সুপ্রভাত ডেস্ক »
দেশের বৃহৎ শুল্ক স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রাজস্ব আয়ে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে মার্চ মাসেও ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রাজস্ব আয়ে গত ডিসেম্বর থেকে টানা চার মাস প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয় কাস্টম হাউসে।
অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসের মধ্যে ৫ মাসে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক। অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে ০.১৭ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। এরপর অক্টোবর, নভেম্বরে পজিটিভ প্রবৃদ্ধি হলেও ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ক্রমাগত ঋণাত্মক প্রবদ্ধি হচ্ছে। এর ফলে কাস্টমসের সার্বিক প্রবৃদ্ধিও ক্রমাগত কমে যাচ্ছে।
কাস্টমস বলছে, ডলার সংকটের কারণে সরকার আমদানি সীমিত করায় ক্রমাগত কমছে আমদানির পরিমাণ। ফলে কমে গেছে রাজস্ব আয়। অর্থবছরের বাকি তিন মাসে একই ধারা অব্যাহত থাকলে সার্বিক প্রবৃদ্ধিও ঋণাত্মক হবে বলে আশংকা করছে কাস্টম সংশ্লিষ্টরা। খবর টিবিএস’র।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে মার্চ মাসে পণ্যবাহী আমদানি-রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণও কমেছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকেই পূর্বের বছরের তুলনায় ক্রমাগত কমছে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ছিলো ৪০.৮৭ শতাংশ। আগস্টে প্রবৃদ্ধি নেমে আসে ২৪.৬৭ শতাংশে। সেপ্টেম্বরে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয় -০.১৭ শতাংশ। এরপর অক্টোবর ও নভেম্বরে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়। অক্টোবরে ৩.৯১ শতাংশ এবং নভেম্বরে ১৪.১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় কাস্টমসে।
তবে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত টানা চার মাস গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয় কাস্টমসে।
ডিসেম্বরে -৯.১৮ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে -৪.৩৮ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে -১৭.৩৫ শতাংশ, সর্বশেষ মার্চে -৫.১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসেও ঋণাত্মক -০.১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার মো. বদরুজ্জামান মুন্সি বলেন, রাজস্ব আদায় বেশি হয় এমন পণ্য যেমন- গাড়ি, কসমেটিকস, ইলেকট্রনিক্স সহ বিলাসজাতীয় পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায় কমে গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক বাণিজ্য মন্দা চলছে। ডলার সংকটের কারণে আমদানি সীমিত করেছে সরকার। প্রয়োজনীয় পণ্যও আমদানি করা যাচ্ছে না । ফলে রাজস্ব আয়ে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে কাস্টমসের রাজস্ব আয়েও ধারাবাহিকতা থাকতে হবে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য মতে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মার্চ মাসে রাজস্ব আদায় হয় ৫০২৪.৮৭ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের মার্চ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছিলো ৫২৯৬.৬৯ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের আগস্টে কাস্টমসের সার্বিক প্রবৃদ্ধি ৩১.৭২ শতাংশ থাকলেও প্রতি মাসে কমতে থাকে সার্বিক প্রবৃদ্ধি। মার্চ মাসে এসে কাস্টমসের সার্বিক প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ৩.৫০ শতাংশ। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিলো ২১.৯৮ শতাংশ।
২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৪ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। আর জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রথম নয় মাসের লক্ষ্যমাত্রা ৫৫৮০৭ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে রাজস্ব আদায় হয় ৪৪২২৮.৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০.৭৫ শতাংশ রাজস্ব আদায় কম হয়।
২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিলো ৪২৭৩০.৮২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের নয় মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরে নয় মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ৩.৫০ শতাংশ।
কমছে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং
চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে গত বছরের মার্চ মাসের তুলনায় পণ্যবাহী আমদানি এবং রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমে গেছে।
২০২৩ সালের মার্চে ৯৮,৭৩৬ টিইইউজ পণ্যবাহী আমদানি কন্টেইনার এবং ৫৫,১৬০ টিইইউজ রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়। ২০২২ সালের মার্চে ১১৩,০৩৯ টিইইউজ পণ্যবাহী আমদানি কন্টেইনার, ৭৬,১৬৬ টিইইউজ রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিলো।
২০২৩ সালে ফেব্রুয়ারিতে ৭৭,৮৪১ টিইইউজ আমদানি কন্টেইনার এবং ৫৬,২২৪ টিইইউজ রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১১৫,৩৮৯ টিইইউজ আমদানি কন্টেইনার এবং ৬৯,৮২০ টিইইউজ রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিলো। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৮৭,৯৮৪ টিইইউজ আমদানি কন্টেইনার এবং ৬২,৭২৭ টিইইউজ রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ১৩১,৫২৬ টিইইউজ আমদানি এবং ৭৩,৫৪২ টিইইউজ রপ্তানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিলো।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চাহিদা অনুযায়ী এলসি দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। ফলে আমদানির পরিমাণ গত বছরের তুলনায় কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে।