চট্টগ্রামের মানুষের মনে কিছুটা হলেও স্বস্তিভাব এসেছে টিকা প্রাপ্তির খবরে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেছেন, প্রথম পর্যায়ে ১ লাখ টিকা পাবে চট্টগ্রাম। এই টিকা নগর ও জেলার মধ্যে বণ্টন করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। আর নগরবাসীকে টিকা দেওয়ার কাজটি করবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সরকারি হাসপাতাল এবং সিটি কর্পোরেশনের হাসপাতালে টিকাদান কেন্দ্র থাকবে। সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা, গণমাধ্যমকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সামরিক বাহিনীর সদস্যরা অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছেন।
উল্লেখ্য, আগামী ২৫ জানুয়ারির মধ্যে দেশে ৫০ লাখ টিকার প্রথম চালান আসবে। অগ্রাধিকারপ্রাপ্তদের তালিকা ঢাকায় পাঠানো হবে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে টিকাদান কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার লোকসংখ্যা অনুপাতে প্রথম চালান থেকে প্রাপ্ত অংশ খুবই অপ্রতুল। টিকা যারা দেবেন তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি, এ ক্ষেত্রে দক্ষ লোকের প্রয়োজন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো টিকা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা, প্রয়োজনে দ্রুত ফ্রিজ সরবরাহ পেতে পদক্ষেপ নিতে হবে। উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালগুলিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত কিনা তা আগেই যাচাই করতে হবে।
বেসরকারিভাবে টিকা প্রদান করা হবে মর্মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে। এ ক্ষেত্রে মূল্য কত হবে, প্রদানের নীতিমালা কি হবে তা সরকারের ঠিক করে দেওয়া উচিত। সরকার বিনামূল্যে টিকা দেয়ার কথা আগে বলেছে, বেসরকারিভাবে এর মূল্য যাতে সহনীয় থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। আবার সরকারিভাবে প্রাপ্ত টিকা অপর্যাপ্ত হলে মানুষ বেসরকারি প্রক্রিয়ায় ঝুঁকে পড়তে পারে। বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান একচেটিয়াভাবে যেন বাড়তি মূল্যের সুযোগ নিতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি থাকলে মানুষ হতাশ হবে। অক্সফোর্ডের টিকা ছাড়াও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত অন্যান্য সংস্থার টিকার জন্য চেষ্টা করা বাঞ্ছনীয়। কোভ্যাক্স থেকেও খুব বেশি টিকা পাওয়া যাবে না। সকলকে যদি অল্পসময়ে টিকার আওতায় আনা না যায় তাহলে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিনই হবে।
এ ক্ষেত্রে জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, সচেতন করতে হবে। মাস্ক পরার ব্যাপারে পরিস্থিতির মোটেও উন্নতি হয়নি। এ ব্যাপারে সরকারের উদ্বুদ্ধকরণ ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা এখন কিছুটা কম হলেও যতক্ষণ পর্যন্ত এ মহামারি নির্মূল করা না যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত ঝুঁকি থেকেই যাবে। সুতরাং ঢিলেমি দেয়া আত্মঘাতি হবে। করোনার নতুন ধরণ শঙ্কাও তৈরি করেছে।
আমরা মনে করি, করোনায় টিকা প্রাপ্তি সহজতর ও চাহিদা অনুযায়ী পেতে টিকা আবিষ্কারক সংস্থাগুলির সাথে দ্রুত যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নিতে হবে। কেননা সকল মানুষ টিকার আওতায় না এলে ‘নিরাপদ আছি’ এ কথা বলা যাবে না।
মতামত সম্পাদকীয়