুর্নীতিবাজ পছন্দ না হলে কোনো দোষ নাই, আর পছন্দ হলে তারে ভালো করে আচ্ছা মত, এটা অবস্থান অপনাদের?
বিবৃতিদাতাদের উদ্দেশে তিনি আবারও বলেন, তারা এক্সপার্ট পাঠাবে, সমস্ত দলির দস্তখত দেখবেন এবং তারাই বিচার করে যাক এখানে কোনো অপরাধ আছে কি নাই। আর নয়তো আমাদের দেশে আইন আছে, আদালত আছে, শ্রম আইন আছে, শ্রম কোর্ট আছে। আইন তার নিজের গতিতে চলবে।