ঢাকায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে হৃদরোগের জন্য বেশ কয়েকটি হাসপাতাল থাকলেও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রামে হৃদরোগের জন্য কোন বিশেষায়িত হাসপাতাল বা ইনস্টিটিউট নেই।
বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যায়। হৃদরোগে মৃত্যুর সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। জীবনযাপনের অনিয়ম, খাদ্যাভ্যাসের কারণে কি শহরে কি গ্রামে এই প্রাণঘাতি রোগের বিস্তার ঘটছে। তাই কেবল রাজধানী নয়, দেশের সকল জেলাÑউপজেলায় এই রোগ প্রতিরোধে চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্প্রসারণ জরুরি হয়ে পড়েছে।
তথ্যমতে দেশের মোট জনসংখ্যার চার থেকে পাঁচ ভাগ হৃদরোগে আক্রান্ত। এই থেকে এই রোগের ভয়াবহতা উপলব্ধি করা যায়। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, এর মধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। চট্টগ্রাম ও বৃহত্তর চট্টগ্রামের হৃদরোগীদের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে বিভাগ ফলে এ বিভাগের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অধিক সংখ্যক রোগী নিয়ে হিমশিম খেতে হয়।
তদুপরি চিকিৎসার আধুনিক সুযোগ সুবিধাও সীমিত। চমেক কার্ডিয়াক বিভাগে শয্যা সংখ্যা ১শ কিন্তু প্রতিদিনই রোগী তিনশ থেকে সাড়ে ৩শ’র বেশি, এই বিভাগে জনবলও প্রকট। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এনজিওগ্রাম ও এনজিও প্লাস্টি শতকরা ৯৯ ভাগই সফলতার সাথে সম্পন্ন করেন চিকিৎসকবৃন্দ-এমনিই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে স্থানীয় একটি দৈনিকে। তবে চিকিৎসকরা মনে করেন একটি হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থাকলে হৃদরোগে যথাযথ সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব।
চট্টগ্রামে বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতালে হৃদরোগের চিকিৎসা থাকলেও সঠিক চিকিৎসা দেয়ার ক্ষেত্রে অভিযোগও আছে। তাছাড়া আছে অতিরিক্ত চিকিৎসা ব্যয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেকে বাধ্য হয়ে ঢাকা যান। ধনী এবং উচ্চবিত্তরা বিদেশে চিকিৎসা নেন। চিকিৎসা সুবিধা সহজ ও সুলভ এবং বিশ্বমানের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা গেলে এই অঞ্চলের মানুষ উপকৃত হতে পারতো।
গতকাল ছিলো বিশ্ব হার্ট দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘হৃদয় দিয়ে হৃদরোগ প্রতিরোধ’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের ৩১ শতাংশ মানুষ মারা যায় হৃদরোগের কারণে। চিকিৎসকরা বলছেন, শরীরচর্চা না করা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ ও জীবনযাপনে অনিয়মের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে আমাদের দেশে। আমাদের দেশে ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সেই উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস দেখা দিচ্ছে যা হৃদরোগের সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।
হৃদরোগের চিকিৎসা সুবিধা রাজধানীতে বেশি। জেলা এবং উপজেলায় এই রোগ প্রতিরোধে বিশেষ কার্যক্রম নেই। চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র হওয়া সত্ত্বেও এখানে হৃদরোগের চিকিৎসা একেবারেই অপ্রতুল। চট্টগ্রামে সরকারি উদ্যোগে হৃদরোগের বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সেই সাথে চমেক হাসপাতালে হৃদরোগ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার দাবিও যুক্তিযুক্ত।
করোনার বর্তমান সময়ে হৃদরোগের ঝুঁকিও বেশি। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিদেরও দায়িত্ব রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চট্টগ্রামে হৃদরোগের বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় অবিলম্বে পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা আশা করি।
মতামত সম্পাদকীয়