চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্যসেবার অতীত গৌরব ফিরিয়ে আনতে এই সেবা কার্যক্রম উন্নত করার তাগিদ দিয়েছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। সম্প্রতি স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় মেয়র সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নাগরিক সেবা ও সুবিধাকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি ক্রয় ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির আধুনিকায়ন করে এটিকে মডেল হিসেবে তুলে ধরতে হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেন। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, সভায় স্বাস্থ্যবিভাগের ৮টি সমস্যা তুলে ধরেন চসিক প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে চিকিৎসক ও জনবল সংকট, ক্লিনিক্যাল যন্ত্রপাতির স্বল্পতা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন সমস্যা, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিদ্যুৎ ও পানির সংকট, ট্রান্সপোর্ট ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত সমস্যা। এছাড়া চিকিৎসা সেবায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি দীর্ঘদিন স্থায়ী না হওয়া এবং শূন্যপদ পূরণ না হওয়ার কথাও তিনি বলেন।
চসিক স্বাস্থ্য সূত্রে জানা যায়, এর অধীনে ১০০ শয্যার ১টি ও ৫০ শয্যার ৩টি মাতৃসদন হাসপাতাল, ১০০ শয্যার ১টি জেনারেল হাসপাতাল, ৫৩টি দাতব্য চিকিৎসালয় ও নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়াও রয়েছে তিন শতাধিক ইপিআই টিকাদান কেন্দ্র, আছে ১০টি হোমিওপ্যাথিক দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্র। নগরীর স্বাস্থ্যসেবার পরিধি সন্তোষজনক। এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জনবল নিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, যন্ত্রপাতি সন্নিবেশ করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে আধুনিক ও সেবাদানের উপযোগী করে তোলা। অতীতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ক্ষেত্রে চসিক নগরবাসীর প্রশংসা অর্জন করেছে। চসিক এর টিকাদান কার্যক্রমও উল্লেখযোগ্য। এবার করোনাকালে চসিকের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা ভাল ভূমিকা রেখেছেন। এখন করোনা টিকা প্রদানের কাজও সাফল্যজনকভাবে চলছে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর জনসংখ্যা ৬০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী, প্রধান বাণিজ্যিক নগরী। বিপুল জনসংখ্যার জন্য সরকারিভাবে রয়েছে মাত্র ২টি হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল। জনসংখ্যা ও চাহিদা অনুসারে সরকারি হাসপাতাল নতুন করে গড়ে ওঠেনি। বিশেষায়িত হাসপাতালও নেই। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসার ব্যয় জনগণের সাধ্যাতীত। নগরীতে দরিদ্র ও নি¤œবিত্তদের সংখ্যা বেশি। তারাই নগরীর অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা সচল রাখছেন অথচ তারা চিকিৎসা সুবিধা সহজে ও সুলভে পান না। এ ক্ষেত্রে চসিক এর হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিই ভরসা। তাই চসিকের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে সুযোগ সুবিধা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ করে জনগণের সেবার উপযোগী করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা ও বরাদ্দ ছাড়া চসিকের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির সমস্যা-সংকটের সমাধান সম্ভব নয়।
আমরা মনে করি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চসিকের স্বাস্থ্যসেবার জন্য বরাদ্দ দিতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে। চসিককে এ ক্ষেত্রে তাদের পরিকল্পনা প্রণয়ন করে সরকারের কাছে পেশ করতে হবে। চট্টগ্রামের মন্ত্রী ও সাংসদগণ স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ বরাদ্দ পেতে ভূমিকা রাখতে পারেন। চসিকের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলির অবকাঠামো উন্নয়ন, মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বিশেষ বরাদ্দ দিলে নগরীর মানুষ সুলভে ও সহজে স্বাস্থ্যসেবা পাবে। আমরা এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আশু পদক্ষেপ আশা করছি।
মতামত সম্পাদকীয়