ভূঁইয়া নজরুল»
মে মাসের শেষ সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াসে’র কারণে এবার যথাসময়ে মৌসুমী বায়ুর আগমন ঘটেছিল। ফলে বর্ষা শুরু হলো নির্ধারিত সময়ে। এদিকে বর্ষার বৃষ্টিতে কয়েকদিন পর পর জলমগ্ন হচ্ছে নগরী। তবে এই জলমগ্ন হওয়া থেকে চলতি মাসেও রেহাই পাওয়ার কোনো পূর্বাভাস নেই। জুনের মতো জুলাই মাসেও দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হবে। আর এই স্বাভাবিক বর্ষণে চট্টগ্রামে জমবে পানি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর ঢাকা কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, দেশের কোথাও তো অতি বর্ষণ হয়নি। মৌসুমী বায়ু সঠিক সময়ে আসায় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে। আর চট্টগ্রাম উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় এখানে হঠাৎ হঠাৎ ভারী বর্ষণ হয়ে থাকে। এবারো তা হচ্ছে।
ভারী বর্ষণের বিষয়ে বলতে গিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর ঢাকা কেন্দ্রের পূর্বাভাস কর্মকর্তা ও আবহাওয়াবিদ আফতাবুর রহমান বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রায়ই ভারী বর্ষণের সতর্কতা থাকে। এই এলাকায় পাহাড় ধসের ঝুঁকি থাকে বলে সতর্ক থাকতে বলা হয়। গত মাসেও এ ধরনের ভারী বর্ষণ হয়েছে। সর্বশেষ গত ৩০ জুন ভোর ৬টা থেকে ১ জুলাই ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
আগামীর বৃষ্টির পূর্বাভাস প্রসঙ্গে আবহাওয়া অধিদপ্তর ঢাকা কেন্দ্রের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘আমাদের দেশে জুলাই ও আগস্ট মাসে স্বাভাবিকভাবেই বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। গত কয়েকবছর এই স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়নি। এবার স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৮৩ সালের ৫ জুলাই চট্টগ্রামে ৪০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। একই বছরের ৪ আগস্ট ৫১১ মিলিমিটার, এছাড়া ১৯৮৫ সালের ৯ জুলাই ৩৭৪ মিলিমিটার, ১৯৮৮ সালের ৮ জুলাই ৩০৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এছাড়া ২০০৭ সালের ১১ জুন ২৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ফাতিমা আকতার বলেন, ‘বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কোনো বছর স্বাভাবিক আবার কোনো বছর স্বাভাবিকের চাইতে কম বা বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। তবে আমাদের দেশে জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাস বৃষ্টিপাতের মৌসুম। এরমধ্যে জুলাই ও আগস্টে মূলত বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।’
এদিকে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতে গত মাসে দফায় দফায় জলমগ্ন হয়েছে নগরবাসী। চলতি মাসেও তা অব্যাহত থাকলে নগর দুর্ভোগ আরো বাড়তে পারে। এ বিষয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী বলেন, ‘নালা ও খালগুলো দিয়ে যাতে দ্রুত পানি নেমে যেতে পারে আমরা সেই ব্যবস্থা করছি। আশা করছি আগামীতে সমস্যা হবে না। ইতিমধ্যে সকল খালের মুখ পরিস্কারের কাজ চলমান রয়েছে, যেসব খালে স্লুইস গেট রয়েছে সেসব খালে বাইপাসের চওড়া বাড়ানো হয়েছে। একইসাথে খাল থেকে মাটি তুলে নেয়া হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, বৃষ্টি হলেই নগরীতে পানি জমছে। তিন ঘণ্টায় ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেও পানি জমার রেকর্ড রয়েছে।