পরিবেশবান্ধব, সাশ্রয়ী, আরামদায়ক ও তুলনামূলক নিরাপদ পরিবহন হিসেবে সারা বিশ্বেই ট্রেনে ভ্রমণ জনপ্রিয়। এটা মাথায় রেখেই রেলকে আধুনিকতায়নের সকল ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রাখে দেশগুলো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের বাস্তবতা সন্তোষজনক নয়। স্বাধীনতার অর্ধ শতক পার হয়ে গেলেও কয়েকটি আন্তনগর ট্রেন সার্ভিস চালু করা ছাড়া রেলের উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি।
১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি সরকার বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে রেলে সংকোচন নীতি গ্রহণ করে এবং গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অবসরে পাঠায়। সেই সিদ্ধান্তের কারণে রেলের অগ্রযাত্রা অনেক ব্যাহত হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলের উন্নয়নে জোরালো ভূমিকা নিতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, রেলের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করে একজন পূর্ণ মন্ত্রীও নিয়োগ দেওয়া হয়। অনেক রেলপথ মেরামত করার পাশাপাশি নতুন রেলপথও নির্মাণ করা হয়। এরমধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পর্যটননগর কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন।
সে সঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলো ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে কর্ডলাইন বসানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ। তবে পরিকল্পনাটি নেওয়া হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। এ পরিকল্পনায় নারায়ণগঞ্জ থেকে লাকসামে একটি কর্ডলাইন বসানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসতে টঙ্গী, নরসিংদী, ভৈরববাজার, আখাউড়া, কুমিল্লা স্টেশন আর ঘুরতে হবে না। ফলে দূরত্ব কমবে প্রায় ৯১ কিলোমিটার। ১৯৬৯ সালের এ পরিকল্পনাটির পুনরায় সাম্ভাব্যতা যাচাই করা হলেও পুরানো লাইনটি মিটার গেজের পাশাপাশি ব্রডগেজ করতে সময় নিচ্ছে সংস্থাটি। এ কর্ডলাইন নির্মাণে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে জানা যায়।
কর্ডলাইন প্রসঙ্গে রেলের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের কর্ডলাইনটি স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ প্রায় শেষ। ইতোমধ্যে আখউড়া থেকে লাকসামের রেললাইন ব্রডগেজের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে ডুয়েলগেজ (মিটারগেজ ও ব্রডগেজ) লাইনে রেল চলছে। পুরো রুটের কাজ কখন শেষ হতে পারে- এ তথ্য মেলেনি।
পাশাপাশি ঢাকা থেকে কক্সবাজার চলাচলে শহরের অভ্যন্তরে চট্টগ্রাম স্টেশনে ট্রেন না এনে কর্ডলাইনের মাধ্যমে পাহাড়তলী থেকে ট্রেন সরাসরি কক্সবাজার নেওয়ার জন্যও কাজ শুরু করছে রেলওয়ে। এরমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ভোগান্তি ও সময় কমাতে লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ডাবল লাইন চালু করা হয়েছে। এতে রেলপথে সময় সাশ্রয় হওয়ার কথা থাকলেও যাত্রীরা এর সুফল পাচ্ছে না। রুটটির প্রায় ২২৬ কিলোমিটার পথ এখনো মিটারগেজ থাকায় এবং ঢাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত অংশে কয়েকটি অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের কারণে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না।
বাংলাদেশে সুশৃঙ্খল গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি এখনো। ফলে রেলকে আরও গতিশীল ও আধুনিকায়ন করা ছাড়া আমাদের উপায়ও নেই। সরকার যত তাড়াতাড়ি এদিকে নজর দেবে তত তাড়াতাড়ি ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবে জনগণ।
এ মুহূর্তের সংবাদ