নিজস্ব প্রতিবেদক »
অবশেষে মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করবে চট্টগ্রাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মঙ্গলবার একনেক সভায় চট্টগ্রামের জন্য মেট্রোরেল প্রকল্প নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে দুদফায় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের প্রকল্প নেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেই অনুযায়ী ২০১৯ সালে ফিজিবিলিটি স্টাডিও (সম্ভাব্যতা জরিপ) হয়েছিল। এখন আবারও প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। একইসাথে সম্ভাব্য কম সময়ের মধ্যে প্রকল্প তৈরি করে জমা দেওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছেন।
এদিকে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীতে দিন দিন যানজট বাড়ছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। বিষয়টি বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী নিজেই চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্প গ্রহণ ও দ্রুত এর বাস্তবায়নে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে যোগাযোগ সচিবকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দায়িত্ব দেওয়া হয়। একনেক সভায় উপস্থিত থাকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ থেকেই চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য মেট্রোরেলের প্রকল্প নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। একইসাথে তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেটের প্রকল্প (২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা) অনুমোদন দিয়েছেন। এতে সিটি করপোরেশনকে ৫০ কোটি টাকার ম্যাচিং ফান্ড দিতে হবে না। এটা চট্টগ্রামবাসীর জন্য বিশাল প্রাপ্তি।’
সবার আগে প্রয়োজন স্টাডি
চট্টগ্রামের উন্নয়ন ফ্লাইওভার দিয়ে শুরু না করে মেট্রোরেল দিয়ে শুরু করা প্রয়োজন ছিল বলে মন্তব্য করেন ফ্লাইওভার নির্মাণকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘একটি শহরের জন্য সবার আগে প্রয়োজন ছিল মেট্রোরেল। আর তা বাস্তবায়ন করা গেলে শহরের বিকাশ ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। এখন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা ও ভবনের উপর দিয়ে নিতে হবে। তাই মেট্রোরেল নিয়ে প্রয়োজন একটি গভীর স্টাডি।’
তিনি আরও বলেন, মেট্রোরেলের ল্যান্ডিং স্টেশনের সাথে শহরের বাস সার্ভিসের স্টেশন এবং সংযোগ সড়ক লাগবে। একইসাথে শহরের প্রধান রেলওয়ে স্টেশনের সাথেও কানেকটিভিটি লাগবে। সব মিলিয়ে মেট্রোরেলের রুট কি হবে তা নিয়ে স্টাডির বিকল্প নেই।
একই মন্তব্য করেন নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান। তিনি বলেন, ‘একটি শহরের জনসংখ্যা যখন ২০ লাখ অতিক্রম করে তখনই গণপরিবহনের জন্য মেট্রোরেল বা মনোরেলের প্রয়োজন হয়। এখন এই শহরের জন্য বর্তমানে মেট্রোরেলের রুট কি হবে, ল্যান্ডিং স্টেশন কোথায় হবে? এ ধরনের অনেক কিছু নির্ধারণ করতে সবার আগে স্টাডি দরকার। স্টাডি ছাড়া কিছুই বলা সম্ভব হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম একটি প্রধান সড়ক (সিডিএ এভিনিউ) ছাড়া বাকি সব রোডের চওড়া কম। অপরদিকে মেট্রোরেলের জন্য প্রশস্ত রোড প্রয়োজন। এছাড়া ল্যান্ডিং স্টেশনের জন্যও অনেক জায়গা প্রয়োজন। নগরীতে এতো জায়গা রয়েছে কিনা সেটাও ভাবার বিষয়।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্টাডিতে ৩টি রুট ছিল
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ২০১৯ সালে বাসস্থান ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালটেন্টস লিমিটেড নামের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য দায়িত্ব দিয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটি তিনটি রুটের প্রস্তাবনা দেয়। এতে ৫৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রুটে ৪৭টি স্টেশনের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছিল। এরমধ্যে ২৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রুট-১ ছিল কালুরঘাট-বহদ্দারহাট-চকবাজার-লালখানবাজার-দেওয়ানহাট-পতেঙ্গা-বিমানবন্দর পর্যন্ত। ১৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রুট-২ ছিল সিটি গেট-একে খান বাসস্টপ-নিমতলী বাসস্টপ-সদরঘাট-ফিরিঙ্গীবাজার-শহীদ বশিরউজ্জামান স্কয়ার) এবং ১৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রুট-৩ ছিল অক্সিজেন-মুরাদপুর-পাঁচলাইশ-আন্দরকিল্লাহ-কোতোয়ালী-ফিরিঙ্গীবাজার এবং পাঁচলাইশ-একে খান বাসস্টপ লিঙ্ক। এরমধ্যে রুট-১ ছিল ২০টি স্টেশন, রুট-২ তে ছিল ১২টি এবং রুট-৩ তে ছিল ১৫টি স্টেশন।
সমীক্ষায় প্রতি কিলোমিটারে প্রায় ১ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রস্তাবে। ফলে ৫৪ দশমিক ৫ কিলোমিটারে তিনটি মেট্রোরেল লাইনে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮৪ হাজার ২০২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সমীক্ষায় বলা হয়, প্রতিটি মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার এবং গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের প্রধান সড়ক বহদ্দারহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ফ্লাইওভার হচ্ছে। আর এই ফ্লাইওভারের কারণে মেট্রোরেল প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এখন ফ্লাইওভার রেখে সড়ক পরিবহনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মেট্রোরেলের ডিজাইন করতে হবে। গণপরিবহনে মেট্রোরেলের বিকল্প নেই।
চট্টগ্রামে হবে মেট্রোরেল
কম সময়ে প্রকল্প তৈরির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর