শফিউল আলম, রাউজান
রাউজান পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শরীফ পাড়া, হাজি পাড়া ও পালিত পাড়ার ১২০ জন কৃষক খাসখালী খালের দইু তীরে ৫০ একর জমিতে বিভিন্ন সবজির চাষাবাদ করে। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ উৎপাদিত সবজি কৃষকেরা বাজারে বিক্রি করে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করে আসছে। এখানের ফসলি জমি থেকে প্রতি বৎসর কোটি টাকার বেশি সবজি উৎপাদন করেন কৃষকেরা। শীতকালীন সবজি ফুল কপি, বাধাকপি, আলু, শালগম, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, শশা, খিরা, লাল শাক, টমোটো, পুইশাক, মুলা, পেপে, কলা ক্ষেতের চাষাবাদ করেন কৃষকেরা। শরৎকালীন সবজির মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির কচু, বরবটি, ঢেঁড়শ ইত্যাদি ক্ষেতের চাষাবাদ করেন কৃষকেরা। বর্তমানে খাসখালী খালের পাড়ের ফসলি জমিতে মধ্যম কচু, পাইন্যা কচু, গুড়া কচু ও বরবটি ক্ষেত রয়েছে। ১০ একর সমপরিমাণ ফসলি জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির কচু, বরবটি ক্ষেত থেকে প্রতিদিন সবজি ব্যবসায়ীরা কচু ও বরবটি কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করে নিয়ে রাউজানের হাট বাজারে বিক্রয় করছে। শুষ্ক মৌসুমে সেচের সুবিধার জন্য রাউজানের এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি খাল খনন করে দিয়েছে। খাসখালী খাল খনন করায় কৃষকেরা তাদের ক্ষেতে সেচ সুবিধা পাচ্ছে। অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে ঢলের পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার ফলে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে কৃষকেরা মুক্তি পেয়েছে। ফসলি জমিতে সবজি ক্ষেতের চাষাবাদের জন্য উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর থেকে কৃষকদের দেওয়া হয়েছে সেচ পাম্প, বসানো হয়েছে গভীর নলকুপ। রাউজান পৌরসভার মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ কৃষকদের আইপি এম ক্লাবের কার্যালয় নির্মাণ ও ক্ষেত থেকে তুলে সবজি ধোয়ার জন্য খাসখালী খালের মধ্যে পাকাঘাট নির্মাণ করে দেয়।
কৃষক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, ভারী বর্ষণে ঢেঁড়শ, পরুল, ঝিঙ্গা ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মর্দম কচু, পাইন্যা কচু, বরবটি ক্ষেত রয়েছে এখানে। প্রতিটি মর্দম কচু ৫০ থেকে ৭০ টাকা, প্রতিটি পাইন্যা কচু ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা, প্রতি কেজি গুড়া কচু ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা, প্রতি কেজি বরবটি ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা করে বিক্রয় করছি আমরা।
সবজি ব্যবসায়ী শিমুল দাশ বলেন, ঢেউয়া পাড়া এলাকার ফসলি জমিতে কৃষকের কচু ক্ষেত থেকে কচু ক্রয় করে নিয়ে হাট বাজারে বিক্রয় করে যে টাকা লাভ করি ঐ টাকা দিয়ে আমার পরিবার পরিজন নিয়ে স্বাছন্দে জীবন যাপন করছি। ক্ষেতে কাজ করা রাউজান সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী বেলাল বলেন, তার পিতা ্এয়াকুব বিভিন্ন জাতের সবজি চাষাবাদ করেছেন।
চাষাবাদে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত ১ লাখ টাকার সবজি বিক্রি করেছেন। আরো ৫০ হাজার টাকার কচু বিক্রি করতে পারবেন। লেখাপড়ার পাশাপশি কলেজ শিক্ষার্থী তার পিতাকে ক্ষেতের কাজে সহায়তা করতে পেরে খুশি বলে জানান। এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর আলম ও জহুর মিয়া বলেন, খাসখালী খালের দুই তীরের ফসলি জমিতে সব্জি ক্ষেতের চাষাবাদ করে এলাকার শতাধিক কৃষক। এলাকার শতাধিক কৃষক ক্ষেতের চাষাবাদ থেকে উৎপাদিত সবজি বাজারে বিক্রি করে পরিবার পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপন করে আসনে। সরজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, খাসখালী খালের দুই পাড়ে ফসলি জমিতে শীতকালীন সবজির ক্ষেত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে কৃষকেরা। আমন ধান কাটা শেষ হলে পুরোদমে শীতকালীন সব্জি ক্ষেতের চাষাবাদ করবে এলাকার কৃষকেরা। রাউজান উপজেলা কৃষি অফিসার মাসুম কবির বলেন, রাউজানের খাসখালী খালের পাড়ের ঢেউয়া পাড়া, শরীফ পাড়া ও হাজী পাড়া এলাকায় ফসলি জমি সবজি উৎপাদন করে প্রতি বৎসর কৃষকরা কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করেন। তিনি বলেন, এলাকার কৃষকদের সবজি ক্ষেতের চাষাবাদে বীজ, সারসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা করে আসছেন রাউজান উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।