বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে সারাদেশে বিএনপির প্রায় ছয়শতের অধিক মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন। দুঃশাসন থেকে সৃষ্ট হয়েছে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার মত মানবতাবিরোধী হি¯্রতা। স্বৈরাচারী সরকারের গড়ে তোলা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে বিরোধী দলের প্রতিবাদী নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে গুম করে রাখা হয়। গুম হচ্ছে একদলীয় দুঃশাসনের নমুনা।
তিনি গতকাল বুধবার বিকেলে নগরীর কাজির দেউড়ি নুর আহম্মেদ সড়কে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে মহানগর বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে গুমকে তাদের প্রধান রাজনৈতিক কর্মসূচি করেছে। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে গুমকে পথের কাঁটা দূর করার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ নৃশংস গুমের শিকার হয়েছেন সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, চৌধুরী আলম, বোয়ালখালীর নজরুল ইসলাম বাচা চেয়ারম্যানসহ অসংখ্য মানুষ। আরেকটি অভিনব গুমের শিকার হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য কক্সবাজারের সালাহউদ্দিন আহমেদ। তাকে দুই মাস গুম করে রাখার পর পাচার করা হয়েছে অন্য দেশে। গুম একটি ভয়ঙ্কর মানবতাবিরোধী অপরাধ। প্রতিটি গুমের তদন্ত ও বিচার একদিন হবেই।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াছিন চৌধুরী লিটনের পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম।
নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, জনসমর্থনহীন সরকারের টিকে থাকার অবলম্বনই হচ্ছে গুম। এই ধারা বয়ে চলতে চলতে দেশ অরাজকতার ঘন অন্ধকারে ডুবে গেছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। কেবল একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সরকার গঠন হলেই গুম, অপহরণ, খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ দূর হবে, জন জীবনে স্বস্তি ফিরবে।
সভায় প্রধান বক্তা মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, বাংলাদেশে ইতোমধ্যে জনপ্রতিনিধি, তরুণ, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন। তিনি গুমের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের অবিলম্বে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বাংলাদেশে গুমের ইতিহাস সৃষ্টি করেছে আওয়ামী সরকার। রাষ্ট্রীয় মদদ ছাড়া কাউকে গুম করা অসম্ভব। গুম ও ক্রসফায়ারের মতো গুরুতর অপরাধের ঘটনাগুলো সংবাদমাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও তাতে সরকারের টনক নড়ে না। এতেই বোঝা যায় এসব গুমের হোতা কারা। বাংলাদেশে গুমের ধারাবাহিকতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গণতন্ত্রের কবর রচনার জন্যই গুমের মতো অমানবিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার।
মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বহুদিন পর অনেককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এখনো অসংখ্য গুম হওয়া ব্যক্তির সন্ধান মেলেনি। এক্ষেত্রে প্রায় সবাই দাবি করেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়েই তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
এতে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ আজিজ, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দীন, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি