নিজস্ব প্রতিবেদক »
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জনবল সংকটের কারণে কাজে গতি বাড়ছে না। এ কারণে সংস্থাটি হারাচ্ছে কর্মদক্ষতা, ভেঙে পড়ছে ব্যবস্থাপনা। বিশেষ করে পরিচ্ছন্নতা, রাজস্ব, সচিবালয়, স্বাস্থ্য, প্রকৌশল ও শিক্ষা বিভাগে রয়েছে ব্যাপক জনবল সংকট।
চসিক সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর সেপ্টেম্বরের পর্যালোচনায় ৯৬০৪ জনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে রয়েছে স্থায়ী ২ হাজার ৬৩৫ জন ও অস্থায়ী ৬ হাজার ১৩৫ জন। বর্তমানে সব বিভাগের বিভিন্ন পদে কাজ করছে ৮ হাজার ৭৭০ জন। অস্থায়ী জনবল স্থায়ীর প্রায় আড়াইগুণ বেশি হলেও বর্তমানে পদ খালি রয়েছে ৮৩৪ জন। এ জনবল সংকট কমাতে ২০২০ সালে একবার এবং ২০২১ সালে দু’বার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে চাকরির বয়স শেষে অবসর, মৃত্যু ও স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কারণে মোট শূন্য পদ সৃষ্টি হয়েছে ১ হাজার ৫৬৯ জন।
সংস্থাটির কর্মপরিধি নিয়ে জানতে চাইলে একাধিক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি আড়াই হাজার কোটি টাকার ‘এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কগুলো উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ প্রকল্প এবং ২৬৭ কোটি টাকার কোভিড প্রকল্পের মতো বড়ো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চসিক। প্রকল্প দুটিতে প্রায় ১ হাজার ৫০০টি ছোট ছোট প্রকল্প চলমান রয়েছে। কিন্তু করপোরেশনের কার্যক্রম ও জনগণের সেবার চাহিদাও দিনদিন বাড়ছে।
এ নিয়ে চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ সুপ্রভাতকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে জনবল সংকট নিয়ে যে সমস্যা, সেটি দীর্ঘদিনের। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আমরা বেশ কয়েকবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। বৈঠকও করেছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। তিনবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও আমরা লোকবল নিতে পারিনি। এর একমাত্র কারণ হলো অস্থায়ী নিয়োগ পেয়ে যারা সিটি করপোরেশনে কাজ করছেন, তারাই আন্দোলন করে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছেন। তাই আমরা জনবল সংকট থেকে মুক্ত হতে পারছি না।’
অস্থায়ীদের কোনো ব্যবস্থা করা যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অস্থায়ীভাবে যারা কাজ করছেন, তাদের নিয়োগপত্রে স্পষ্টভাবে লেখা আছে- নো ওয়ার্ক, নো পে (কাজ নাই, মজুরি নাই)। নিয়োগ সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে হবে এবং কোন কারণ না দেখিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন চাইলে তাদের অস্থায়ী নিয়োগ বাতিল করবে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পরই তারা আন্দোলন করে এবং শ্রম আদালতে মামলা করে। তাই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে যায়।’
অস্থায়ীদের বাদ দিলে চসিকে লোকবলের সংকট আরও তীব্র হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়েও এ নিয়ে কথা বলেছি। কারণ তাদের কারণে শুধু চতুর্থ শ্রেণিতে নয়, বিভিন্ন পদে লোকবলের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। যা পরবর্তীতে আরও তীব্র হতে পারে। তাই আমরা অস্থায়ী পদগুলোও শূন্য পদ বিবেচনা করছি। যদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় শূন্য পদ পূরণে নিয়োগ দিতে পারলে সিটি করপোরেশনের কাজের গতি অনেকগুণ বেড়ে যাবে।’
প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চসিকে স্থায়ী নিয়োগে কাজ করছেন সচিবালয়ে ২১৬ জন, রাজস্বতে ১৩২ জন, শিক্ষায় ১০৪২ জন, হিসাবে ২০ জন, স্বাস্থ্যতে ১৮৯ জন, প্রকৌশলে ৩৫৭ জন, পরিচ্ছন্নতা বিভাগে ৬৭৯ জন। সবগুলো বিভাগে ২ হাজার ৬৩৫ জন স্থায়ীভিত্তিতে কাজ করলে অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করছেন ৬ হাজার ১৩৫ জন। এরমধ্যে পদ শূন্য রয়েছে পরিচ্ছন্ন বিভাগে ৫৪৬ জন, সচিবালয়ে ২৭০ জন, রাজস্বতে ২৪৬ জন, স্বাস্থ্যে ২৪২ জন, প্রকৌশলে ২৪০ জন, হিসাবে ২৫ জনের। অস্থায়ীদেরও শূন্য পদ বিবেচনায় আনলে পদ হবে খালি ৬ হাজার ৯৬৯ জনের। এছাড়া বর্তমানে পরিচ্ছন্ন বিভাগের ডোর টু ডোর কার্যক্রমে কর্তব্যরত ২ হাজার ৬০ জন সবাই অস্থায়ী।