গুড়- ভেজালের ভিড়ে আসল পাওয়া কঠিন

শীত আসলেই পিঠেপুলি খাওয়ার ধুম পড়ে যায় দেশে। গ্রাম থেকে শহর সবখানেই চলে পিঠে খাওয়ার উৎসব। গ্রামে শত শত বছর ধরে এ রেওয়াজ চলে এলেও গত কয়েক দশক থেকে নগরেও ধুমসে পিঠে খাওয়ার চল শুরু হয়েছে। সে চাহিদা পূরণে এখন নগরের অভিজাত হোটেল থেকে শুরু করে ফুটপাতে পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে নানা ধরনের পিঠে। তাছাড়া এখন আলাদা করে পিঠে উৎসবের আয়োজনও হয়। সামাজিক অনুষ্ঠান, যেমন গায়ে হলুদ, জন্মদিন ইত্যাদিতেও পিঠে খাওয়ার চল শুরু হয়েছে।
এইসব পিঠেপুলিতে সবচেয়ে বড় উপকরণ হচ্ছে খেজুর ও আখের গুড়ের। খেজুর রস ও রস থেকে তৈরি নানা ধরনের গুড়ের চাহিদা বেড়ে যায় এখন। আর বাংলাদেশ বলে কথা। চাহিদা বাড়লে দাম তো বাড়বেই সে সঙ্গে বাড়ে ভেজাল গুড়ের কারবারও। সুপ্রভাতে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাজারে বিক্রি হওয়া খেজুরের গুড় তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে না প্রকৃত খেজুরের রস। আর আখের গুড় তৈরিতেও নেই আখের রস। তার বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে ঝোলা গুড়, দূষিত চিনির শিরা, হাইড্রোজ, নিষিদ্ধ খাবারের রং, স্যাকারিন, ফিটকিরি ও চুনসহ ক্ষতিকর নানা রাসায়নিক উপাদান। ইতিপূর্বে প্রশাসনের একাধিক অভিযানে ভেজাল গুড় তৈরির বিষয়টি ধরা পড়ে।

বাজারে নানা ধরনের গুড় বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে। তবে তা মানভেদে। অনেক জায়গায় গুড়ের দাম নিয়ে সংশয়ে পড়েন ক্রেতারা। তেমনই এক ক্রেতা সুপ্রভাতকে বলেন, ‘সীতাকুণ্ডের বাজারে এক লিটার খেজুরের রস বিক্রি করছে ১২০ টাকা। এক লিটার রাব (তরল খেজুরের গুড়) বানাতে হলে দরকার হবে ৭ থেকে ৮ লিটার রস। তাহলে সেই হিসেবে এক কেজি রাবের দাম হওয়ার কথা অন্তত এক হাজার টাকা। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। গুড় ব্যবসায়ীরা আসলেই খেজুরের গুড়ের নামে আমাদের কি খাওয়াচ্ছে?। প্রশাসনের বিষয়টি তদারক করা প্রয়োজন।’
বাজারে এসব গুড় আনা হয় রাজশাহী, নাটোর, বাগেরহাট, নওগাঁ, পার্বত্য এলাকা রাঙামাটি, বান্দরবান থেকে। তবে এসব গুড়ের প্রকৃত মান নিয়ে সংশয়ে আছেন খোদ ব্যবসায়ীরাও। তারাও কোনোভাবে নিশ্চিত করতে পারছে না, এসব গুড় আসলেই খেজুর কিংবা আখের রসের তৈরি নাকি অন্য ক্ষতিকর উপাদান মেশানো। রেয়াজউদ্দিন বাজারের গুড় ব্যবসায়ী মো. ফারুক বলেন, ‘আমরা যেসব গুড় বিক্রি করছি তা কুষ্টিয়া ও যশোরের বিভিন্নস্থান থেকে কেনা। তবে এসব গুড় প্রকৃত খেজুরের রস দিয়ে বানানো কিনা আমরা জানি না।’
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পুষ্টি গবেষকরা বলছেন, বাজারে বিক্রি হওয়া ভেজাল গুড় খাওয়ার ফলে মারাত্বক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বী বলেন, ‘আসল খেজুর গুড় স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু বাজারে এখন ভেজালের ছড়াছড়ি। অনেকসময় দেখি ভেজাল গুড় বিভিন্ন রঙ ও কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি করা হয়। এগুলো খেলে কিডনি ড্যামেজ, খাদ্যনালিতে ক্যান্সার, আমাশয় ও লিভার ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই মানুষকে এসব খাবার এড়িয়ে যেতে হবে।’

শুধু গুড় বলে কথা নয়, বাংলাদেশের খাদ্যমান নিয়ে গভীর উৎকণ্ঠা আছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। কারণ ভেজাল, নকলের ভিড়ে আসল পণ্য খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তাই নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাব জাতির ভবিষ্যতের কথা ভেবে তারা যেন অন্তত খাদ্যের মান নিয়ে আপোষ না করেন।